সেন্ট মার্টিনস দ্বীপ: পর্যটন ও পরিবেশ সুরক্ষার মেলবন্ধন

সম্পাদনা করেছেন: Елена 11

বাংলাদেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্ট মার্টিনস আগামী ১লা নভেম্বর, ২০২৫ থেকে পর্যটকদের জন্য পুনরায় খুলে দেওয়া হচ্ছে। চার মাসব্যাপী এই সীমিত সময়ের জন্য দ্বীপটিতে পর্যটকদের আগমন নিয়ন্ত্রণ করা হবে, যা পর্যটন শিল্পের বিকাশ এবং দ্বীপটির নাজুক পরিবেশগত ভারসাম্য রক্ষার মধ্যে একটি সুচিন্তিত সমন্বয় সাধনের প্রয়াস। দ্বীপটির পরিবেশগত প্রভাব কমাতে প্রতিদিন সর্বোচ্চ ২,০০০ পর্যটকের একটি সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে, শুধুমাত্র দিবাকালীন ভ্রমণের উপর জোর দেওয়া হচ্ছে। ২০২৬ সালের জানুয়ারি মাস থেকে পর্যটকদের রাত্রিযাপনের অনুমতি দেওয়া হবে, যা একটি নতুন সফটওয়্যার সিস্টেমের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত হবে। এই প্রযুক্তিগত উদ্যোগ পর্যটকদের আগমন সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করতে সহায়ক হবে।

সাম্প্রতিক সময়ে দ্বীপটি সাময়িকভাবে বন্ধ রাখার ফলে প্রবাল প্রাচীরের পুনর্জন্মের লক্ষণ দেখা গেছে, যা পরিবেশ সংরক্ষণ প্রচেষ্টার কার্যকারিতা প্রমাণ করে। দ্বীপটির সুরক্ষার জন্য পর্যটকদের আচরণবিধি কঠোরভাবে অনুসরণ করতে হবে, যা দায়িত্বশীল পর্যটন চর্চাকে উৎসাহিত করবে। এই টেকসই পর্যটন উদ্যোগ বাংলাদেশের সকল পর্যটন কেন্দ্র জুড়ে সম্প্রসারিত হচ্ছে, যার লক্ষ্য সকল গন্তব্যকে পরিবার-বান্ধব, সাশ্রয়ী এবং নিরাপদ করে তোলা। সরকার পর্যটন প্রবণতা সম্পর্কে উন্নত ধারণা পেতে তথ্য সংগ্রহ ব্যবস্থার উন্নতির জন্যও কাজ করছে।

সেন্ট মার্টিনস দ্বীপ, একটি অনন্য প্রবাল সমৃদ্ধ ভূখণ্ড, এটি বিভিন্ন সামুদ্রিক জীবের আবাসস্থল, যার মধ্যে বিরল প্রজাতির কচ্ছপও অন্তর্ভুক্ত। এই দ্বীপের পুনঃরায় উন্মোচনের পরিকল্পনা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য এই প্রাকৃতিক ঐতিহ্য সংরক্ষণের প্রতি সরকারের অঙ্গীকারকে তুলে ধরে। পর্যটকদের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি, সেন্ট মার্টিনস দ্বীপের পরিবেশগত চ্যালেঞ্জগুলোও উল্লেখযোগ্য। অতিরিক্ত পর্যটনের কারণে প্লাস্টিক দূষণ, লবণাক্ত পানির অনুপ্রবেশ এবং সীমিত বিশুদ্ধ পানির সরবরাহ এখানকার পরিবেশের উপর গভীর প্রভাব ফেলে।

এই সমস্যাগুলো মোকাবেলায়, সরকার পরিবেশ-বান্ধব পর্যটন নীতি গ্রহণ করছে, যার মধ্যে একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিকের ব্যবহার নিষিদ্ধ করা এবং পর্যটকদের জন্য কঠোর আচরণবিধি প্রণয়ন অন্তর্ভুক্ত। এই পদক্ষেপগুলো দ্বীপটির প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং জীববৈচিত্র্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। বাংলাদেশের পর্যটন শিল্পে টেকসই উন্নয়নের প্রচেষ্টা নতুন নয়। সরকার 'প্রজেক্ট ক্লিন ট্রাভেল'-এর মতো উদ্যোগের মাধ্যমে পরিবেশ-বান্ধব পর্যটন চর্চা এবং টেকসই পর্যটন উদ্যোগকে উৎসাহিত করছে। এছাড়াও, 'গ্রিন কী' প্রোগ্রামের মতো আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত সার্টিফিকেশন প্রোগ্রাম বাংলাদেশে চালু করা হয়েছে, যা হোটেল এবং পর্যটন সংস্থাগুলোকে পরিবেশগতভাবে দায়িত্বশীল অনুশীলনের জন্য উৎসাহিত করে। এই সম্মিলিত প্রচেষ্টাগুলো নিশ্চিত করে যে পর্যটন কেবল অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির চালিকাশক্তিই নয়, বরং পরিবেশ ও স্থানীয় সম্প্রদায়ের সুরক্ষাতেও অবদান রাখে।

উৎসসমূহ

  • The Daily Ittefaq

  • Urgent Protection Measures Needed for Bangladesh's Only Coral Island

  • St. Martin's may be depleted of coral by 2045

আপনি কি কোনো ত্রুটি বা অসঠিকতা খুঁজে পেয়েছেন?

আমরা আপনার মন্তব্য যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিবেচনা করব।