অস্কার-মনোনীত পরিচালক ফার্নান্দো মেইরেলেস তাঁর নতুন ব্রাজিলিয়ান মিনিসিরিজ 'প্সিকা'-এর মাধ্যমে নেটফ্লিক্সে এক কঠিন বাস্তবতাকে তুলে ধরেছেন। অ্যামাজন অঞ্চলে এডির অগাস্টোর উপন্যাসের উপর ভিত্তি করে নির্মিত এই সিরিজটি ২০২৫ সালের ২০শে আগস্ট মুক্তি পেয়েছে। মেইরেলেস এই বিষয়বস্তু নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন, "আমাদের অস্তিত্ব বিপন্ন।"
সিরিজটি শিশু যৌন নির্যাতনের উদ্বেগজনক বিষয়টির গভীরে প্রবেশ করে, যেখানে মানব পাচার এবং প্রতিশোধের গল্পে জড়িয়ে পড়া চরিত্রদের অনুসরণ করা হয়। এই ধরনের প্রকল্পগুলির গুরুত্ব তুলে ধরে পরিচালক জোর দিয়েছেন যে 'প্সিকা' এই গুরুতর সমস্যাগুলির উপর আলোকপাত করতে সাহায্য করবে। সিরিজটির লক্ষ্য হলো এই অঞ্চলে শিশু নির্যাতন এবং পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতা মোকাবেলার চ্যালেঞ্জগুলি সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করা, যা একটি কঠিন সত্যের শক্তিশালী চিত্র তুলে ধরে।
ব্রাজিলে শিশু যৌন নির্যাতনের ঘটনাগুলি একটি গুরুতর সমস্যা। আনুমানিক ৫ লক্ষ শিশু এবং কিশোর-কিশোরী এই ধরনের শোষণের শিকার হয়। এই সমস্যাটি সামাজিক ও অর্থনৈতিক বৈষম্য দ্বারা চালিত, যা সাম্প্রতিক অর্থনৈতিক সংকট এবং কোভিড-১৯ মহামারীর কারণে আরও খারাপ হয়েছে। মহামারীর সময়ে, ক্ষতিগ্রস্তদের শনাক্তকরণ এবং তাদের সহায়তার পাশাপাশি অপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া ব্যাহত হয়েছে। যদিও এই পরিবর্তনশীল গতিপ্রকৃতি সম্পর্কে তথ্যের অভাব রয়েছে, তবে এটি স্পষ্ট যে এই সমস্যাটি এখনও বিদ্যমান।
পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতা (machismo) ব্রাজিলের সমাজে গভীরভাবে প্রোথিত এবং এটি নারী ও শিশুদের প্রতি সহিংসতা বৃদ্ধিতে একটি বড় ভূমিকা পালন করে। এই মানসিকতা প্রায়শই দুর্বল জনগোষ্ঠীকে আরও বেশি নির্ভরশীল করে তোলে, যা তাদের পাচারকারীদের সহজ শিকারে পরিণত করে। এই পরিস্থিতিটি কেবল অর্থনৈতিক বৈষম্যকেই প্রতিফলিত করে না, বরং লিঙ্গ বৈষম্যকেও বাড়িয়ে তোলে, যা প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে দারিদ্র্য এবং শোষণের চক্রকে অব্যাহত রাখে।
মেইরেলেসের কাজের একটি বৈশিষ্ট্য হলো বাস্তবতার প্রতি তাঁর গভীর মনোযোগ এবং সামাজিক সমস্যাগুলির প্রতি তাঁর সংবেদনশীলতা। 'সিটি অফ গড'-এর মতো তাঁর পূর্ববর্তী কাজগুলিও ব্রাজিলের সমাজের কঠিন দিকগুলিকে তুলে ধরেছে। 'প্সিকা'-এর মাধ্যমে তিনি আবারও এমন একটি বিষয় বেছে নিয়েছেন যা সমাজের অন্ধকার দিকগুলি উন্মোচন করে এবং দর্শকদের এই গুরুতর সমস্যাগুলি সম্পর্কে চিন্তা করতে বাধ্য করে। এই সিরিজটি কেবল একটি বিনোদনমূলক মাধ্যমই নয়, বরং এটি একটি সামাজিক বার্তা বহন করে যা সচেতনতা বৃদ্ধি এবং পরিবর্তনের আহ্বান জানায়।