একটি প্রচলিত ধারণা ছিল যে, শিশুদের ভাষা শেখার সময় করা ভুলগুলোই ভাষার পরিবর্তনের প্রধান কারণ। এই ধারণাটি উনিশ শতকের ভাষাবিদ হেনরি সুইট-এর উক্তির উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছিল। তিনি বলেছিলেন, "যদি প্রতিটি প্রজন্মের শিশুরা নিখুঁতভাবে ভাষা শেখে, তবে ভাষা পরিবর্তিত হবে না।" তবে, সাম্প্রতিক গবেষণা এই ধারণাকে চ্যালেঞ্জ জানিয়েছে। নতুন গবেষণা বলছে, ভাষা পরিবর্তনে কিশোর-কিশোরী এবং প্রাপ্তবয়স্কদের ভাষা ব্যবহারের প্রভাব অনেক বেশি।
আমেরিকার প্রায় ৭,০০০ শিশুর টেলিভিশন অনুষ্ঠানের স্ক্রিপ্ট বিশ্লেষণ করে ২০২৫ সালে একটি গবেষণা পরিচালিত হয়েছিল, যা ১৯৬০ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত সম্প্রচারিত অনুষ্ঠানগুলো অন্তর্ভুক্ত করেছিল। এই গবেষণায় পুরুষ ও মহিলা চরিত্রদের ভাষা ব্যবহারের মধ্যে লিঙ্গবৈষম্যের ধারা বজায় থাকার বিষয়টি লক্ষ্য করা গেছে। এটি ইঙ্গিত দেয় যে, মিডিয়াতে প্রাপ্তবয়স্ক ও কিশোর-কিশোরীদের ভাষা ব্যবহার লিঙ্গবৈষম্যকে আরও শক্তিশালী করতে পারে।
হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এলিকা বার্গেলসন-এর নেতৃত্বে পরিচালিত একটি গুরুত্বপূর্ণ গবেষণায় ১২টি দেশের ৪৩টি ভাষায় শিশুদের প্রায় ৪০,০০০ ঘণ্টার অডিও রেকর্ডিং মেশিন লার্নিং ব্যবহার করে বিশ্লেষণ করা হয়েছে। এই গবেষণার ফলাফল অনুযায়ী, শিশুদের ভাষা বিকাশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নির্ধারকগুলো হলো শিশুর বয়স, ক্লিনিকাল কারণ এবং প্রাপ্তবয়স্কদের কাছ থেকে তারা কতটা ভাষা শোনে। এই গবেষণাগুলো ভাষার পরিবর্তনে শিশুদের ভুলের চেয়ে প্রাপ্তবয়স্কদের ভাষার প্রভাবকে আরও বেশি তুলে ধরে।
গবেষণাগুলো আরও বলছে যে, এই গোষ্ঠীগুলোর সামাজিক কর্তৃত্ব, সৃজনশীল অভিব্যক্তি এবং মিথস্ক্রিয়া নমনীয়তা নতুন ভাষাগত রূপের উদ্ভব এবং টিকে থাকার ক্ষমতা প্রদান করে। যেহেতু ভাষা একটি গতিশীল এবং পরিবর্তনশীল ব্যবস্থা, তাই এর পরিবর্তনের কারণগুলো বোঝা ভাষাগত গবেষণা এবং কার্যকর ভাষা শিক্ষা কৌশলের উন্নয়নের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বৃহত্তর সামাজিক, ঐতিহাসিক এবং মিথস্ক্রিয়া প্রক্রিয়াগুলির উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে, গবেষকরা ভাষা উদ্ভব এবং পরিবর্তনের প্রক্রিয়াগুলি সম্পর্কে আরও ব্যাপক ধারণা লাভ করতে পারেন।
উপসংহারে, যদিও শিশুদের ভাষা অর্জন একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যয়নের ক্ষেত্র, তবে ভাষা পরিবর্তনে কিশোর-কিশোরী এবং প্রাপ্তবয়স্কদের ভাষা ব্যবহারই অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন ঐতিহ্যবাহী বিশ্বাসগুলির পুনর্মূল্যায়নকে উৎসাহিত করে এবং ভাষার বিবর্তনের জটিল গতিবিদ্যা নিয়ে গবেষণার নতুন পথ খুলে দেয়।