ট্রাম্পের ঘোষণা: জিম্মি মুক্তি হলেও গাজা শান্তি প্রক্রিয়া 'অসমাপ্ত', শুরু হলো দ্বিতীয় ধাপ
সম্পাদনা করেছেন: Tatyana Hurynovich
গাজা শান্তি প্রক্রিয়া ‘অসমাপ্ত’, দ্বিতীয় ধাপের সূচনা করলেন ট্রাম্প
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত অক্টোবর 14, 2025 তারিখে তাঁর ‘ট্রুথ সোশ্যাল’ প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে নিশ্চিত করেছেন যে ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতির প্রথম পর্যায় সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে। এই পর্যায়ে আটক থাকা বিশ (20) জন জিম্মিকে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে। এই প্রত্যাবর্তন স্বস্তি এনে দিলেও, ট্রাম্প অবিলম্বে জোর দিয়ে বলেন যে মিশনটি এখনও সম্পূর্ণ হয়নি এবং আরও কাজ বাকি আছে।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তাঁর বার্তায় স্পষ্ট করে বলেন: “সমস্ত 20 জন জিম্মি ফিরে এসেছে এবং যতটা আশা করা যায় ততটা ভালো আছে। একটি বড় বোঝা নেমে গেছে, কিন্তু কাজ এখনও শেষ হয়নি। প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী নিহতদের ফিরিয়ে আনা হয়নি।” এর ঠিক আগের দিন, জঙ্গিরা চার (4) জন নিহত জিম্মির দেহ হস্তান্তর করেছিল, যা যুদ্ধবিরতি চুক্তির অধীনে প্রাথমিকভাবে সম্মত হওয়া 28টি দেহ হস্তান্তরের চুক্তি লঙ্ঘন করে।
হামাসের প্রতিনিধিরা এই বিষয়ে যুক্তি দেন যে সব দেহ খুঁজে বের করা তাদের জন্য কঠিন ছিল, কারণ জিম্মিদের বিভিন্ন গোষ্ঠী দ্বারা আটক রাখা হয়েছিল এবং তারা গাজা উপত্যকার বিভিন্ন অঞ্চলে মারা গিয়েছিল। এই জটিলতা সত্ত্বেও, জিম্মি মুক্তির প্রথম ধাপটি সম্পন্ন হওয়া একটি গুরুত্বপূর্ণ মানবিক অগ্রগতি হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
তবে, ট্রাম্প তাঁর ভাষণে কেবল প্রথম ধাপের সমাপ্তির ঘোষণা দিয়েই থামেননি; তিনি পূর্বে উপস্থাপিত বিশ-দফা সমন্বিত শান্তি পরিকল্পনার দ্বিতীয় ধাপ বাস্তবায়নের সূচনাও ঘোষণা করেন। এই বৃহত্তর পরিকল্পনাটি কেবল জিম্মি মুক্তি নিয়েই সীমাবদ্ধ নয়, বরং গাজা উপত্যকার পুনর্গঠনের জন্য একটি অস্থায়ী টেকনোক্র্যাটিক ফিলিস্তিনি সরকার গঠন, হামাসের নিরস্ত্রীকরণ এবং একটি আন্তর্জাতিক শান্তিরক্ষা মিশন মোতায়েনের মতো গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপগুলি অন্তর্ভুক্ত করে।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু ট্রাম্পের এই উদ্যোগকে সমর্থন জানিয়েছেন। তিনি এটিকে “আমাদের অঞ্চলে শান্তির ঐতিহাসিক সম্প্রসারণের জন্য দরজা উন্মোচনকারী” হিসেবে বর্ণনা করেন। এই সমর্থন ইঙ্গিত দেয় যে শান্তি প্রক্রিয়ার কাঠামোগত পরিবর্তনের জন্য ইসরায়েলি নেতৃত্বের মধ্যে একটি প্রাথমিক সম্মতি রয়েছে।
মানবিক বিষয়ে অগ্রগতি সত্ত্বেও, রাজনৈতিক বাধাগুলি এখনও বিদ্যমান। হামাসের কর্মকর্তা মাহমুদ মারদাভি প্রকাশ্যে বলেছেন যে তারা লিখিত পরিকল্পনার পাঠ্য পাননি। এটি চুক্তির বিশদ সমন্বয় সাধনে চলমান জটিলতার ইঙ্গিত দেয়। মুক্তি অভিযান থেকে কাঠামোগত পরিবর্তনে এই উত্তরণের জন্য দীর্ঘমেয়াদী স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে সকল পক্ষের কাছ থেকে উদ্দেশ্যের সর্বোচ্চ স্পষ্টতা প্রয়োজন।
এই উত্তরণের প্রেক্ষাপট তৈরি হয়েছিল আগের দিন, 13 অক্টোবর, শার্ম-এল-শেখ-এ অনুষ্ঠিত “শান্তি সম্মেলনে”। সেখানে বিশটিরও বেশি বিশ্ব নেতা সংঘাতের তীব্র পর্যায় বন্ধ করার পদক্ষেপগুলি নিশ্চিত করে একটি ঘোষণাপত্রে স্বাক্ষর করেন। ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের প্রধান মাহমুদ আব্বাসও এই সম্মেলনে অংশ নেন, যার লক্ষ্য ছিল গাজা পুনর্গঠনের দীর্ঘমেয়াদী ধারণাকে গতি দেওয়া।
বিশ্লেষকরা সতর্ক করেছেন যে নেতানিয়াহুর জোটের মধ্যে থাকা কট্টর ডানপন্থী উপাদান, যার মধ্যে মন্ত্রী বেজালেল স্মোট্রিচ এবং ইতামার বেন-গভির রয়েছেন, তারা হামাসের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনার অজুহাত খুঁজে চুক্তির বাস্তবায়ন বানচাল করার চেষ্টা করতে পারেন। বিশেষজ্ঞরা জোর দেন যে স্থায়ী শান্তির জন্য শুধু হামাসের নিরস্ত্রীকরণই যথেষ্ট নয়, বরং গাজাকে বিশ্ব অর্থনীতির সঙ্গে যুক্ত করার জন্য অর্থনৈতিক পথ খুলে দেওয়াও অপরিহার্য। এভাবে, মিশনের প্রকৃত সমাপ্তি কেবল রাজনৈতিক বা সামরিক কাঠামোর মধ্যে নয়, বরং সমৃদ্ধির পরিবেশ তৈরির মাধ্যমে সম্ভব, যেখানে সহযোগিতা স্বাভাবিক পছন্দ হয়ে উঠবে।
উৎসসমূহ
New York Post
Al Jazeera
Al Jazeera
CNN
The Boston Globe
এই বিষয়ে আরও খবর পড়ুন:
আপনি কি কোনো ত্রুটি বা অসঠিকতা খুঁজে পেয়েছেন?
আমরা আপনার মন্তব্য যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিবেচনা করব।
