আফগানিস্তান-পাকিস্তান সীমান্তে শান্তি: আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার পথে দোহা চুক্তি
সম্পাদনা করেছেন: Svetlana Velgush
শনিবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৫ তারিখে, কাতার-এর দোহা শহরে আফগানিস্তান এবং পাকিস্তানের প্রতিনিধিদের মধ্যে তাৎক্ষণিক যুদ্ধবিরতি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। কাতার এবং তুরস্কের মধ্যস্থতায় অর্জিত এই কূটনৈতিক সাফল্য দুই দেশের মধ্যে দীর্ঘদিনের উত্তেজনা প্রশমনের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড় হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। এই নথিতে স্বাক্ষর করেছেন আফগানিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী মোহাম্মদ ইয়াকুব মুজাহিদ এবং পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী খাওয়াজ আসিফ। উভয় পক্ষই সম্মিলিতভাবে স্বীকার করেছে যে, চলমান উত্তেজনা বৃদ্ধি তাদের জনগণের বৃহত্তর স্বার্থের পরিপন্থী।
এই চুক্তি আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা ও দীর্ঘমেয়াদী শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য নতুন প্রক্রিয়া তৈরির পথ উন্মোচন করেছে। আশা করা হচ্ছে যে, এই প্রতিষ্ঠিত নীরবতা বজায় রাখতে এবং পুরোপুরি মেনে চলতে আগামী দিনগুলোতে উভয় পক্ষের প্রতিনিধিদল অতিরিক্ত আলোচনা করবে। উল্লেখ্য, বর্তমান দোহা আলোচনা শুরু হওয়ার ঠিক আগে, ১৫ অক্টোবর তারিখে ৪৮ ঘণ্টার জন্য একটি অস্থায়ী যুদ্ধবিরতির চেষ্টা করা হয়েছিল, যার সময়সীমা শেষ হয়ে গিয়েছিল। জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এই পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছিল এবং বেসামরিক নাগরিকদের ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছিল।
এই কূটনৈতিক অগ্রগতি এমন এক সময়ে এলো যখন দুই দেশের মধ্যে তীব্র উত্তেজনা বিরাজ করছিল। ৯ অক্টোবর কাবুলে দুটি মর্মান্তিক বিস্ফোরণে নয়জন নিহত হওয়ার পর এই উত্তেজনা চরমে পৌঁছায়। এর ঠিক পরের দিন, ১০ অক্টোবর, আফগানিস্তানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কাবুলে বিমান হামলার মাধ্যমে তাদের সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘনের অভিযোগ তোলে, যা সীমান্তে পাল্টা সংঘর্ষের জন্ম দেয়। ১১ অক্টোবর পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়, যখন আফগান বাহিনী কিছু অবস্থানে গুলি চালায়, যার ফলে পাকিস্তান সেনাবাহিনী ভারী কামান ও বিমান ব্যবহার করে ব্যাপক জবাব দেয়।
কিছু সূত্র অনুসারে, এই সাম্প্রতিক উত্তেজনার সূত্রপাত হয়েছিল তেহরিক-ই-তালিবান পাকিস্তান (টিটিপি)-এর জঙ্গিদের দ্বারা একটি পাকিস্তানি কনভয়ের ওপর হামলার মাধ্যমে, যেখানে ৯ জন সৈন্য এবং ২ জন অফিসার নিহত হন। পাকিস্তান দাবি করেছিল যে তাদের হামলাগুলো আফগান তালেবানদের লক্ষ্য করে নয়, বরং টিটিপি ঘাঁটিগুলোর দিকে পরিচালিত হয়েছিল, যদিও কাবুল এই দাবি অস্বীকার করে। ১৮৯৩ সাল থেকে চলে আসা 'ডুরান্ড লাইন' বিতর্ককে কেন্দ্র করে এই সম্পর্কের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় যে, উত্তেজনার সময়কাল সাধারণত সমঝোতার ক্ষেত্র অনুসন্ধানের মাধ্যমে শেষ হয়।
এই নিষ্পত্তির প্রক্রিয়ার পরবর্তী গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হলো ২৫ অক্টোবর ইস্তাম্বুলে নির্ধারিত বৈঠক। এই বৈঠকে উভয় পক্ষ কেবল যুদ্ধবিরতির শর্তাবলী মেনে চলার দিকেই মনোযোগ দেবে না, বরং দীর্ঘমেয়াদী সহযোগিতার জন্য অভ্যন্তরীণ প্রস্তুতি তৈরি করারও পরিকল্পনা করেছে। দোহায় এই চুক্তি স্বাক্ষরকে উভয় দেশের জন্য একটি সুযোগ হিসেবে দেখা হচ্ছে, যাতে তারা পূর্বে সংঘাতের পিছনে ব্যয় করা শক্তিকে সরিয়ে এনে অঞ্চলে একটি সম্মিলিত স্থিতিশীলতা নির্মাণে মনোনিবেশ করতে পারে।
উৎসসমূহ
Deutsche Welle
РИА Новости
ООН ЖЕНЕВА
РБК
এই বিষয়ে আরও খবর পড়ুন:
আপনি কি কোনো ত্রুটি বা অসঠিকতা খুঁজে পেয়েছেন?
আমরা আপনার মন্তব্য যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিবেচনা করব।
