কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তি খাত অভূতপূর্ব প্রবৃদ্ধি অর্জন করছে, যেখানে এআই স্টার্টআপগুলো বিলিয়ন ডলারের মূল্যায়ন লাভ করছে এবং রেকর্ড পরিমাণ বিনিয়োগ আকর্ষণ করছে। ২০২৫ সাল নাগাদ, বিশ্বজুড়ে ৪৯৮টি এআই ইউনিকর্ন (এক বিলিয়ন ডলার বা তার বেশি মূল্যায়নের বেসরকারি কোম্পানি) রয়েছে, যাদের সম্মিলিত মূল্য প্রায় ২.৭ ট্রিলিয়ন ডলার। এই পরিসংখ্যান প্রযুক্তিগত সম্পদ সৃষ্টির ক্ষেত্রে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে।
গত দুই বছরে, অর্থাৎ ২০২৩ সালের পর থেকে শতাধিক নতুন এআই ইউনিকর্ন প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এছাড়াও, ১৩০০-এর বেশি এআই স্টার্টআপ ইতিমধ্যেই ১০০ মিলিয়ন ডলারের বেশি মূল্যায়ন অর্জন করেছে, যা এই খাতের দ্রুত সম্প্রসারণ এবং সম্পদ তৈরির বিপুল সম্ভাবনাকে নির্দেশ করে। এই দ্রুত বৃদ্ধি ডট-কম যুগের প্রবৃদ্ধির হারকেও ছাড়িয়ে গেছে, যা প্রযুক্তির ইতিহাসে এক নতুন মাইলফলক স্থাপন করেছে। অ্যানিস্ফিয়ার (Anysphere), ওপেনএআই (OpenAI) এবং সেফ সুপারইন্টেলিজেন্স (Safe Superintelligence)-এর মতো কোম্পানিগুলো উল্লেখযোগ্য পরিমাণ তহবিল সংগ্রহ করেছে, যা তাদের প্রতিষ্ঠাতা এবং প্রাথমিক বিনিয়োগকারীদের জন্য বিশাল অঙ্কের কাগজী সম্পদ তৈরি করেছে। অনেক স্টার্টআপ পাবলিক মার্কেটের চাপ এড়াতে এবং ব্যক্তিগত বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে মূলধন সংগ্রহ করতে বেসরকারি থাকাই পছন্দ করছে। এর মধ্যে রয়েছে সার্বভৌম তহবিল, ভেঞ্চার ক্যাপিটাল এবং অন্যান্য বেসরকারি বিনিয়োগকারী।
সান ফ্রান্সিসকো বে এরিয়া বিশ্বব্যাপী এআই ইকোসিস্টেমের একটি প্রধান কেন্দ্র হিসেবে নিজেদের অবস্থান ধরে রেখেছে। এখানে অনেক মূল্যবান স্টার্টআপ, বিনিয়োগ তহবিল এবং গবেষণা ল্যাব অবস্থিত। এই অঞ্চলের শক্তিশালী প্রযুক্তিগত পরিকাঠামো, শীর্ষস্থানীয় গবেষণা প্রতিষ্ঠান এবং বিপুল পরিমাণ বিনিয়োগের সুযোগ এআই উদ্ভাবনের একটি উর্বর ক্ষেত্র তৈরি করেছে।
তবে, এই দ্রুত মূল্যায়ন বৃদ্ধির পাশাপাশি কিছু বিশেষজ্ঞ সম্ভাব্য অতিরিক্ত মূল্যায়ন (overvaluation) নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। ওপেনএআই-এর সিইও স্যাম অল্টম্যান এবং মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এরিক গর্ডনের মতো ব্যক্তিত্বরা এই বাজারকে ডট-কম বুদ্বুদের সাথে তুলনা করেছেন। তারা সতর্ক করেছেন যে অতিরিক্ত উত্তেজনা এবং দ্রুত মূল্যায়ন বৃদ্ধির ফলে বাজারে একটি সংশোধন (correction) আসার ঝুঁকি রয়েছে। অল্টম্যান উল্লেখ করেছেন যে "বিনিয়োগকারীরা এআই নিয়ে অতিরিক্ত উত্তেজিত" এবং এই পরিস্থিতি ১৯৯০-এর দশকের শেষের দিকের প্রযুক্তি বুদ্বুদের কথা মনে করিয়ে দেয়। গর্ডন আরও বলেছেন যে এআই খাতের সম্ভাব্য ক্ষতি ডট-কম যুগের চেয়েও বেশি গুরুতর হতে পারে।
এই উদ্বেগ সত্ত্বেও, এআই এই দশকে প্রযুক্তিগত সম্পদ সৃষ্টির প্রধান চালিকাশক্তি হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। এর কারণ হলো, এআই কেবল নতুন প্রযুক্তিগত উদ্ভাবনই আনছে না, বরং বিভিন্ন শিল্পে উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি, নতুন ব্যবসার সুযোগ তৈরি এবং সামগ্রিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। স্বাস্থ্যসেবা, অর্থ, পরিবহন এবং বিনোদন সহ বিভিন্ন খাতে এআই-এর প্রয়োগ এই বিপ্লবকে আরও ত্বরান্বিত করছে। এই প্রযুক্তিগত অগ্রগতি এবং বিপুল বিনিয়োগের সমন্বয় বিশ্বব্যাপী সম্পদ সৃষ্টির ধারাকে নতুনভাবে সংজ্ঞায়িত করছে।