সাম্প্রতিক বছরগুলোতে, বিলাসবহুল ভ্রমণ কেবল বস্তুগত ঐশ্বর্যের বাইরে গিয়ে প্রশান্তি, প্রকৃতি এবং সামগ্রিক সুস্থতার দিকে মনোনিবেশ করছে। অতিমারী পরবর্তী সময়ে, ভ্রমণকারীরা শহর থেকে দূরে শান্ত প্রাকৃতিক পরিবেশে নিজেদের খুঁজে নিতে আগ্রহী। এই পরিবর্তন ভারতে ওয়েলনেস ট্যুরিজম (wellness tourism) ক্ষেত্রে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। ভারত ওয়েলনেস ট্যুরিজমের একটি প্রধান কেন্দ্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছে।
২০২৪ সালে ১৯.৪৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের ভারতীয় ওয়েলনেস ট্যুরিজম বাজার ২০২৫ সালের মধ্যে ২৭.৯২ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছাবে বলে অনুমান করা হচ্ছে এবং ২০৩৪ সালের মধ্যে এটি ৩৯.৮৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছাবে, যা ৬.৪৫% এর বার্ষিক চক্রবৃদ্ধি হার প্রদর্শন করে। এই বৃদ্ধি মূলত আয়ুর্বেদ, যোগা এবং প্রকৃতির নিরাময় ক্ষমতার মতো প্রাচীন ভারতীয় চিকিৎসা পদ্ধতির প্রতি নতুন করে আগ্রহের কারণে ঘটছে। ভ্রমণকারীরা এখন ডিজিটাল জগৎ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে নিজেদের এবং প্রকৃতির সাথে পুনরায় সংযোগ স্থাপনের সুযোগ খুঁজছেন। এই মননশীল পলায়নবাদ, তা সে বনের মধ্যে হাঁটা হোক বা নদীর ধারে যোগা, তা এখন বিলাসবহুল ভ্রমণের নতুন মানদণ্ড হয়ে দাঁড়িয়েছে।
হোটেল এবং রিসোর্টগুলি তাদের পরিষেবাগুলিতে ওয়েলনেস কার্যক্রম অন্তর্ভুক্ত করে এই প্রবণতার সাথে মানিয়ে নিচ্ছে। বন্য অঞ্চলে যোগা সেশন থেকে শুরু করে ঘোড়ায় চড়া পর্যন্ত, তারা এমন অভিজ্ঞতা প্রদান করছে যা ভ্রমণের পরেও দীর্ঘস্থায়ী সুস্থতা প্রদান করে। প্রকৃতি তার নিরাময় ক্ষমতা দিয়ে শরীর ও মনকে পুনরুজ্জীবিত করে তোলে। ভারতের বৈচিত্র্যময় প্রাকৃতিক দৃশ্য, হিমালয়ের পর্বতমালা থেকে শুরু করে গ্রীষ্মমন্ডলীয় বনভূমি, এই ধীর এবং আত্মিক ভ্রমণ আন্দোলনের জন্য একটি আদর্শ পটভূমি সরবরাহ করে।
এই ক্রমবর্ধমান ওয়েলনেস ট্যুরিজম শিল্পে ভারত একটি বিশ্বব্যাপী নেতৃত্বস্থানীয় অবস্থানে পৌঁছানোর জন্য প্রস্তুত। ভারত সরকার 'আয়ুষ ভিসা' এবং 'হিল ইন ইন্ডিয়া' (Heal in India) উদ্যোগের মাধ্যমে এই খাতকে আরও শক্তিশালী করছে। আয়ুর্বেদ, যোগা এবং প্রকৃতির নিরাময় ক্ষমতার উপর ক্রমবর্ধমান মনোযোগের সাথে, ভারত বিশ্বব্যাপী সুস্থতা এবং পুনরুজ্জীবনের একটি প্রধান গন্তব্য হিসাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করছে। এই প্রবণতা কেবল ভারতের অর্থনীতিকেই শক্তিশালী করছে না, বরং বিশ্বজুড়ে মানুষকে তাদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতিতে সহায়তা করছে।