জনপ্রিয় হলিউড অভিনেত্রী জেনিফার অ্যানিস্টন সম্প্রতি মাতৃত্বের পথে তার ব্যক্তিগত লড়াইয়ের কথা প্রকাশ করেছেন, যা বছরের পর বছর ধরে চলা গণমাধ্যমের জল্পনা-কল্পনার মধ্যে এক নতুন মাত্রা যোগ করেছে। তিনি তার ত্রিশ ও চল্লিশের দশকে ইন ভিট্রো ফার্টিলাইজেশন (আইভিএফ) পদ্ধতির মাধ্যমে সন্তান ধারণের যে চেষ্টা করেছিলেন, তা যে সফল হয়নি, তা তিনি ২০২২ সালের নভেম্বরে একটি সাক্ষাৎকারে জানান। অ্যানিস্টন এই প্রক্রিয়াটিকে অত্যন্ত কঠিন বলে বর্ণনা করেছেন এবং বলেছেন যে তিনি সন্তান ধারণের জন্য বিভিন্ন পদ্ধতি চেষ্টা করেছিলেন।
অ্যানিস্টন বরাবরই সামাজিক প্রত্যাশা এবং গণমাধ্যমের অযাচিত হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে সোচ্চার থেকেছেন। ২০২৪ সালের জুলাই মাসে তিনি এমন মন্তব্যের প্রতি তার বিরক্তি প্রকাশ করেন যা নারীদের সঙ্গী বা সন্তান ছাড়া অসম্পূর্ণ বলে মনে করে। তিনি নারীর নিজের শরীর সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকারের উপর জোর দেন। এই বিষয়ে তিনি ২০১৬ সালে একটি প্রভাবশালী নিবন্ধও লিখেছিলেন, যেখানে তিনি গণমাধ্যমের অতিরিক্ত মনোযোগ এবং মাতৃত্বের সামাজিক চাপ নিয়ে তার হতাশা ব্যক্ত করেছিলেন। তিনি বলেন, “আমার বৈবাহিক অবস্থা নিয়ে লজ্জা দেওয়া হয়েছে; আমার বিবাহবিচ্ছেদ নিয়ে লজ্জা দেওয়া হয়েছে; আমার সঙ্গী না থাকা নিয়ে লজ্জা দেওয়া হয়েছে; আমার স্তন নিয়ে লজ্জা দেওয়া হয়েছে।” অ্যানিস্টনের এই অকপট স্বীকারোক্তি অনেক নারীর জন্য অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করছে, যারা একই ধরনের পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছেন। তিনি উল্লেখ করেছেন যে এই কঠিন পথ পাড়ি দেওয়ার ফলেই তিনি আজকের মানুষে পরিণত হতে পেরেছেন। তিনি আরও বলেন, “যদি আমি কারো জন্য কোনো প্রতীক হয়ে থাকি, তবে আমি স্পষ্টতই সেই লেন্সের একটি উদাহরণ যার মাধ্যমে আমরা আমাদের মা, কন্যা, বোন, স্ত্রী, নারী সহকর্মী এবং বন্ধুদের দেখি। আমরা নারীদের উপর যে বস্তুনিষ্ঠতা এবং নজরদারি আরোপ করি তা অযৌক্তিক এবং বিরক্তিকর।”
এই অভিনেত্রীর এই মন্তব্যগুলি বিশেষ করে রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব জে.ডি. ভান্সের একটি মন্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় এসেছে, যেখানে তিনি সন্তানহীন মহিলাদের 'দুঃখী বিড়াল মহিলা' বলে অভিহিত করেছিলেন। অ্যানিস্টন এই ধরনের মন্তব্যের তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন এবং বলেছেন যে তিনি আশা করেন ভান্সের মেয়ের এমন কোনো পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হবে না যেখানে তাকে আইভিএফ-এর উপর নির্ভর করতে হয়, কারণ তিনি সেই অধিকার কেড়ে নিতে চাইছেন। তিনি জোর দিয়ে বলেন যে, “আমরা একা বা সন্তান ছাড়াই সম্পূর্ণ। আমরা নিজেদের জন্য আমাদের নিজস্ব 'সুখী সমাপ্তি' নির্ধারণ করি।” অ্যানিস্টনের এই সাহসী পদক্ষেপ সমাজের প্রচলিত ধারণাকে চ্যালেঞ্জ করে এবং নারীদের তাদের ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত ও জীবনের উপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ রাখার অধিকারকে সমর্থন করে। তার এই বক্তব্যগুলি কেবল তার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার প্রতিফলন নয়, বরং এটি একটি বৃহত্তর সামাজিক বার্তা বহন করে যে, নারীর মূল্য কেবল তার মাতৃত্ব বা বৈবাহিক অবস্থার উপর নির্ভর করে না।