মেক্সিকো সিটির ন্যাশনাল আর্টস সেন্টারে (Cenart) অনুষ্ঠিত নবম জাতীয় আদিবাসী ভাষা মেলা (FLIN) আদিবাসী মহিলাদের ভাষা ও সংস্কৃতি সংরক্ষণে তাদের অপরিহার্য ভূমিকার উপর আলোকপাত করেছে। ৯ থেকে ১০ আগস্ট, ২০২৫ পর্যন্ত চলা এই অনুষ্ঠানটি "বহুবিশ্ব: সমসাময়িক মেক্সিকোতে আদিবাসী মহিলা" থিমের অধীনে আয়োজিত হয়েছিল, যা আদিবাসী মহিলাদের ভাষা ও সংস্কৃতির সুরক্ষায় তাদের গুরুত্বপূর্ণ অবদানকে স্বীকৃতি দিয়েছে।
এই মেলায় বিভিন্ন ধরনের সাংস্কৃতিক ও ভাষাগত কার্যক্রম অন্তর্ভুক্ত ছিল, যেমন আলোচনা প্যানেল, কর্মশালা, শৈল্পিক পরিবেশনা এবং কনসার্ট। এগুলি ন্যাশনাল মিউজিয়াম অফ পপুলার কালচার এবং সিনার্টের ব্লাস গ্যালিনডো অডিটোরিয়ামের মতো স্থানে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। মেলায় মায়া, জ্যাপোটেক, সোটসিল, টোটোনাক এবং নাহুয়াটল সহ বিভিন্ন আদিবাসী ভাষায় কবিতা পাঠ করেন কবিরা, তাদের কাজ এবং অভিজ্ঞতা ভাগ করে নেন। এই অনুষ্ঠানগুলি আদিবাসী ভাষাগুলিতে স্প্যানিশে সমান্তরাল অনুবাদের মাধ্যমে আন্তঃসাংস্কৃতিক সংলাপ এবং বোঝাপড়াকে উৎসাহিত করেছে। FLIN ২০২৫ মেক্সিকোর ভাষাগত ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য রক্ষার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছে। এটি আদিবাসী মহিলাদের দ্বারা ভাষা ও সংস্কৃতির ধারাবাহিকতা বজায় রাখার ক্ষেত্রে তাদের অপরিহার্য ভূমিকাকে স্বীকার করে।
এই উদ্যোগটি জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক আদিবাসী ভাষা দশক (২০২২-২০৩২) এর সাথে সঙ্গতিপূর্ণ, যা বিশ্বজুড়ে আদিবাসী ভাষাগুলির নাজুক পরিস্থিতি সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং তাদের সংরক্ষণ ও পুনরুজ্জীবনের জন্য প্রচেষ্টা সংগঠিত করার লক্ষ্যে কাজ করছে। মেক্সিকোতে প্রায় ৭ মিলিয়ন মানুষ ৬৮টি স্বীকৃত আদিবাসী ভাষায় কথা বলে, যার মধ্যে মায়া এবং নাহুয়াটল অন্যতম। তবে, নগরায়ণ, বিশ্বায়ন এবং স্প্যানিশ ভাষার প্রভাবের কারণে এই ভাষাগুলি ক্রমশ বিলুপ্তির পথে। আদিবাসী মহিলাদের এই ভাষাগুলি প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে বাঁচিয়ে রাখার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তারা ঐতিহ্যবাহী জ্ঞান, ভাষা এবং রীতিনীতির বাহক। উদাহরণস্বরূপ, জ্যাপোটেক এবং মিকসটেক সম্প্রদায়ের মহিলারা ঐতিহ্যবাহী বয়ন শিল্পের মাধ্যমে তাদের সাংস্কৃতিক পরিচয় প্রকাশ করে, যা প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে চলে আসছে। এই মেলাটি আদিবাসী মহিলাদের ভাষা সংরক্ষণে তাদের অসামান্য অবদানের একটি প্রমাণ। এটি কেবল ভাষা রক্ষার বিষয় নয়, বরং এটি সাংস্কৃতিক পরিচয়, ইতিহাস এবং বিশ্বদৃষ্টিভঙ্গি সংরক্ষণের একটি প্রয়াস। আদিবাসী মহিলাদের কণ্ঠস্বরকে আরও জোরালো করা এবং তাদের ক্ষমতায়ন করা একটি ন্যায়সঙ্গত ও অন্তর্ভুক্তিমূলক ভবিষ্যৎ গঠনের জন্য অপরিহার্য।