সুইজারল্যান্ডের সরকার পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে নিষেধাজ্ঞা আরোপের জন্য একটি খসড়া আইন প্রণয়ন করেছে। এই পদক্ষেপটি দেশের ২০১৮ সালের পারমাণবিক শক্তি পর্যায়ক্রমে বন্ধ করার নীতি থেকে একটি উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন। এই নতুন প্রস্তাবটি "স্টপ দ্য ব্ল্যাকআউট" নামক একটি জনপ্রিয় উদ্যোগের পাল্টা প্রস্তাব হিসেবে এসেছে। এর মাধ্যমে কোম্পানিগুলো চুল্লি নির্মাণের জন্য লাইসেন্সের আবেদন করতে পারবে, তবে তা সংসদীয় অনুমোদন এবং সম্ভাব্য গণভোটের উপর নির্ভরশীল হবে। এই পরিবর্তনের মূল কারণগুলির মধ্যে রয়েছে দেশের ক্রমবর্ধমান বিদ্যুতের চাহিদা পূরণ, জলবায়ু লক্ষ্যমাত্রা অর্জন এবং গ্রিডের স্থিতিশীলতা বজায় রাখা। পারমাণবিক শক্তির সমর্থকরা মনে করেন যে নবায়নযোগ্য শক্তির পাশাপাশি পারমাণবিক শক্তিও এই লক্ষ্যগুলি অর্জনে সহায়ক হবে। অন্যদিকে, সমালোচকরা নতুন চুল্লিগুলির উচ্চ ব্যয়, বর্জ্য নিষ্পত্তির চ্যালেঞ্জ এবং সম্ভাব্য জনরোষের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। জার্মানি ২০২৩ সালে সম্পূর্ণরূপে পারমাণবিক শক্তি থেকে বেরিয়ে এসেছে, যা এই বিতর্কে একটি প্রাসঙ্গিক আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপট যোগ করেছে।
সুইজারল্যান্ডের বিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রায় ৬০% পরিচালনা করে এমন একটি প্রধান সংস্থা এক্সপো হোল্ডিংস এজি (Axpo Holdings AG) জানিয়েছে যে তাদের বর্তমানে নতুন নির্মাণ বা এই জাতীয় প্রকল্পে বিনিয়োগের কোনো পরিকল্পনা নেই। তারা আরও উল্লেখ করেছে যে এক্সপোর মতো সংস্থাগুলি একা নিয়ন্ত্রক এবং আর্থিক ঝুঁকি বহন করতে পারে না, তাই ঝুঁকির ভাগাভাগি প্রয়োজন। সরকার "স্টপ দ্য ব্ল্যাকআউট" উদ্যোগ প্রত্যাখ্যান করার জন্য ভোটারদের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছে, কারণ তাদের মতে একটি আইনি পরিবর্তন অনেক দ্রুত হবে এবং সাংবিধানিক সংশোধনের অনিশ্চয়তা এড়ানো যাবে। আইন প্রণেতাদের উভয় প্রস্তাবের উপর সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য ২০২৬ সালের আগস্ট মাস পর্যন্ত সময় রয়েছে। যদি উদ্যোগটি প্রত্যাহার না করা হয়, তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত ভোটারদের হাতেই থাকবে। ঐতিহাসিকভাবে, সুইজারল্যান্ডে পারমাণবিক শক্তি নিয়ে বিভিন্ন সময়ে গণভোট অনুষ্ঠিত হয়েছে। ১৯৯০ সালে দশ বছরের জন্য নতুন পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে নিষেধাজ্ঞার পক্ষে ৫৪.৫% ভোট পড়েছিল। পরবর্তীতে, ২০১৭ সালে একটি গণভোটে সুইস জনগণ পারমাণবিক শক্তি পর্যায়ক্রমে বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয়, যা দেশের শক্তি কৌশলের (Energy Strategy 2050) অংশ ছিল। এই কৌশলের অধীনে, নতুন পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। বর্তমানে, সুইজারল্যান্ডের চারটি পারমাণবিক চুল্লি দেশের বিদ্যুতের প্রায় ২৯% উৎপাদন করে। বেজনউ ১, যা ১৯৬৯ সাল থেকে চালু আছে, ২০৩৩ সালে বন্ধ হয়ে যাবে, এবং বেজনউ ২ ২০৩২ সালে। গোসগেন এবং লাইবস্টাড্ট কেন্দ্রগুলিও শীঘ্রই তাদের কার্যকাল শেষ করবে। এই চুল্লিগুলি বন্ধ হয়ে গেলে, দেশের অভ্যন্তরীণ বিদ্যুৎ উৎপাদন উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পাবে এবং আমদানির উপর নির্ভরতা বাড়বে। এই পরিস্থিতিই সরকার কর্তৃক পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার প্রস্তাবের অন্যতম প্রধান কারণ।