বি গ্যাংয়ের 'পুনরুত্থান' পেল কান চলচ্চিত্র উৎসবের বিশেষ জুরি পুরস্কার

সম্পাদনা করেছেন: An goldy

বি গ্যাং পরিচালিত নবীন চীনা বিজ্ঞান-কল্পকাহিনী চলচ্চিত্র 'কুয়াং ইয়ে শি দাই' (Kuang Ye Shi Dai), যা বাংলায় 'পুনরুত্থান' নামে পরিচিত, ৭৮তম কান চলচ্চিত্র উৎসবে বিশেষ জুরি পুরস্কার লাভ করেছে। এই উৎসবটি গত ১৩ থেকে ২৪ মে, ২০২৫ পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এই অর্জনটি বিশেষভাবে তাৎপর্যপূর্ণ, কারণ এটি গত এক দশকের মধ্যে প্রথমবার কোনো চীনা চলচ্চিত্র উৎসবের প্রধান প্রতিযোগিতা বিভাগে পুরস্কার জিতল। জুরি বোর্ডের সভাপতি, ফরাসি অভিনেত্রী জুলিএট বিনোশ, ছবিটিকে উপস্থাপন করে এটিকে 'অসাধারণ সৃষ্টি' এবং 'বিস্ময়কর উদ্ভাবন' বলে প্রশংসা করেন।

চলচ্চিত্রটির পরিচালক বি গ্যাং, যিনি মুক্তির সময় ৩৫ বছর বয়সী ছিলেন, উৎসব কর্তৃপক্ষ, অভিনেতা-অভিনেত্রী এবং এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত সকল কলাকুশলীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। ছবির কাহিনি এক ডিস্টোপিয়ান ভবিষ্যতের পটভূমিতে স্থাপিত, যেখানে মানবজাতি অমরত্বের বিনিময়ে স্বপ্ন দেখার ক্ষমতা ত্যাগ করেছে। গল্পের কেন্দ্রে রয়েছেন স্বপ্ন সংরক্ষণকারী এক নারী, মিসেস শু, যার ভূমিকায় অভিনয় করেছেন শু কি। তিনি এক অদ্ভুত প্রাণীর সন্ধান পান, যাকে রূপদান করেছেন জ্যাকসন ই, এবং এই প্রাণীটি অন্যদের বিপরীতে এখনও স্বপ্ন দেখতে সক্ষম। মিসেস শু এই প্রাণীর স্বপ্নের জগতে প্রবেশ করেন, যার মাধ্যমে তিনি চীনা ইতিহাসের ছয়টি ভিন্ন চলচ্চিত্র অধ্যায় অন্বেষণ করে সত্য উদ্ঘাটনের চেষ্টা করেন।

মোট ১৫৬ মিনিটের এই মহাকাব্যিক ছবিটি বি গ্যাংয়ের তৃতীয় পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র; এর আগে তিনি 'কাইলির গলি' এবং 'দীর্ঘ রাত, যা অন্ধকারে মিলিয়ে যায়' নির্মাণ করেছিলেন। চলচ্চিত্রটির গঠনশৈলী বিভিন্ন চলচ্চিত্র যুগের প্রতি এক শ্রদ্ধার্ঘ্য, যা পরিচালকের দৃশ্যগত দক্ষতার পরিচয় দেয়। ছবির ছয়টি অংশ বৌদ্ধ দর্শনে স্বীকৃত ছয়টি ইন্দ্রিয়ের সঙ্গে সম্পর্কিত: দৃষ্টি, শ্রবণ, ঘ্রাণ, স্বাদ, স্পর্শ এবং মন। দর্শক হিসেবে আমরা বিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকের নির্বাক চলচ্চিত্রের অভিব্যক্তিবাদী শৈলী থেকে শুরু করে ১৯৪০-এর দশকের নয়ার এবং ১৯৯৯ সালের এক ভ্যাম্পায়ার প্রেমের গল্প পর্যন্ত বিভিন্ন ধরনের ভিজ্যুয়াল স্টাইলের সম্মুখীন হই, যার শেষ অংশটি পরিচালকের নিজস্ব দীর্ঘ শট কৌশলে চিত্রিত। জ্যাকসন ই এই চলচ্চিত্র জুড়ে একাধিক পরিবর্তিত চরিত্রে অভিনয় করেছেন, যা বিভিন্ন দশকের মধ্যে ভ্রমণ করে।

আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও ছবিটি ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। আমেরিকান পরিবেশক সংস্থা Janus Films যুক্তরাষ্ট্রে ছবিটির প্রদর্শনের অধিকার কিনে নিয়েছে এবং ২০২৫ সালে এটি মুক্তি দেওয়ার পরিকল্পনা করেছে। চীনে ছবিটি ২২ নভেম্বর, ২০২৫ তারিখে মুক্তি পায়, এবং ফ্রান্সে এর প্রদর্শনী শুরু হয় ১০ ডিসেম্বর, ২০২৫ তারিখে। উল্লেখযোগ্যভাবে, ছবিটি গত ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ তারিখে ৩০তম বুসান আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবেও প্রদর্শিত হয়েছিল। পরিচালক বি গ্যাং এই চলচ্চিত্রটিকে চীনা চলচ্চিত্রের ভবিষ্যতের প্রতি উৎসর্গ করেছেন, যার লক্ষ্য হলো পরিবর্তনশীল পৃথিবীতে মানুষকে সান্ত্বনা দিতে পারে এমন চলচ্চিত্র নির্মাণ করা।

এই বিশেষ পুরস্কার লাভ করা চলচ্চিত্রটি কেবল বি গ্যাংয়ের ব্যক্তিগত সাফল্য নয়, বরং এটি চীনা চলচ্চিত্র শিল্পের জন্য এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। কান চলচ্চিত্র উৎসবে এমন একটি মর্যাদাপূর্ণ স্বীকৃতি প্রমাণ করে যে, চীনা নির্মাতারা বিশ্ব মঞ্চে তাদের স্বতন্ত্র শৈলী এবং গভীর দার্শনিক ভাবনা উপস্থাপনে সক্ষম। ছবিটি তার জটিল আখ্যান এবং শৈল্পিক বৈচিত্র্যের কারণে সমালোচকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে, যা এটিকে সমসাময়িক চলচ্চিত্রের ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন হিসেবে চিহ্নিত করে।

11 দৃশ্য

উৎসসমূহ

  • La Libre.be

  • Wikipedia

  • Wikipedia

  • MoMA

  • Box office hype

  • 72 Dragons

আপনি কি কোনো ত্রুটি বা অসঠিকতা খুঁজে পেয়েছেন?

আমরা আপনার মন্তব্য যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিবেচনা করব।

বি গ্যাংয়ের 'পুনরুত্থান' পেল কান চলচ্চিত্র... | Gaya One