মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আকস্মিক ঘোষণায় বিশ্বজুড়ে আর্থিক কাঠামোতে বড় ধরনের আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। তিনি চীনের সমস্ত আমদানির উপর অতিরিক্ত ১০০ শতাংশ শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত নেন, যা ২০২৫ সালের ১লা নভেম্বর থেকে কার্যকর হওয়ার কথা। এই কঠোর পদক্ষেপের মূল কারণ হিসেবে চীন কর্তৃক বিরল মৃত্তিকা (rare-earth) খনিজ রপ্তানির উপর আরোপিত নতুন নিয়ন্ত্রণকে দায়ী করা হয়েছে। এই ভূ-রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বিশ্বব্যাপী ক্রিপ্টোকারেন্সি বাজার এক অভূতপূর্ব পতনের সম্মুখীন হয়, যা ডিজিটাল সম্পদের ইতিহাসে অন্যতম বৃহৎ তারল্য সংকটের জন্ম দেয়।
এই ধাক্কার ফলে মাত্র ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ক্রিপ্টো বাজারে ১৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি লিভারেজড পজিশন বাতিল বা লিকুইডেট হয়ে যায়। এই বিশাল বিক্রয় চাপের কারণে প্রায় ১৬ লক্ষ ট্রেডার প্রভাবিত হন। বাজারের নেতৃত্বস্থানীয় সম্পদ বিটকয়েন (BTC)-এর মূল্যমান প্রায় ১২২,০০০ ডলার থেকে নেমে ১১০,০০০ ডলারের নিচে চলে আসে। ইথেরিয়াম (ETH) এবং সোলানা (SOL)-এর মতো অন্যান্য প্রধান ক্রিপ্টোকারেন্সিও উল্লেখযোগ্যভাবে মূল্য হারায়। অক্টোবর ১২, ২০২৫-এর বাজার তথ্য অনুযায়ী, বিটকয়েন ১১১,৯১১ ডলারে লেনদেন হচ্ছিল, যেখানে ইথেরিয়াম ছিল ৩,৮৩২.৫৭ ডলার এবং সোলানা ১৮১.৯৫ ডলারে স্থিতিশীল হওয়ার চেষ্টা করছিল।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের এই পদক্ষেপটি ছিল চীনের বিরল মৃত্তিকা রপ্তানি নিয়ন্ত্রণের সরাসরি জবাব। এই খনিজগুলি আধুনিক প্রযুক্তির জন্য অপরিহার্য, যেমন ইলেকট্রিক গাড়ি এবং প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা। চীন বিশ্বব্যাপী বিরল মৃত্তিকা প্রক্রিয়াকরণের ৯০ শতাংশেরও বেশি নিয়ন্ত্রণ করে, যা আন্তর্জাতিক আলোচনায় তাদের কৌশলগত সুবিধা প্রদান করে। এই পরিস্থিতিতে, সেমিকন্ডাক্টর সরবরাহ শৃঙ্খলে যুক্ত শিল্প সংস্থাগুলি চীনা কাঁচামালের উপর নির্ভরতা কমাতে দ্রুত বিকল্প সরবরাহকারী খুঁজতে শুরু করেছে।
স্প্লিট ক্যাপিটালের প্রতিষ্ঠাতা জাহির এবতিকার এই পরিস্থিতিকে 'অল্টকয়েন কমপ্লেক্সের সম্পূর্ণ লিভারেজ রিসেট এবং বাজারের স্থানচ্যুতি' হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তবে, এই অস্থিরতার মধ্যেও কিছু বিশ্লেষক এটিকে দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি সুযোগ হিসেবে দেখছেন, যদিও ভূ-রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা বিদ্যমান। এই ঘটনাটি স্পষ্ট করে যে, বর্তমান বিশ্বে সরবরাহ শৃঙ্খলগুলি কেবল অর্থনৈতিক পথ নয়, বরং আন্তর্জাতিক ক্ষমতার ভারসাম্যের এক গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র। বাজারের গতিপথ এখন কেবল প্রযুক্তিগত বিশ্লেষণের উপর নির্ভরশীল নয়, বরং বৃহত্তর আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ওপরও গভীরভাবে নির্ভরশীল।