গুগলের জেমিনি এআই (Gemini AI) অ্যাপ ব্যবহারকারীদের জন্য আরও ব্যক্তিগত ও নিরাপদ অভিজ্ঞতা নিশ্চিত করতে নতুন কিছু ফিচার যুক্ত করেছে। এই আপডেটের মাধ্যমে জেমিনি এখন ব্যবহারকারীর পূর্ববর্তী কথোপকথনগুলো মনে রাখতে পারবে, যা একে আরও প্রাসঙ্গিক ও সহায়ক করে তুলবে। একই সাথে, গোপনীয়তা রক্ষায় যুক্ত হয়েছে 'টেম্পোরারি চ্যাট' (Temporary Chat) সুবিধা, যা ব্যবহারকারীদের ডেটা সংরক্ষণের বিষয়ে আরও নিয়ন্ত্রণ দেবে। এই নতুন ফিচারগুলোর মূল উদ্দেশ্য হলো ব্যবহারকারীর অভিজ্ঞতা উন্নত করা এবং একই সাথে তাদের ডেটা গোপনীয়তা নিশ্চিত করা।
জেমিনি এখন থেকে ব্যবহারকারীর পছন্দের বিষয়গুলো মনে রেখে আরও ব্যক্তিগতকৃত উত্তর দিতে সক্ষম হবে। উদাহরণস্বরূপ, যদি কোনো ব্যবহারকারী পূর্বে কমিক বইয়ের চরিত্র বা জাপানি সংস্কৃতি নিয়ে আলোচনা করে থাকেন, তবে জেমিনি সেই তথ্যের ভিত্তিতে জন্মদিনের পার্টির থিম বা নতুন কন্টেন্টের ধারণা দিতে পারবে। এই ব্যক্তিগতকরণ সুবিধাটি ডিফল্টভাবে চালু থাকবে, তবে ব্যবহারকারীরা যেকোনো সময় সেটিংস থেকে এটি বন্ধ করতে পারবেন। গোপনীয়তা রক্ষার জন্য 'টেম্পোরারি চ্যাট' ফিচারটি একটি গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন। এই মোডে কথোপকথনগুলো সংরক্ষিত হবে না এবং ব্যক্তিগতকরণ বা মডেল প্রশিক্ষণের কাজেও ব্যবহৃত হবে না। এই চ্যাটগুলো সর্বোচ্চ ৭২ ঘণ্টা পর্যন্ত সংরক্ষিত থাকবে, যা ব্যবহারকারীদের তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া বা ফিডব্যাক প্রদানের সুযোগ দেবে। এটি অনেকটা ব্রাউজারের ইনকগনিটো মোডের মতো কাজ করবে, যা ব্যবহারকারীদের তাদের কথোপকথনের উপর সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রদান করে।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের জেনারেল ডেটা প্রোটেকশন রেগুলেশন (GDPR)-এর মতো কঠোর ডেটা সুরক্ষা আইনগুলোর সাথে সঙ্গতি রেখে গুগল এই আপডেটগুলো এনেছে। এই আইনগুলো ব্যক্তিগত ডেটা সংগ্রহ ও ব্যবহারের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা এবং ব্যবহারকারীর সম্মতির উপর জোর দেয়। জেমিনির নতুন ফিচারগুলো, যেমন ডেটা সেটিংস নিয়ন্ত্রণ এবং টেম্পোরারি চ্যাট, ব্যবহারকারীদের তাদের ডেটার উপর আরও বেশি নিয়ন্ত্রণ প্রদান করে, যা বর্তমান সময়ে ডেটা গোপনীয়তা নিয়ে ক্রমবর্ধমান উদ্বেগের একটি প্রতিক্রিয়া। বিশেষজ্ঞদের মতে, এআই (AI) প্রযুক্তির বিকাশে ব্যক্তিগতকরণ এবং গোপনীয়তার মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখা একটি বড় চ্যালেঞ্জ। গুগল জেমিনির এই পদক্ষেপগুলো এই ক্ষেত্রে একটি নতুন মানদণ্ড স্থাপন করতে পারে। ব্যবহারকারীরা তাদের ডেটা কীভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে সে সম্পর্কে আরও সচেতন হওয়ায়, এই ধরনের ফিচারগুলো এআই প্রযুক্তির প্রতি আস্থা বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে। তবে, ডেটা প্রক্রিয়াকরণের অন্তর্নিহিত প্রক্রিয়াগুলো, এমনকি বেনামী প্রশিক্ষণের জন্যও, ব্যবহারকারীর আস্থার উপর কী প্রভাব ফেলবে তা একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হিসেবে রয়ে গেছে। এই আপডেটগুলো এআই-এর ভবিষ্যৎ পথচলার একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক নির্দেশ করে, যেখানে ব্যবহারকারীর অভিজ্ঞতা এবং ব্যক্তিগত তথ্যের সুরক্ষা উভয়ই সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ।