অর্থ এবং দীর্ঘায়ু: নতুন বৈজ্ঞানিক গবেষণা

সম্পাদনা করেছেন: Liliya Shabalina

নর্থওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটি (Northwestern University, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র)-এর বিজ্ঞানীরা সম্প্রতি সম্পদ এবং আয়ুষ্কালের মধ্যেকার সম্পর্ক নিয়ে গত কয়েক বছরের মধ্যে অন্যতম বৃহৎ একটি গবেষণা সম্পন্ন করেছেন। এই গবেষণার ফলাফল অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ: যারা জীবনের মধ্যভাগে এসে বেশি আর্থিক সম্পদ সঞ্চয় করতে পেরেছেন, তারা অন্যদের তুলনায় বেশি দিন বাঁচেন।

JAMA Health Forum-এ প্রকাশিত এই গবেষণায় প্রায় ৪৭ বছর গড় বয়সের ৫৪০০ প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি এবং তাদের প্রায় ২৫০০ ভাইবোনকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। বিজ্ঞানীরা টানা ২৪ বছর ধরে তাদের মৃত্যুর হার, আয়ের স্তর, স্বাস্থ্যের অবস্থা এবং সঞ্চিত মূলধন নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করেছেন।

গবেষকরা যখন একই পরিবেশে বেড়ে ওঠা ভাইবোনদের জোড়া ধরে তুলনা করলেন, তখন দেখা গেল যে, এমনকি একই পরিবারের সদস্যদের মধ্যেও যিনি বেশি আর্থিক স্থিতিশীলতা অর্জন করতে পেরেছেন, তিনি দীর্ঘজীবী হয়েছেন। এই ফলাফলটি 'ধনীদের জন্য উন্নত চিকিৎসা'—এই ধরনের সরল ব্যাখ্যাকে বাতিল করে দেয়। বরং এটি ইঙ্গিত করে যে অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক স্থিতিশীলতার একটি উপাদান হিসেবে সম্পদ সরাসরি শরীরের উপর প্রভাব ফেলে।

গবেষণার প্রধান লেখক এরিক ফাইনগুড (Eric Finegood) জোর দিয়ে বলেছেন: "একই পরিবারের ভাইবোনদের মধ্যেকার তুলনা একটি শক্তিশালী প্রমাণ দেয় যে সম্পদ সঞ্চয় এবং দীর্ঘায়ুর মধ্যে একটি যোগসূত্র রয়েছে। কারণ এই বিশ্লেষণ তাদের ভাগ করা সমস্ত সাধারণ জীবনযাত্রার পরিস্থিতি এবং জৈবিক বৈশিষ্ট্যগুলিকে বিবেচনা করে।"

বিজ্ঞানীরা স্পষ্টভাবে বলছেন যে এই প্রসঙ্গে সম্পদ মানে কেবল টাকা নয়। এটি হলো স্থিতিশীলতা এবং নিরাপত্তার একটি সূচক, যা দীর্ঘস্থায়ী চাপ (chronic stress) কমিয়ে দেয়। এই দীর্ঘস্থায়ী চাপই অকাল বার্ধক্যের অন্যতম প্রধান কারণ।

গবেষণাটি আরও দেখায় যে আর্থিক বৈষম্য কীভাবে আয়ুষ্কালের ক্ষেত্রে বৈষম্য তৈরি করে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পূর্ববর্তী জাতীয় পর্যবেক্ষণ অনুসারে, সবচেয়ে ধনী এবং সবচেয়ে দরিদ্র ১ শতাংশ জনসংখ্যার মধ্যে আয়ুষ্কালের পার্থক্য পুরুষদের ক্ষেত্রে ১৫ বছর এবং মহিলাদের ক্ষেত্রে ১০ বছরেরও বেশি—এবং এই দূরত্ব ক্রমশ বাড়ছে।

অর্থনীতির চেয়েও গভীর

এই সংখ্যাগুলিকে বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা যেতে পারে। কেউ হয়তো এটিকে সামাজিক অন্যায়ের একটি স্মরণিকা হিসেবে পড়বেন। আবার কেউ এটিকে একটি সরল সত্যের প্রতিফলন হিসেবে দেখতে পারেন: মানুষ মনোযোগ ও যত্নের সাথে যা কিছু তৈরি করে, তা-ই তার জীবনের ভিত্তি বা অবলম্বন হয়ে ওঠে।

আর্থিক সচ্ছলতা কোনো চূড়ান্ত লক্ষ্য নয়, বরং এটি অভ্যন্তরীণ সুসংগঠিত হওয়ার একটি রূপ। বাইরে স্থিতিশীল কাঠামো তৈরি করার ক্ষমতা আসে ভেতরের সামঞ্জস্য থেকে। যখন একজন মানুষ ভবিষ্যতের বিষয়ে আত্মবিশ্বাস অনুভব করেন, তখন তার শরীর বেঁচে থাকার (survival) মোড থেকে বেরিয়ে আসে। সে তখন সত্যিকার অর্থে বাঁচতে শুরু করে।

উপসংহারের পরিবর্তে

আধুনিক বিজ্ঞান আবারও সেই বিষয়টিকে নিশ্চিত করছে যা প্রাচীন দর্শন স্বজ্ঞাতভাবে জানত: প্রাচুর্য হলো জীবনের স্বাভাবিক অবস্থা। যেখানে শৃঙ্খলা, কৃতজ্ঞতা এবং শক্তি (তা অর্থ হোক, সময় হোক বা মনোযোগ হোক) সম্পর্কে সচেতন মনোভাব রয়েছে, সেখানেই স্থিতিশীলতা জন্ম নেয়। আর এই স্থিতিশীলতাই জীবনকে দীর্ঘ, শান্ত এবং সত্যিকারের প্রাণবন্ত করে তোলে।

উৎসসমূহ

  • znaj.ua

  • Northwestern University News

আপনি কি কোনো ত্রুটি বা অসঠিকতা খুঁজে পেয়েছেন?

আমরা আপনার মন্তব্য যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিবেচনা করব।