শেইন, দ্রুত ফ্যাশন শিল্পের একটি উল্লেখযোগ্য নাম, তার শ্রম অনুশীলন এবং পরিবেশগত প্রভাবের কারণে ক্রমবর্ধমান সমালোচনার সম্মুখীন হচ্ছে। অ্যাকশনএইড এবং চায়না লেবার ওয়াচের মতো সংস্থাগুলোর সাম্প্রতিক তদন্তে শ্রমিক অধিকার এবং পরিবেশগত প্রভাব সম্পর্কিত বেশ কিছু উদ্বেগজনক বিষয় উঠে এসেছে।
তদন্তে দেখা গেছে, শেইনের সরবরাহকারীদের কারখানায় শ্রমিকরা দীর্ঘ সময় ধরে কাজ করতে বাধ্য হন এবং তারা খুব কম মজুরি পান। কিছু শ্রমিক মাসে মাত্র একদিন ছুটি পান। এছাড়া, কর্মক্ষেত্রে দুর্বল নিরাপত্তা ব্যবস্থা এবং অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের কারণে শ্রমিকদের জীবন ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ে।
শেইনের বিরুদ্ধে উইঘুর শ্রমিকদের জোরপূর্বক শ্রম ব্যবহারের অভিযোগও রয়েছে। যদিও শেইন এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে, তবে বেশ কিছু প্রতিবেদনে উইঘুর শ্রমিকদের সাথে তাদের সম্পর্কের প্রমাণ পাওয়া গেছে।
পরিবেশগত উদ্বেগের ক্ষেত্রে, শেইন প্রতি বছর উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কার্বন ডাই অক্সাইড নির্গমন করে। ২০২৩ সালে, কোম্পানিটি ১৬.৭ মিলিয়ন মেট্রিক টন কার্বন ডাই অক্সাইড নির্গমন করেছে, যা চারটি কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সম্মিলিত নির্গমনের চেয়েও বেশি। তাদের তৈরি পোশাকের একটি বড় অংশ সিনথেটিক উপকরণ থেকে তৈরি, যা পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর।
এই সমস্যাগুলোর সমাধানে ফরাসি সিনেট টেক্সটাইল শিল্পের পরিবেশগত প্রভাব কমাতে একটি আইন গ্রহণ করেছে। এই আইনটি দ্রুত ফ্যাশন প্ল্যাটফর্মগুলোর বিজ্ঞাপন নিষিদ্ধ এবং পরিবেশগত মানদণ্ড পূরণে ব্যর্থ হলে কোম্পানিগুলোর উপর আর্থিক জরিমানা আরোপ করার কথা উল্লেখ করে।
শেইন তাদের উৎপাদন প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা এবং শ্রমিকদের অধিকার সুরক্ষার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নিচ্ছে। তারা সরবরাহকারীদের জন্য একটি আচরণবিধি তৈরি করেছে এবং নিয়মিত নিরীক্ষার মাধ্যমে তা পর্যবেক্ষণ করছে। এছাড়াও, শ্রমিকদের অভিযোগ জানানোর জন্য একটি বেনামী প্ল্যাটফর্ম তৈরি করেছে, যেখানে তারা তাদের সমস্যাগুলো জানাতে পারেন।
শেইন ২০৩০ সালের মধ্যে কার্বন নিঃসরণ ২৫% কমানোর এবং ২০৫০ সালের মধ্যে নেট-জিরো নিঃসরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। তারা পরিবেশ-বান্ধব উপকরণ ব্যবহার এবং টেকসই উৎপাদন পদ্ধতি অনুসরণের মাধ্যমে তাদের পরিবেশগত প্রভাব কমাতে কাজ করছে।
শেইনের মতো দ্রুত ফ্যাশন ব্র্যান্ডগুলোর পরিবেশগত ও সামাজিক প্রভাব সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে হবে। ভোক্তাদের উচিত এমন ব্র্যান্ডগুলোকে সমর্থন করা, যারা শ্রমিকদের অধিকার এবং পরিবেশের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। প্রতিটি পোশাক কেনার আগে আমাদের সচেতনভাবে সিদ্ধান্ত নিতে হবে, যাতে আমরা একটি টেকসই এবং মানবিক ফ্যাশন শিল্পের দিকে এগিয়ে যেতে পারি।