আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে (আইএসএস) মহাকাশচারী মাইক ফিঙ্কে ২০শে আগস্ট, ২০২৫ তারিখে ৪০০তম দিন পূর্ণ করে এক উল্লেখযোগ্য মাইলফলক অর্জন করেছেন। এই কৃতিত্বের সাথে তিনি মহাকাশে ৪০০ দিনের বেশি সময় কাটানো নবম আমেরিকান এবং বিশ্বব্যাপী ৩৮তম ব্যক্তি হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছেন। ফিঙ্কের মহাকাশ যাত্রা শুরু হয়েছিল ২০১১ সালে, যখন তিনি প্রথম আমেরিকান মহাকাশচারী হিসেবে মহাকাশে দীর্ঘতম সময় কাটানোর রেকর্ড স্থাপন করেছিলেন। যদিও পরবর্তীকালে অন্য মহাকাশচারীরা তার পূর্বের রেকর্ড অতিক্রম করেছেন, তার এই সাম্প্রতিক অর্জন মহাকাশ গবেষণায় তার অবিচল নিষ্ঠার পরিচয় দেয়।
এক্সপিডিশন ৭৩-এর অংশ হিসেবে ফিঙ্কে এবং তার সহকর্মীরা আইএসএস-এ বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক গবেষণা এবং অত্যাবশ্যকীয় রক্ষণাবেক্ষণ কাজে নিয়োজিত ছিলেন। উল্লেখযোগ্য বৈজ্ঞানিক কার্যক্রমের মধ্যে ছিল কানাডিয়ান-ডিজাইন করা একটি ভেস্ট পরে মহাকাশচারী জনি কিমের হার্টের স্বাস্থ্য এবং রক্ত প্রবাহের ডেটা সংগ্রহ করা, যার লক্ষ্য মহাকাশে শারীরবৃত্তীয় পরিমাপকে সহজতর করা। জাপানি মহাকাশচারী কিমিয়া ইউই কোষীয় রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার উপর মাইক্রোগ্র্যাভিটির প্রভাব বোঝার জন্য লালা এবং রক্তের নমুনা সংগ্রহ করেছেন। এছাড়াও, নাসা মহাকাশচারী জেনা কার্ডম্যান উন্নত রেজিস্ট্যান্স এক্সারসাইজ ডিভাইস (ARED) ব্যবহার করে ডেডলিফটের সময় বল পরিমাপ করেছেন, যা মাইক্রোগ্র্যাভিটিতে পেশী শক্তি বজায় রাখার গবেষণায় অবদান রাখছে। কার্ডম্যান এবং কিম ধমনীর স্ক্যান করার জন্য একটি আল্ট্রাসাউন্ড ডিভাইস ব্যবহার করে সিফার (CIPHER) গবেষণাকে আরও এগিয়ে নিয়ে গেছেন।
মহাকাশচারীরা অত্যাবশ্যকীয় রক্ষণাবেক্ষণ কাজেও অংশ নিয়েছেন, যার মধ্যে ছিল এক্সট্রাভেহিকুলার মোবিলিটি ইউনিট (EMU) হেলমেট অ্যাসেম্বলির উচ্চ-রেজোলিউশন ক্যামেরাগুলির সার্ভিসিং। ফিঙ্কে এবং কার্ডম্যান ইউএস কোয়েস্ট এয়ারলকে এই ক্যামেরাগুলি মেরামত করার জন্য একসঙ্গে কাজ করেছেন, যা ভবিষ্যতের স্পেসওয়াকের জন্য তাদের কার্যক্ষমতা নিশ্চিত করেছে। আগামী ২৪শে আগস্ট, ২০২৫ তারিখে স্পেসএক্স সিআরএস-৩৩ ড্রাগন মহাকাশযানের পরবর্তী মার্কিন সরবরাহ মিশনের জন্য প্রস্তুতি চলছে। এই মিশনের মাধ্যমে আইএসএস-এ চলমান গবেষণা এবং দৈনন্দিন কার্যক্রমকে সমর্থন করার জন্য প্রয়োজনীয় সরবরাহ ও সরঞ্জাম সরবরাহ করা হবে।
২২শে আগস্ট, ২০২৫ পর্যন্ত, আইএসএস আন্তর্জাতিক সহযোগিতা এবং বৈজ্ঞানিক গবেষণার একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র হিসেবে কাজ করে চলেছে। বর্তমানে সাতজন সদস্য, যাদের মধ্যে নাসা, রসকসমস এবং জাইক্সা-এর প্রতিনিধিরা রয়েছেন, স্টেশনে অবস্থান করছেন। ২৪ বছরেরও বেশি সময় ধরে নিরবচ্ছিন্নভাবে ক্রু-সমেত থাকার মাধ্যমে আইএসএস মানব উদ্ভাবন এবং অনুসন্ধানের অদম্য চেতনার এক অসাধারণ দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। মহাকাশ সম্পর্কে আমাদের জ্ঞান বৃদ্ধি এবং পৃথিবীতে জীবনের জন্য উপকারী পরীক্ষা-নিরীক্ষা পরিচালনার জন্য আইএসএস একটি অপরিহার্য প্ল্যাটফর্ম হিসেবে রয়ে গেছে। মাইক ফিঙ্কের মতো মহাকাশচারীদের এই অঙ্গীকার ভবিষ্যতের প্রজন্মের জন্য মহাকাশ অনুসন্ধানের পথে অনুপ্রেরণা জুগিয়ে চলেছে।
গবেষণার একটি উল্লেখযোগ্য দিক হল, মহাকাশে দীর্ঘ সময় থাকার ফলে হাড়ের ঘনত্ব হ্রাস পায়। এই সমস্যা মোকাবিলায় এবং মঙ্গল ও চাঁদে দীর্ঘমেয়াদী মিশনের জন্য মহাকাশচারীদের প্রস্তুত করতে নতুন চিকিৎসা পদ্ধতি উদ্ভাবনের লক্ষ্যে গবেষণা চলছে। এছাড়াও, মহাকাশে কৃত্রিম লিভার টিস্যু তৈরি এবং ত্রিমাত্রিক ধাতু প্রিন্টিংয়ের মতো উন্নত প্রযুক্তি নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে, যা পৃথিবীতে চিকিৎসা ও শিল্পক্ষেত্রে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনতে পারে।