আগামী ২০২৫ সালের সেপ্টেম্বর মাস থেকে পোল্যান্ডের শিক্ষা ব্যবস্থায় বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আসছে। শিক্ষার্থীদের সমসাময়িক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা এবং দ্রুত পরিবর্তনশীল বিশ্বের জন্য আরও ভালোভাবে প্রস্তুত করার লক্ষ্যে এই সংস্কারগুলি আনা হচ্ছে।
নতুন শিক্ষাবর্ষে, অর্থাৎ ২০২৫ সালের সেপ্টেম্বর থেকে, উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য নাগরিক শিক্ষা বাধ্যতামূলক করা হবে। এই পাঠদানের উদ্দেশ্য হলো গণতান্ত্রিক নীতি, দেশপ্রেম এবং সামাজিক দায়িত্ববোধের প্রতি শিক্ষার্থীদের মধ্যে একটি গভীর বোঝাপড়া তৈরি করা, যা সম্মান, সহানুভূতি এবং সংহতির মতো মূল্যবোধকে উৎসাহিত করবে। এই নতুন নাগরিক শিক্ষা পূর্বের বিতর্কিত 'ইতিহাস ও বর্তমান' বিষয়টিকে প্রতিস্থাপন করবে। পারিবারিক জীবন শিক্ষার পরিবর্তে স্বাস্থ্য শিক্ষা চালু করা হবে, যা প্রাথমিক (চতুর্থ-অষ্টম শ্রেণি) এবং উচ্চ বিদ্যালয় উভয় স্তরেই পড়ানো হবে। এই কোর্সে স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন, মানসিক ও সামাজিক সুস্থতা, বয়ঃসন্ধিকালীন পরিবর্তন, যৌন স্বাস্থ্য, মাদকাসক্তি প্রতিরোধ এবং স্বাস্থ্য ব্যবস্থার মতো বিষয়গুলি অন্তর্ভুক্ত থাকবে। তবে, এই ক্লাসগুলিতে অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে অভিভাবকদের লিখিত সম্মতির মাধ্যমে অংশগ্রহণের সুযোগ থাকবে।
শারীরিক শিক্ষাতেও (পিই) পরিবর্তন আনা হচ্ছে। শিক্ষার্থীদের সামরিক বাহিনী ও পুলিশের মতো ইউনিফর্মধারী পরিষেবাগুলিতে নিয়োগের জন্য প্রস্তুত করার লক্ষ্যে এই বিষয়ে কিছু নতুন উপাদান যুক্ত করা হবে। এর মধ্যে থাকবে সহনশীলতা বৃদ্ধি, পুশ-আপ, লং জাম্প এবং প্রাথমিক আত্মরক্ষার কৌশল। প্রথম থেকে তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য বাধ্যতামূলক ফিটনেস পরীক্ষা নেওয়া হবে, এবং সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা ইউনিফর্মধারী পরিষেবার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যায়ামের ঐচ্ছিক মডিউলে অংশ নিতে পারবে।
২০২৫-২০২৬ শিক্ষাবর্ষ ১ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ থেকে শুরু হয়ে ২৬ জুন, ২০২৬ পর্যন্ত চলবে। শীতকালীন ছুটি এবার চারটি পরিবর্তে তিনটি পর্যায়ে বিভক্ত থাকবে, যা পোল্যান্ডের বিভিন্ন অঞ্চলের জন্য নির্দিষ্ট তারিখে অনুষ্ঠিত হবে। শীতকালীন ছুটির সময়সীমা ২২ ডিসেম্বর, ২০২৫ থেকে ৩১ ডিসেম্বর, ২০২৫ পর্যন্ত এবং বসন্তকালীন ছুটি ২ এপ্রিল, ২০২৬ থেকে ৭ এপ্রিল, ২০২৬ পর্যন্ত নির্ধারিত হয়েছে।
বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিক্ষার্থীদের জন্য একটি নতুন মূল্যায়ন ব্যবস্থা চালু করা হবে। বিশেষ করে অটিজম, সংবেদনশীলতা জনিত সমস্যা এবং বুদ্ধি প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য এই ব্যবস্থা কার্যকর হবে। এটি তাদের ব্যক্তিগত চাহিদাগুলির উপর আলোকপাত করবে এবং একাডেমিক ফলাফলের পাশাপাশি স্বায়ত্তশাসন ও সামাজিক দক্ষতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করবে। এই মূল্যায়ন শিক্ষক, মনোবিজ্ঞানী এবং অভিভাবকদের সহযোগিতার ভিত্তিতে সম্পন্ন হবে।
শিক্ষকদের সহায়তার জন্য, বিশেষ করে মনোবিজ্ঞানী এবং স্পিচ থেরাপিস্টদের নিয়োগের ক্ষেত্রে কিছু নিয়ম শিথিল করা হচ্ছে। এটি বিশেষত অ-সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলিতে প্রযোজ্য হবে, যেখানে সাপ্তাহিক চুক্তির মেয়াদ বাড়ানো যেতে পারে। এই পদক্ষেপটি তরুণদের মধ্যে ক্রমবর্ধমান মানসিক স্বাস্থ্য সংকট মোকাবিলায় সহায়ক হবে এবং এটি ২০২৭ সালের আগস্ট পর্যন্ত একটি অস্থায়ী ব্যবস্থা হিসেবে কার্যকর থাকবে।
এই সংস্কারগুলি পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়িত হবে। ২০২৬ সালের সেপ্টেম্বরের মধ্যে কিন্ডারগার্টেন এবং প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রথম ও চতুর্থ শ্রেণির জন্য নতুন পাঠ্যক্রম চালু করা হবে। উচ্চ বিদ্যালয়ের পাঠ্যক্রম ২০২৭ সালের সেপ্টেম্বরের মধ্যে আপডেট করা হবে। এছাড়া, অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী এবং উচ্চ বিদ্যালয়ের স্নাতকদের জন্য নতুন পরীক্ষা পদ্ধতি ২০৩১ এবং ২০৩২ সালের মধ্যে চালু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এই পরিবর্তনগুলি পোল্যান্ডের শিক্ষা ব্যবস্থাকে ভবিষ্যতের জন্য আরও সুসংহত ও কার্যকর করে তুলবে।