আন্তর্জাতিক আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলি "অপারেশন চেকম্যাট" নামে একটি সমন্বিত প্রচেষ্টায় ব্ল্যাকস্যুট র্যানসমওয়্যার গ্রুপকে সফলভাবে ভেঙে দিয়েছে। এই অভিযানে প্রায় ১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার সমমূল্যের ক্রিপ্টোকারেন্সি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। ২০১৩ সাল থেকে সক্রিয় ব্ল্যাকস্যুট, যা রয়্যাল নামেও পরিচিত, ৪৫০ টিরও বেশি সংস্থাকে লক্ষ্যবস্তু করেছিল, যার মধ্যে স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা, সরকারি সংস্থা, উৎপাদন এবং বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান অন্তর্ভুক্ত ছিল। এই গোষ্ঠীটি ২০২২ সাল থেকে মোট ৩৭০০ মিলিয়ন ডলারেরও বেশি মুক্তিপণ আদায় করেছে।
এই আন্তর্জাতিক অভিযানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জার্মানি, আয়ারল্যান্ড, ফ্রান্স, কানাডা, ইউক্রেন এবং লিথুয়ানিয়ার আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলি অংশ নিয়েছিল। তারা ব্ল্যাকস্যুটের সার্ভার, ডোমেইন নাম এবং ডিজিটাল সম্পদ বাজেয়াপ্ত করেছে, যা এই গোষ্ঠীটি র্যানসমওয়্যার স্থাপন, ক্ষতিগ্রস্তদের কাছ থেকে অর্থ আদায় এবং অবৈধ অর্থ পাচারের জন্য ব্যবহার করত। ২০২৪ সালের প্রথম দিকে একটি ক্রিপ্টো এক্সচেঞ্জ অ্যাকাউন্ট থেকে লেনদেন করা প্রায় ১,০৯১,৪৫৩ মার্কিন ডলার মূল্যের ভার্চুয়াল মুদ্রা বাজেয়াপ্ত করা হয়েছিল। ব্ল্যাকস্যুটের কার্যকলাপের ফলে সাইবার নিরাপত্তা জগতে একটি নতুন গোষ্ঠীর উদ্ভব হয়েছে, যার নাম "কেওস"। ধারণা করা হচ্ছে, এই নতুন গোষ্ঠীটি ব্ল্যাকস্যুটের প্রাক্তন সদস্যদের দ্বারা গঠিত। কেওস গোষ্ঠীটি তাদের মুক্তিপণের দাবিতে ৩০০,০০০ ডলার পর্যন্ত চাইছে এবং তারা ডাবল-এক্সটর্শন কৌশল ব্যবহার করছে, যেখানে ডেটা ফাঁস করার হুমকিও অন্তর্ভুক্ত। সাইবার নিরাপত্তা সংস্থা সিসকো ট্যালস-এর গবেষণা অনুসারে, কেওস গোষ্ঠীটি ব্ল্যাকস্যুটের প্রাক্তন সদস্যদের দ্বারা গঠিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, কারণ তাদের এনক্রিপশন পদ্ধতি, মুক্তিপণের নোটের গঠন এবং ব্যবহৃত সরঞ্জামগুলিতে মিল পাওয়া গেছে। এই অভিযানটি সাইবার অপরাধের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক লড়াইয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। তবে, কেওস-এর মতো নতুন গোষ্ঠীর উত্থান সাইবার অপরাধীদের অভিযোজন ক্ষমতা এবং এই ধরনের হুমকি মোকাবেলার চলমান চ্যালেঞ্জগুলি তুলে ধরে। সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন যে, র্যানসমওয়্যার গোষ্ঠীগুলি প্রায়শই নতুন নামে পুনরায় আবির্ভূত হয়, যা এই লড়াইকে আরও জটিল করে তোলে। এই ধরনের আক্রমণগুলি কেবল প্রযুক্তিগত সমস্যা নয়, বরং জাতীয় নিরাপত্তা এবং জননিরাপত্তার জন্যও একটি গুরুতর হুমকি। ২০২৪ সালে সাইবার হুমকি আরও বৈচিত্র্যময় হয়েছে, যেখানে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার আক্রমণকারীদের আরও শক্তিশালী করে তুলেছে। ব্ল্যাকস্যুটের মতো গোষ্ঠীগুলির বিরুদ্ধে এই ধরনের অভিযানগুলি সাইবার অপরাধের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক, তবে এই যুদ্ধ এখনও শেষ হয়নি।