নেটফ্লিক্স তাদের নতুন ঐতিহাসিক কমেডি-ড্রামা সিরিজ 'আইমা' (Aema) নিয়ে দর্শকদের ১৯৮০-এর দশকের প্রাণবন্ত কোরিয়ান চলচ্চিত্র জগতে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে প্রস্তুত। লি হে-ইয়ং পরিচালিত এই সিরিজটি ২২শে আগস্ট, ২০২৫-এ বিশ্বব্যাপী মুক্তি পাবে এবং এটি ১৯৮২ সালের যুগান্তকারী চলচ্চিত্র 'ম্যাডাম আইমা' (Madame Aema) নির্মাণের নেপথ্যের গল্প তুলে ধরবে।
সিরিজটির কাহিনী সিউলের চলচ্চিত্র কেন্দ্র চুংমুরুতে (Chungmuro) আবর্তিত হয়, যেখানে দুই অভিনেত্রী একটি পুরুষ-শাসিত শিল্পে নিজেদের জায়গা করে নেওয়ার জন্য সংগ্রাম করেন। লি হা-নি অভিনীত জেওং হি-রান (Jeong Hee-ran) চরিত্রে দেখা যাবে একজন শীর্ষ অভিনেত্রীকে, যিনি ছবির বিতর্কিত বিষয়বস্তুর কারণে তার প্রধান চরিত্র হারান। অন্যদিকে, বাং হ্যো-রিন অভিনীত সিন জু-এ (Shin Joo-ae) চরিত্রে এক নাইটক্লাবের নর্তকী অপ্রত্যাশিতভাবে প্রধান চরিত্রে অভিনয় করার সুযোগ পান। এই সিরিজে আরও অভিনয় করেছেন জিন সিওন-কিউ একজন চলচ্চিত্র সিইও হিসেবে এবং চো হিয়ন-চুল একজন নবাগত পরিচালক হিসেবে। 'আইমা' হাস্যরস এবং নাটকের এক মিশ্রণ উপস্থাপন করবে, যা সেই সময়ের চলচ্চিত্রে নারীদের চ্যালেঞ্জ, তাদের দৃঢ়তা এবং উচ্চাকাঙ্ক্ষা তুলে ধরবে।
১৯৮০-এর দশক কোরিয়ান চলচ্চিত্রের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সময় ছিল। 'ম্যাডাম আইমা' (১৯৮২) ছবিটি সেই সময়ে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল, যা কোরিয়ার ইরোটিক সিনেমার উত্থানের সূচনা করে। এটি মাত্র এক বছরে সিউলে ১ লক্ষের বেশি টিকিট বিক্রি করে এবং কোরিয়ান চলচ্চিত্রের ইতিহাসে দীর্ঘতম চলমান সিরিজ হিসেবে পরিচিতি লাভ করে, যার অন্তত ১২টি সিক্যুয়েল তৈরি হয়েছিল। এই সময়ের মধ্যে, সরকার '৩এস নীতি' (স্ক্রিন, স্পোর্টস, সেক্স) চালু করেছিল, যা জনসাধারণের মনোযোগ রাজনীতি থেকে সরিয়ে আনার একটি প্রচেষ্টা ছিল এবং এর ফলে ইরোটিক চলচ্চিত্রের একটি দ্রুত উত্থান ঘটে। তবে, এই সময়ে চলচ্চিত্রের উপর কঠোর সেন্সরশিপও বিদ্যমান ছিল, যা একটি বৈপরীত্যপূর্ণ পরিবেশ তৈরি করেছিল যেখানে শিল্পীরা সৃজনশীলতার স্বাধীনতা এবং নিয়ন্ত্রণের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখতে বাধ্য হতেন।
পরিচালক লি হে-ইয়ং-এর লক্ষ্য ছিল সেই সময়ের অভিনেত্রীদের সম্মান জানানো, যারা 'আইমা'-র মতো চরিত্রে অভিনয় করার সময় গভীর কুসংস্কার এবং বৈরী পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছিলেন। তিনি এই সিরিজটিকে সেই সময়ের নারীদের সংগ্রাম এবং সহনশীলতার প্রতি সমর্থন জানানোর একটি মাধ্যম হিসেবে দেখেছেন। সিরিজটি কেবল সেই সময়ের গ্ল্যামারকেই তুলে ধরে না, বরং পর্দার আড়ালে থাকা অন্যায়, বৈষম্য এবং নারীদের টিকে থাকার লড়াইকেও উন্মোচন করে। হি-রান এবং জু-এ-এর প্রতিদ্বন্দ্বিতা ধীরে ধীরে পারস্পরিক শ্রদ্ধায় রূপান্তরিত হয়, কারণ তারা এমন একটি শিল্পের মুখোমুখি হয় যা নারীদের শোষণ করে। তাদের এই যাত্রা কেবল ব্যক্তিগত সাফল্যের জন্য নয়, বরং নিজেদের কর্মজীবনে অধিকার আদায়ের এক সম্মিলিত প্রচেষ্টার প্রতীক।