জুলাই ২০২৫-এ জাপান এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র একটি যুগান্তকারী বাণিজ্য চুক্তি সম্পন্ন করেছে, যা উভয় দেশের অর্থনীতিতে নতুন গতি সঞ্চার করার পাশাপাশি দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককেও এক নতুন উচ্চতায় নিয়ে গেছে। এই চুক্তির ফলে জাপানি পণ্যের উপর আমদানি শুল্ক ২৫% থেকে কমিয়ে ১৫% করা হয়েছে। এর পাশাপাশি, জাপান মার্কিন অর্থনীতিতে অভূতপূর্ব ৫৫০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, যা দেশটির জ্বালানি, সেমিকন্ডাক্টর, অত্যাবশ্যকীয় খনিজ, ফার্মাসিউটিক্যালস এবং জাহাজ নির্মাণ শিল্পের মতো গুরুত্বপূর্ণ খাতগুলোকে পুনরুজ্জীবিত করতে সহায়ক হবে।
এই ঐতিহাসিক চুক্তির মাধ্যমে জাপানের বাজার মার্কিন কৃষি পণ্যের জন্য উন্মুক্ত হয়েছে। বিশেষ করে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে চাল আমদানি ৭৫% বৃদ্ধি পাবে এবং ভুট্টা, সয়াবিন, সার, বায়োফুয়েল ও টেকসই বিমান জ্বালানির মতো পণ্যের জন্য ৮ বিলিয়ন ডলারের একটি ক্রয় প্রতিশ্রুতিও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এই পদক্ষেপগুলি মার্কিন কৃষকদের জন্য নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করবে এবং বিশ্বব্যাপী খাদ্য সরবরাহ শৃঙ্খলকে শক্তিশালী করবে।
এছাড়াও, অটোমোবাইল খাতের জন্য এই চুক্তিটি বিশেষভাবে তাৎপর্যপূর্ণ। এটি জাপানে মার্কিন গাড়ির জন্য বিদ্যমান অশুল্ক বাধাসমূহ দূর করেছে এবং জাপানের বাজারে মার্কিন গাড়ির পরিবেশগত ও নিরাপত্তা মানদণ্ড গ্রহণের পথ সুগম করেছে। এই সমন্বয় উভয় দেশের অটোমোবাইল শিল্পে নতুন সুযোগ তৈরি করবে এবং গ্রাহকদের জন্য উন্নত মানের পণ্যের সহজলভ্যতা নিশ্চিত করবে।
এই বাণিজ্য চুক্তি কেবল অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির একটি চালিকাশক্তিই নয়, এটি একটি কৌশলগত পদক্ষেপ হিসেবেও বিবেচিত হচ্ছে। বিশ্বব্যাপী সরবরাহ শৃঙ্খলের স্থিতিশীলতা বৃদ্ধি এবং চীনের উপর নির্ভরতা কমানোর ক্ষেত্রে এই অংশীদারিত্ব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। উভয় দেশই এই চুক্তির মাধ্যমে তাদের অর্থনৈতিক নিরাপত্তা জোরদার করতে এবং উদ্ভাবনের মাধ্যমে বিশ্ব অর্থনীতিতে নেতৃত্ব দিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
এই চুক্তির ফলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কিছু অটোমোবাইল প্রস্তুতকারক জাপানি আমদানির ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতামূলক সুবিধার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করলেও, সামগ্রিকভাবে কৃষি খাত এবং সেমিকন্ডাক্টর ও ফার্মাসিউটিক্যালসের মতো প্রযুক্তি-নির্ভর শিল্পগুলোতে জাপানি বিনিয়োগের ফলে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং শিল্প খাতের পুনরুজ্জীবনের আশা করা হচ্ছে। এই অংশীদারিত্ব মার্কিন-জাপান জোটকে আরও শক্তিশালী করবে এবং দীর্ঘমেয়াদী স্থিতিশীলতা ও সমৃদ্ধির পথ প্রশস্ত করবে।