সুইজারল্যান্ডের সিয়ন এয়ারোড্রোম থেকে রাফায়েল ডমজানের নেতৃত্বে সোলারস্ট্র্যাটোস বিমানটি ৯,৫২১ মিটার উচ্চতায় পৌঁছে একটি নতুন বিশ্ব রেকর্ড স্থাপন করেছে। এই ঐতিহাসিক উড়ানটি প্রায় পাঁচ ঘন্টা দশ মিনিট স্থায়ী হয়েছিল এবং এটি সৌর চালিত বিমান চালনার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। ডমজান প্রায় ৩০০ মিটার ব্যবধানে পূর্বের ১৫ বছরের পুরনো রেকর্ডটি ভেঙেছেন। এই অর্জনটি কেবল প্রযুক্তিগত দিক থেকেই তাৎপর্যপূর্ণ নয়, বরং এটি একটি প্রতীকী বার্তা বহন করে যে, জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহার না করেও বাণিজ্যিক বিমানের মতো উচ্চতায় পৌঁছানো সম্ভব।
সোলারস্ট্র্যাটোস বিমানটি সুইস আল্পসের উপর দিয়ে উড়ে যাওয়ার সময় একটি যাত্রীবাহী বিমানের পাশে উড়ে যাওয়ার দৃশ্য ভবিষ্যতের দূষণমুক্ত বিমান পরিবহনের একটি ঝলক দেখিয়েছে। উড়ানের সময়, ডমজান প্রায় ৫,০০০ মিটার উচ্চতায় থার্মাল আপড্রাফট ব্যবহার করে বিমানের ব্যাটারি রিচার্জ করার সুযোগ পেয়েছিলেন। এরপর সেখান থেকেই চূড়ান্ত আরোহণের সূচনা হয়, যা বিমানটিকে নতুন রেকর্ডে পৌঁছে দেয়। ডমজান এই সাফল্যটি তার বহু বছরের পরিশ্রমী দলের প্রতি উৎসর্গ করেছেন। তিনি আবেগাপ্লুত হয়ে বলেন, "এটি প্রমাণ করে যে স্বপ্ন বাস্তবে রূপ নিতে পারে যখন আবেগ, সৃজনশীলতা এবং সূর্যের শক্তি একত্রিত হয়।"
সোলারস্ট্র্যাটোস বিমানটির নকশা বেশ আকর্ষণীয়। এটির দৈর্ঘ্য ৯.৬ মিটার, ডানার বিস্তার প্রায় ২৫ মিটার এবং সামনে একটি একক প্রপেলার রয়েছে। বিমানের ডানার প্রায় ২২ বর্গমিটার এলাকা ফটোভোলটাইক প্যানেল দ্বারা আবৃত, যা এর বৈদ্যুতিক মোটরগুলিকে শক্তি সরবরাহ করে। বিমানটি সম্পূর্ণরূপে সৌর শক্তি দ্বারা চালিত হয় এবং এর গড় উড়ানের গতি প্রায় ৮০ কিলোমিটার প্রতি ঘন্টা। এই প্রকল্পের কঠোর নিয়মাবলী প্রতিটি উড়ানকে অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং করে তোলে। উড্ডয়নের পূর্বে সঞ্চিত শক্তি সম্পূর্ণরূপে সৌর প্যানেল থেকে আসতে হবে এবং আরোহণের সময় বিমানে কমপক্ষে ১৬% অবশিষ্ট চার্জ থাকতে হবে। এই সীমাবদ্ধতাগুলি প্রকল্পের নকশাকে আরও জটিল করে তোলে, তবে এটি পরিষ্কার শক্তির প্রতি প্রকল্পের অঙ্গীকারকেও তুলে ধরে।
পূর্বে এই রেকর্ডটি ছিল সোলার ইমপালসের দখলে, যা ২০১০ সালে ৯,২৩৫ মিটার উচ্চতায় উড়েছিল। রাফায়েল ডমজান, যিনি ২০১২ সালে একটি সৌর বিমান নিয়ে বিশ্ব প্রদক্ষিণ করে পরিচিতি লাভ করেছিলেন, এখন ১০,০০০ মিটার বাধা অতিক্রম করার জন্য প্রস্তুত। এর চূড়ান্ত লক্ষ্য হলো প্রথমবার সৌর চালিত বিমান নিয়ে বিশ্ব প্রদক্ষিণ করা, যা সুইজারল্যান্ডে প্রায় ১২,০০০ মিটার উচ্চতায় শুরু হয়। বিশ্ব এয়ার স্পোর্টস ফেডারেশন এই উড়ানের তথ্য পরীক্ষা করছে এবং আনুষ্ঠানিকভাবে নতুন রেকর্ড নিশ্চিত করবে। তবে, আল্পসের আকাশে সোলারস্ট্র্যাটোসের সৌর শক্তিতে উড়ে যাওয়ার দৃশ্য বিশ্বজুড়ে আশার সঞ্চার করেছে যে বিমান চালনা একটি নতুন যুগে প্রবেশ করতে পারে, যেখানে উড়ান মানে জীবাশ্ম জ্বালানি এবং দূষণকারী নির্গমন নয়।