থাইল্যান্ড তার পর্যটন শিল্পকে শক্তিশালী করার লক্ষ্যে একটি যুগান্তকারী ডিজিটাল উদ্যোগ 'ট্যুরিস্টডিজিপে' (TouristDigiPay) চালু করেছে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে বিদেশি পর্যটকরা তাদের ক্রিপ্টোকারেন্সি, যেমন বিটকয়েন এবং ইথেরিয়াম, থাই বাতে রূপান্তর করে স্থানীয়ভাবে কেনাকাটা করতে পারবেন। প্রকল্পটি ২০২৫ সালের চতুর্থ ত্রৈমাসিক থেকে ১৮ মাসের জন্য একটি নিয়ন্ত্রিত স্যান্ডবক্সের অধীনে পরিচালিত হবে।
এই উদ্যোগের মূল উদ্দেশ্য হলো লেনদেন প্রক্রিয়া সহজ করা, বিশেষ করে সেইসব দেশের পর্যটকদের জন্য যাদের নিজস্ব কিউআর পেমেন্ট সিস্টেম ততটা উন্নত নয় বা যাদের সাথে থাইল্যান্ডের কোনো ক্রস-বর্ডার পেমেন্ট চুক্তি নেই। ট্যুরিস্টডিজিপে-এর মাধ্যমে, পর্যটকদের অবশ্যই থাইল্যান্ডের সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (SEC) এবং ব্যাংক অফ থাইল্যান্ড (BOT) দ্বারা নিয়ন্ত্রিত লাইসেন্সপ্রাপ্ত ডিজিটাল সম্পদ প্রদানকারী এবং ই-মানি প্রদানকারীদের সাথে অ্যাকাউন্ট খুলতে হবে। এই প্রক্রিয়াটি গ্রাহক পরিচিতি (KYC) এবং অ্যান্টি-মানি লন্ডারিং (AML) বিধিমালা মেনে চলবে, যা আর্থিক লেনদেনে স্বচ্ছতা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে।
কোভিড-১৯ মহামারীর পর থাইল্যান্ডের পর্যটন শিল্পে, বিশেষ করে চীন থেকে আসা পর্যটকদের সংখ্যায় একটি উল্লেখযোগ্য হ্রাস দেখা গেছে। এই নতুন ব্যবস্থাটি প্রযুক্তিনির্ভর এবং ডিজিটাল সম্পদ ব্যবহারে অভ্যস্ত পর্যটকদের আকৃষ্ট করার একটি প্রচেষ্টা। এর মাধ্যমে, থাইল্যান্ড নিজেকে একটি আধুনিক এবং ক্রিপ্টো-বান্ধব গন্তব্য হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চাইছে।
ট্যুরিস্টডিজিপে-এর মাধ্যমে পর্যটকরা তাদের ডিজিটাল সম্পদকে থাই বাতে রূপান্তর করে স্থানীয় বাজারে, রেস্তোরাঁয়, কেনাকাটার কেন্দ্রগুলোতে এবং অন্যান্য পরিষেবাগুলিতে সহজে ব্যবহার করতে পারবেন। যদিও সরাসরি ক্রিপ্টোকারেন্সিতে পেমেন্ট করার সুযোগ নেই, তবে বাতে রূপান্তরের এই প্রক্রিয়াটি মুদ্রা বিনিময় এবং ঐতিহ্যবাহী কার্ড পেমেন্টের জটিলতা কমিয়ে দেবে। স্থানীয় ব্যবসায়ীদের জন্য, এই উদ্যোগটি নতুন গ্রাহক শ্রেণীকে আকৃষ্ট করতে এবং লেনদেন প্রক্রিয়া দ্রুত করতে সাহায্য করবে। কিছু বিশ্লেষকের মতে, এই উদ্যোগটি বার্ষিক বিলিয়ন ডলারের লেনদেন তৈরি করতে পারে এবং থাইল্যান্ডকে আঞ্চলিক ডিজিটাল ফাইন্যান্স হাব হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে সহায়ক হবে।
থাইল্যান্ডের উপ-প্রধানমন্ত্রী এবং অর্থমন্ত্রী পিচায় চুনহাভাজিরা (Pichai Chunhavajira) এই উদ্যোগের ব্যাপারে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। তিনি জানিয়েছেন যে এই প্রকল্পটি উদ্ভাবনকে উৎসাহিত করবে এবং একই সাথে আর্থিক নিরাপত্তা বজায় রাখবে। এই পদক্ষেপটি কেবল পর্যটন শিল্পকেই শক্তিশালী করবে না, বরং থাইল্যান্ডের ডিজিটাল অর্থনীতির বিকাশেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।