মাইক্রোসফটের বিশাল বিনিয়োগ: ২০২৯ সালের মধ্যে ভারতে এআই ও ক্লাউড অবকাঠামো উন্নয়নে ১৭.৫ বিলিয়ন ডলার বরাদ্দ

লেখক: Tatyana Hurynovich

প্রযুক্তি জগতে এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ হিসেবে মাইক্রোসফট কর্পোরেশন ভারতে তাদের কার্যক্রম সম্প্রসারণের জন্য ১৭.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগের ঘোষণা করেছে। এই বিশাল অঙ্কের অর্থায়ন এশিয়ার ক্ষেত্রে সংস্থাটির সবচেয়ে বড় প্রতিশ্রুতি। এই চার বছরের পরিকল্পনাটি মূলত ২০২৬ সাল থেকে ২০২৯ সাল পর্যন্ত কার্যকর থাকবে। এর প্রধান লক্ষ্য হলো ভারতের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) অবকাঠামোকে দ্রুত এগিয়ে নিয়ে যাওয়া এবং দেশের নাগরিকদের মধ্যে ডিজিটাল দক্ষতার প্রসার ঘটানো। উল্লেখ্য, এর পূর্বে ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে কোম্পানিটি ৩ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, যা ২০২৬ সালের শেষ নাগাদ বাস্তবায়িত হওয়ার কথা ছিল। নতুন এই অর্থায়ন সেই পূর্বের প্রতিশ্রুতির সঙ্গে যুক্ত হয়েছে।

মাইক্রোসফটের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) সত্য নাদেলা নয়াদিল্লিতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে সাক্ষাতের পরই এই ঘোষণা দেন। তাঁর ভারত সফরের অংশ হিসেবে 'ইন্ডিয়া এআই' উদ্যোগের উপর বিশেষ জোর দেওয়া হয়। এই বিশাল বিনিয়োগ তিনটি মূল স্তম্ভের ওপর ভিত্তি করে তৈরি, যা প্রধানমন্ত্রীর দূরদর্শিতার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ: স্কেল (ব্যাপক বিস্তার), দক্ষতা (Skills), এবং সার্বভৌমত্ব (Sovereignty)। এই কৌশলের মাধ্যমে আগামী দশকে ভারতকে 'ডিজিটাল পাবলিক ইনফ্রাস্ট্রাকচার' থেকে 'এআই-ভিত্তিক পাবলিক ইনফ্রাস্ট্রাকচারে' রূপান্তরিত করার লক্ষ্য স্থির করা হয়েছে, যা ভারতের নিজস্ব মাত্রা ও প্রভাবে এক ন্যায্য ভবিষ্যৎ নির্মাণে সহায়ক হবে।

বিনিয়োগের প্রথম স্তম্ভ, অর্থাৎ স্কেলিং বা ব্যাপক বিস্তারের ক্ষেত্রে, মাইক্রোসফট হাইপারস্কেল অবকাঠামো নির্মাণে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে। এই প্রসঙ্গে, হায়দ্রাবাদের ইন্ডিয়া সাউথ সেন্ট্রাল ক্লাউড অঞ্চলটি একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। ২০২৬ সালের মাঝামাঝি সময়ে এই অঞ্চলের উদ্বোধন হওয়ার কথা, যা ভারতে কোম্পানির বৃহত্তম হাইপারস্কেল অঞ্চলে পরিণত হবে। এর পাশাপাশি, চেন্নাই, হায়দ্রাবাদ এবং পুনেতে বর্তমানে চালু থাকা তিনটি ডেটা সেন্টার অঞ্চলের কার্যক্রমও কোম্পানি আরও বিস্তৃত করতে থাকবে। এই সম্প্রসারণ ভারতের ক্রমবর্ধমান ডেটা চাহিদার মোকাবিলা করতে সহায়ক হবে।

দক্ষতা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে, মাইক্রোসফট তাদের জানুয়ারির প্রতিশ্রুতি দ্বিগুণ করেছে। লক্ষ্য হলো ২০৩০ সালের মধ্যে ২০ মিলিয়ন ভারতীয়কে এআই সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় দক্ষতা প্রদান করা। 'অ্যাডভান্স (এআই) ইন্ডিয়া' উদ্যোগের মাধ্যমে, যা মাইক্রোসফট এলিভেট প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে, ইতিমধ্যেই ৫.৬ মিলিয়ন মানুষকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। এটি ২০৩০ সালের মধ্যে ১০ মিলিয়ন প্রশিক্ষণের প্রাথমিক লক্ষ্যমাত্রাকে ছাড়িয়ে যাওয়ার ইঙ্গিত দেয়। মাইক্রোসফটের ভারত ও দক্ষিণ এশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুনীত চন্দক জোর দিয়ে বলেছেন যে, সমাজের সকল স্তরের মানুষের কাছে এআই সরঞ্জামগুলির সহজলভ্যতা নিশ্চিত করাই তাদের উদ্দেশ্য। বিশেষত, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রকের ই-শ্রম এবং ন্যাশনাল ক্যারিয়ার সার্ভিস (এনসিএস)-এর মতো ডিজিটাল পাবলিক প্ল্যাটফর্মগুলিতে এআই সক্ষমতা যুক্ত করার মাধ্যমে প্রায় ৩১০ মিলিয়ন অসংগঠিত শ্রমিকও এর সুফল পাবেন।

তৃতীয় গুরুত্বপূর্ণ দিকটি হলো সার্বভৌমত্ব। এর অধীনে ভারতীয় গ্রাহকদের জন্য 'সভরিন পাবলিক ক্লাউড' এবং 'সভরিন প্রাইভেট ক্লাউড' চালু করা হবে। এর ফলে ভারতীয় সংস্থাগুলি তাদের ডেটার উপর আরও বেশি নিয়ন্ত্রণ এবং নিয়ন্ত্রক সম্মতি পালনে সুবিধা পাবে। এই বিনিয়োগের একটি অংশ দেশের অভ্যন্তরে এআই পণ্য উন্নয়ন এবং ডেটা সেন্টার পরিচালনার সঙ্গে যুক্ত ২২ হাজারের বেশি মাইক্রোসফট কর্মীর দক্ষতা বৃদ্ধিতেও ব্যয় করা হবে। এই প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী মোদি ভারতের এআই ক্ষেত্রে উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ নিয়ে তাঁর আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন এবং বলেছেন যে দেশের তরুণ প্রজন্ম এই সুযোগকে উদ্ভাবনের জন্য কাজে লাগাচ্ছে।

8 দৃশ্য

আপনি কি কোনো ত্রুটি বা অসঠিকতা খুঁজে পেয়েছেন?

আমরা আপনার মন্তব্য যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিবেচনা করব।