লকহিড মার্টিনের স্ক্যাঙ্ক ওয়ার্কস ফ্যাসিলিটিতে গ্রাউন্ড টেস্ট সম্পন্ন করেছে নাসার এক্স-৫৯ কোয়ায়েট সুপারসনিক রিসার্চ এয়ারক্রাফট। এই পরীক্ষাগুলো ১৮ জুলাই, ২০২৫ তারিখে সম্পন্ন হয় এবং এটি বিমানের উন্নয়নে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। এক্স-৫৯ বিমানটি নাসার কোয়েস্ট মিশনের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ, যার মূল লক্ষ্য হলো সুপারসনিক ফ্লাইটকে একটি শান্ত 'থাম্প' শব্দে পরিণত করা, যা প্রচলিত সনিক বুমের মতো বিঘ্নকারী হবে না। এই যুগান্তকারী প্রযুক্তি ভবিষ্যতে স্থলভাগে বাণিজ্যিক সুপারসনিক ফ্লাইটের জন্য নতুন নিয়মাবলী তৈরিতে সহায়ক হবে।
এক্স-৫৯ বিমানের নকশায় একটি দীর্ঘায়িত ফিউজেলেজ এবং একটি বিশেষ নোজ কনফিগারেশন অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, যা শকওয়েভ গঠন কমাতে এবং শব্দকে ন্যূনতম পর্যায়ে রাখতে প্রকৌশলীদের দ্বারা ডিজাইন করা হয়েছে। পাইলটের সামনের দিকে দৃশ্যমানতার সীমাবদ্ধতা মোকাবেলার জন্য, ককপিটে একটি উন্নত ফ্লাইট ভিশন সিস্টেম ব্যবহার করা হয়েছে, যা বাহ্যিক ক্যামেরাগুলির উপর নির্ভরশীল।
বর্তমানে, ২৫ আগস্ট, ২০২৫ পর্যন্ত, এক্স-৫৯ বিমানটি তার প্রথম উড্ডয়ন সম্পন্ন করেনি। তবে, এই বছরের শেষ নাগাদ বিমানটির প্রথম উড্ডয়ন নির্ধারিত রয়েছে। পরবর্তীতে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন সম্প্রদায়ের উপর দিয়ে এর পরীক্ষামূলক উড্ডয়ন চালানোর পরিকল্পনা রয়েছে। এই উড্ডয়নগুলোর মাধ্যমে সুপারসনিক ফ্লাইটের সময় উৎপন্ন শব্দের প্রতি জনসাধারণের প্রতিক্রিয়া সম্পর্কিত তথ্য সংগ্রহ করা হবে। সংগৃহীত তথ্যগুলি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক নিয়ন্ত্রকদের সাথে শেয়ার করা হবে, যা সুপারসনিক বাণিজ্যিক বিমান চলাচলের জন্য নতুন শব্দ মান নির্ধারণে সহায়তা করবে।
কোয়েস্ট মিশনটি নাসা এবং লকহিড মার্টিনের মধ্যে একটি যৌথ উদ্যোগ, যেখানে লকহিড মার্টিনের স্ক্যাঙ্ক ওয়ার্কস ডিভিশন এক্স-৫৯ বিমানের উন্নয়নের জন্য দায়ী। এই মিশনের চূড়ান্ত লক্ষ্য হলো স্থলভাগে বাণিজ্যিক সুপারসনিক বিমান চলাচলের একটি নতুন যুগের সূচনা করা, যা উড্ডয়নের সময়কে উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস করতে পারে। এক্স-৫৯ এবং কোয়েস্ট মিশন সম্পর্কে আরও বিস্তারিত তথ্য নাসার অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে পাওয়া যাবে।
ঐতিহাসিকভাবে, ১৯৭৩ সাল থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যান্য দেশে সুপারসনিক ফ্লাইট নিষিদ্ধ করা হয়েছিল, কারণ এর ফলে সৃষ্ট সনিক বুম জনবহুল এলাকায় সমস্যা তৈরি করত। কনকর্ডের মতো বিমানগুলি এই বিধিনিষেধের সম্মুখীন হয়েছিল, যা তাদের বাণিজ্যিক ব্যবহারকে সীমিত করেছিল। এক্স-৫৯ এর লক্ষ্য হলো এই বাধা অতিক্রম করা এবং এমন একটি প্রযুক্তি প্রদর্শন করা যা সুপারসনিক গতিতে উড্ডয়নকে পরিবেশগতভাবে গ্রহণযোগ্য করে তুলবে। এই নতুন প্রযুক্তির মাধ্যমে, বিমান সংস্থাগুলি ভবিষ্যতে অনেক কম সময়ে বিশ্বজুড়ে ভ্রমণ করার সুযোগ পাবে, যা বিমান পরিবহনে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে।