থাইল্যান্ড সরকার পর্যটন শিল্পকে চাঙ্গা করার লক্ষ্যে একটি যুগান্তকারী ১৮ মাস ব্যাপী পাইলট প্রোগ্রাম চালু করতে চলেছে, যার নাম 'ট্যুরিস্টডিজিপে' (TouristDigiPay)। ২০২৫ সালের শেষ নাগাদ এই উদ্যোগটি চালু হবে এবং এর মাধ্যমে বিদেশী পর্যটকরা তাদের ক্রিপ্টোকারেন্সি থাই বাতে রূপান্তর করে স্থানীয়ভাবে কেনাকাটা করতে পারবেন। এই পদক্ষেপটি দেশটির পর্যটন খাতে নতুন প্রাণ সঞ্চার করবে বলে আশা করা হচ্ছে, বিশেষ করে যখন সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পর্যটকদের সংখ্যা, বিশেষত চীন থেকে আগতদের সংখ্যা কমে এসেছে।
এই গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পটি থাইল্যান্ডের সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (SEC), অর্থ মন্ত্রণালয়, অ্যান্টি-মানি লন্ডারিং অফিস (AMLO), ব্যাংক অফ থাইল্যান্ড এবং পর্যটন ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের মতো একাধিক সরকারী সংস্থার সমন্বয়ে পরিচালিত হবে। পর্যটকদের ক্রিপ্টোকারেন্সি সরাসরি পণ্য বা পরিষেবার জন্য ব্যবহার করার অনুমতি দেওয়া হবে না। পরিবর্তে, তারা লাইসেন্সপ্রাপ্ত ক্রিপ্টো এক্সচেঞ্জের মাধ্যমে তাদের ডিজিটাল সম্পদকে থাই বাতে রূপান্তর করবে। এই রূপান্তরিত অর্থ একটি ডেডিকেটেড ই-ওয়ালেটে জমা হবে, যা থেকে তারা স্থানীয় ব্যবসায়ীদের সাথে লেনদেন করতে পারবেন। এর ফলে ব্যবসায়ীরা সরাসরি বাথ পাবেন, যা স্থানীয় আর্থিক নিয়মকানুন মেনে চলবে এবং লেনদেনের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করবে।
প্রকল্পের নিরাপত্তা ও নিয়ন্ত্রণের উপর বিশেষ জোর দেওয়া হয়েছে। কঠোর Know Your Customer (KYC) এবং Anti-Money Laundering (AML) প্রোটোকল প্রয়োগ করা হবে যাতে অপব্যবহার রোধ করা যায়। এছাড়াও, পর্যটকদের জন্য মাসিক লেনদেনের সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে। সাধারণ কেনাকাটার জন্য এই সীমা প্রতি মাসে ৫,০০,০০০ বাথ (প্রায় ১৫,০০০-১৭,০০০ মার্কিন ডলার) পর্যন্ত হতে পারে, যেখানে ছোট ব্যবসায়ীদের জন্য এই সীমা ৫০,০০০ বাথ নির্দিষ্ট করা হয়েছে। এই সুরক্ষা ব্যবস্থাগুলি নিশ্চিত করবে যে সিস্টেমটি শুধুমাত্র ভ্রমণ-সম্পর্কিত ব্যয়ের জন্য ব্যবহৃত হয় এবং আর্থিক অপরাধ প্রতিরোধে সহায়তা করে।
এই উদ্যোগের মাধ্যমে থাইল্যান্ড সরকার প্রায় ১৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার সমপরিমাণ অর্থনৈতিক কার্যকলাপ তৈরি করার আশা করছে। এটি পর্যটকদের গড় ব্যয় প্রায় ৫,০০০ বাথ (প্রায় ১৫৪ মার্কিন ডলার) বৃদ্ধি করতে পারে এবং সামগ্রিক ব্যয়কে অন্তত ১০% বাড়িয়ে তুলতে পারে, যা প্রায় ১৭৫ বিলিয়ন বাথ (প্রায় ৫.৩৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার) অতিরিক্ত অর্থনৈতিক কার্যকলাপ সৃষ্টি করবে। এই পদক্ষেপটি কেবল পর্যটন শিল্পকে পুনরুজ্জীবিত করতেই সাহায্য করবে না, বরং থাইল্যান্ডকে একটি আধুনিক ও ডিজিটাল-বান্ধব গন্তব্য হিসেবেও প্রতিষ্ঠিত করবে। এই উদ্ভাবনী পদ্ধতি পর্যটকদের জন্য লেনদেনকে আরও সহজ ও সুবিধাজনক করে তুলবে এবং দেশের অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে আশা করা হচ্ছে।