শিক্ষাবিদ এস্তেফানিয়া কাস্তানেদা ই নুনেস দে কাচেরেস (১৮৭২-১৯৩৭) মেক্সিকোর প্রারম্ভিক শৈশব শিক্ষার ভিত্তি স্থাপনকারী একজন অগ্রগামী ব্যক্তিত্ব হিসেবে পরিচিত। তিনি এমন এক শিক্ষাব্যবস্থার জন্য জীবন উৎসর্গ করেছিলেন যা খেলাধুলা এবং প্রকৃতির সঙ্গে সংযোগের মাধ্যমে শেখার ওপর জোর দেয়, যা প্রগতিশীল শিক্ষার মূলমন্ত্র। তামাউলিপাসের সিয়ুডাড ভিক্টোরিয়াতে তাঁর জন্ম হয়েছিল এবং তিনি তাঁর উদ্ভাবনী শিশু শিক্ষায় খেলা ও প্রকৃতির সংমিশ্রণকে মুখ্য স্থান দিয়েছিলেন।
তাঁর গভীর জ্ঞানার্জনের আকাঙ্ক্ষা তাঁকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নিয়ে যায়। কাস্তানেদা নিউইয়র্কের কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটি এবং শিকাগো কিন্ডারগার্টেন কলেজে উন্নত শিক্ষণ পদ্ধতি নিয়ে অধ্যয়ন করেন, যা প্রগতিশীল শিক্ষাবিদ্যা সম্পর্কে তাঁর বোঝাপড়াকে আরও দৃঢ় করে। এই আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতাগুলি মেক্সিকোর শিক্ষাব্যবস্থাকে নতুন আঙ্গিকে সাজাতে তাঁকে বিশেষভাবে সাহায্য করেছিল। তাঁর কাজের ফলস্বরূপ, কাস্তানেদা ১৯০৩ সালে মেক্সিকো সিটিতে ফ্রিডরিখ ফ্র্যোবেলের শিক্ষণ পদ্ধতি অনুসরণ করে প্রথম কিন্ডারগার্টেন, যার নাম ছিল 'ফেদেরিকো ফ্র্যোবেল নং ১', প্রতিষ্ঠা করেন। এই প্রতিষ্ঠানটি ছিল মেক্সিকোর প্রথম সরকারি শিশু শিক্ষা কেন্দ্র।
তাঁর এই প্রচেষ্টা শুধু রাজধানী শহরেই সীমাবদ্ধ থাকেনি; তিনি ট্যাম্পিকো, নুয়েভো লারেডো, মাতামোরোস এবং তুলা শহরেও অনুরূপ শিশু শিক্ষালয় স্থাপন করেছিলেন। শিক্ষার প্রসারে তাঁর ভূমিকা ছিল সুদূরপ্রসারী। তিনি মেক্সিকোর অভ্যন্তরে এবং আন্তর্জাতিক স্তরেও শিশু শিক্ষার গুরুত্ব তুলে ধরেছিলেন। উদাহরণস্বরূপ, ১৯১১ সালে তিনি মেক্সিকো সরকারের পক্ষ থেকে সেন্ট লুইস, মিসৌরিতে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক কিন্ডারগার্টেন কংগ্রেসে প্রতিনিধিত্ব করেন এবং সেখানে তাঁর লিখিত পুস্তিকা 'হাউ দ্য কিন্ডারগার্টেন প্রিন্সিপলস আর ইন্টারপ্রিটেড ইন মেক্সিকো' বিতরণ করেন, যা মেক্সিকোর শিক্ষাগত দৃষ্টিভঙ্গিকে বিশ্ব মঞ্চে তুলে ধরে। তাঁর এই অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ, ১৯২১ সালে জাস্টো সিয়েরা তাঁকে প্রাথমিক শিক্ষার সম্মানিত অধ্যাপক হিসেবে আখ্যা দেন।
কাস্তানেদা কেবল প্রথাগত শিক্ষাতেই সীমাবদ্ধ থাকেননি, তিনি সামাজিক দায়বদ্ধতার দিকেও মনোনিবেশ করেছিলেন। তাঁর দূরদর্শিতার প্রমাণ মেলে ১৯৩৩ সালে যখন তিনি কিন্ডারগার্টেন এবং সামাজিক কর্ম সেমিনার প্রতিষ্ঠা করেন। এই প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য ছিল এমন সামাজিক কর্মীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া যারা গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর সামাজিক ও সহায়তামূলক চাহিদা পূরণে সক্ষম হবেন। শিক্ষাবিদ হিসেবে তাঁর দর্শন ছিল অত্যন্ত সরল ও গভীর: তিনি বলতেন, 'শিশুর প্রকৃতি জানতে ও বুঝতে হলে: কেবল একটি বই আছে, একটি জীবন্ত বই: সেই শিশুটি নিজে।' এই দৃষ্টিভঙ্গি নির্দেশ করে যে প্রতিটি শিশুর মধ্যেই শেখার অপার সম্ভাবনা নিহিত, যা কেবল বাহ্যিক পরিবেশের মাধ্যমে উদ্দীপিত হতে পারে। ১৯৩৭ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি এস্তেফানিয়া কাস্তানেদার জীবনাবসান ঘটলেও, মেক্সিকোর প্রাথমিক শিক্ষায় তাঁর উত্তরাধিকার আজও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, যা শিশুদের বিকাশের পথকে সুগম করেছে।