মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর দেশজুড়ে ৫ কোটি ৫০ লক্ষেরও বেশি বিদেশী নাগরিকের ভিসার উপর একটি ব্যাপক পর্যালোচনা শুরু করেছে। এই পদক্ষেপটি জাতীয় নিরাপত্তা জোরদার এবং সম্ভাব্য ভিসা বিধি লঙ্ঘন শনাক্ত করার লক্ষ্যে নেওয়া হয়েছে।
এই পর্যালোচনার অংশ হিসেবে, ভিসা আবেদনকারীদের জন্য কঠোর যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়া, সামাজিক মাধ্যম বিশ্লেষণ এবং ইলেকট্রনিক ডিভাইস পরীক্ষা করার মতো নতুন নিয়মাবলী অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এর মূল উদ্দেশ্য হলো ভিসা অপব্যবহার, যেমন ভিসার মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়া, অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকা, জননিরাপত্তার জন্য হুমকি সৃষ্টি করা, সন্ত্রাসী কার্যকলাপে সহায়তা করা বা সন্ত্রাসী সংগঠনকে সমর্থন করা ইত্যাদি শনাক্ত করা। এই নতুন নীতিমালার অধীনে, ভিসা সাক্ষাৎকারের সময় ইলেকট্রনিক ডিভাইসের ডেটা অ্যাক্সেস করার জন্য ব্যবহারকারীদের তাদের গোপনীয়তা সেটিংস নিষ্ক্রিয় করতে হতে পারে। এই পদক্ষেপগুলি ভিসা প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা এবং নিরাপত্তা বাড়ানোর জন্য ডিজাইন করা হয়েছে।
পররাষ্ট্র দপ্তরের এই উদ্যোগের মধ্যে, বিশেষ করে মানবিক সহায়তাকারী সংস্থাগুলির উপর এর প্রভাব নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। গাজা থেকে আসা আহত শিশুদের চিকিৎসার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে আগতদের ভিসা স্থগিত করার সিদ্ধান্ত HEAL Palestine-এর মতো সংস্থাগুলির দ্বারা সমালোচিত হয়েছে। এই সংস্থাগুলি জানিয়েছে যে এই ধরনের পদক্ষেপগুলি জরুরি চিকিৎসা সহায়তার প্রয়োজন এমন শিশুদের জন্য বাধা সৃষ্টি করতে পারে, যা তাদের মৌলিক মানবাধিকারের পরিপন্থী। তারা আরও জানিয়েছে যে তাদের কার্যক্রম সম্পূর্ণভাবে মানবিক সহায়তার উপর ভিত্তি করে এবং কোনো সরকারি অর্থায়ন ছাড়াই পরিচালিত হয়।
অন্যদিকে, এই ভিসা পর্যালোচনার একটি বৃহত্তর কৌশল হলো মার্কিন নিয়োগকর্তাদের বিদেশী কর্মী নিয়োগে নিরুৎসাহিত করা। এর একটি উদাহরণ হিসেবে বাণিজ্যিক ট্রাক চালকদের ভিসার উপর একটি অস্থায়ী স্থগিতাদেশের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এই পদক্ষেপটি মার্কিন শ্রমিকদের কর্মসংস্থান বৃদ্ধি এবং দেশের অভ্যন্তরীণ শ্রমবাজারকে শক্তিশালী করার একটি প্রচেষ্টা হিসেবে দেখা হচ্ছে। তবে, এই নীতির দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব এবং এটি বিভিন্ন শিল্পে, বিশেষ করে ট্রাক চালকের মতো খাতে, কর্মসংস্থান এবং সরবরাহ শৃঙ্খলের উপর কী প্রভাব ফেলবে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, জাতীয় নিরাপত্তার জন্য এই ধরনের কঠোর পদক্ষেপ জরুরি হলেও, এটি ব্যক্তিগত গোপনীয়তা এবং নাগরিক অধিকারের উপর সম্ভাব্য প্রভাব নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে। সামাজিক মাধ্যম বিশ্লেষণ এবং ইলেকট্রনিক ডিভাইস পরীক্ষার মতো বর্ধিত যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়াগুলি ব্যক্তির তথ্যের সুরক্ষার বিষয়ে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। এই নীতিগুলি বাস্তবায়নের সময় নিরাপত্তা এবং ব্যক্তিগত অধিকারের মধ্যে একটি সূক্ষ্ম ভারসাম্য বজায় রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সরকার এই পর্যালোচনা প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তার জাতীয় নিরাপত্তা জোরদার করার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সাথে সহযোগিতা এবং মানবিক সহায়তার প্রতি তার প্রতিশ্রুতি বজায় রাখার চেষ্টা করছে।