মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য রক্ষায় মেডিটেরেনিয়ান ডায়েট: এক নতুন দিগন্ত

সম্পাদনা করেছেন: Olga Samsonova

সাম্প্রতিক গবেষণা ইঙ্গিত দিচ্ছে যে, ফল, সবজি, শস্য, মাছ, বাদাম এবং অলিভ অয়েল সমৃদ্ধ মেডিটেরেনিয়ান ডায়েট মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য রক্ষায় এক যুগান্তকারী ভূমিকা পালন করতে পারে। এই খাদ্যাভ্যাস কেবল হৃদরোগের ঝুঁকিই কমায় না, বরং আলঝেইমার্স রোগের মতো স্নায়বিক ব্যাধি প্রতিরোধেও সহায়ক হতে পারে। একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে, যারা নিয়মিত এই ডায়েট অনুসরণ করেন, তাদের মধ্যে আলঝেইমার্স রোগ হওয়ার ঝুঁকি প্রায় ২৩% পর্যন্ত কমতে পারে, এমনকি যদি তাদের জেনেটিক প্রবণতাও থাকে।

অন্যদিকে, অতিরিক্ত প্রক্রিয়াজাত খাবার, যেমন – রেডিমেড খাবার এবং চিনিযুক্ত স্ন্যাকস, মস্তিষ্কের জন্য ক্ষতিকর বলে প্রমাণিত হয়েছে। একটি গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় প্রক্রিয়াজাত খাবারের পরিমাণ ১০% বৃদ্ধি পেলে ডিমেনশিয়া বা স্মৃতিভ্রংশের ঝুঁকি ২৫% পর্যন্ত বেড়ে যেতে পারে। এই ধরনের খাবার মস্তিষ্কের কার্যকারিতা কমিয়ে দেয় এবং স্নায়বিক প্রদাহ সৃষ্টি করতে পারে।

মেডিটেরেনিয়ান ডায়েট মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যকে উন্নত করার ক্ষেত্রে একটি শক্তিশালী হাতিয়ার হিসেবে কাজ করে। এই ডায়েটে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং স্বাস্থ্যকর ফ্যাট মস্তিষ্কের কোষগুলিকে রক্ষা করে এবং প্রদাহ কমায়। বিশেষ করে, সবুজ শাকসবজি, বেরি জাতীয় ফল এবং ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ মাছ মস্তিষ্কের স্মৃতিশক্তি ও কার্যকারিতা বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। গবেষণায় দেখা গেছে, যারা সপ্তাহে সাত বা তার বেশি বার সবুজ শাকসবজি খান, তাদের মস্তিষ্কে আলঝেইমার্স রোগের লক্ষণ সৃষ্টিকারী অ্যামাইলয়েড প্ল্যাকের পরিমাণ প্রায় ১৯ বছর কম বয়সী মানুষের সমান থাকে।

অন্যদিকে, যারা প্রক্রিয়াজাত খাবার এড়িয়ে চলেন এবং এর পরিবর্তে অপরিশোধিত বা স্বল্প প্রক্রিয়াজাত খাবার গ্রহণ করেন, তাদের ক্ষেত্রে মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য ভালো থাকে এবং ডিমেনশিয়ার ঝুঁকি প্রায় ১২% পর্যন্ত কমে যায়। এটি স্পষ্ট যে, একটি সুষম এবং পুষ্টিকর খাদ্যতালিকা মস্তিষ্কের দীর্ঘমেয়াদী স্বাস্থ্য সুরক্ষায় অপরিহার্য।

মস্তিষ্কের সুস্বাস্থ্য বজায় রাখার জন্য, একটি সুষম খাদ্যাভ্যাস গ্রহণ করা অত্যন্ত জরুরি। এতে টাটকা, ন্যূনতম প্রক্রিয়াজাত খাবারকে প্রাধান্য দিতে হবে। প্রক্রিয়াজাত খাবারগুলি সীমিত করার পাশাপাশি নিয়মিত শারীরিক কার্যকলাপ, পর্যাপ্ত ঘুম এবং সামাজিক জীবন বজায় রাখা – এই সব কিছুই মস্তিষ্কের বার্ধক্যজনিত সমস্যা মোকাবিলায় একটি কার্যকর কৌশল। এই জীবনধারা কেবল শারীরিক স্বাস্থ্যই নয়, মানসিক ও স্নায়বিক স্বাস্থ্যকেও উন্নত করে, যা সামগ্রিকভাবে জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধি করে।

উৎসসমূহ

  • RTL.fr

  • BFMTV

  • Santé sur le Net

আপনি কি কোনো ত্রুটি বা অসঠিকতা খুঁজে পেয়েছেন?

আমরা আপনার মন্তব্য যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিবেচনা করব।