নাসার ইন্টারস্টেলার ম্যাপিং অ্যান্ড অ্যাক্সিলারেশন প্রোব (IMAP) অভিযানটি ২০২৫ সালের ২৩শে সেপ্টেম্বর ফ্লোরিডার কেনেডি স্পেস সেন্টার থেকে উৎক্ষেপণের জন্য প্রস্তুত হচ্ছে। প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয় এই অভিযানের নেতৃত্ব দিচ্ছে এবং জনস হপকিন্স অ্যাপ্লাইড ফিজিক্স ল্যাবরেটরি (APL) এটি পরিচালনা করবে। এই গুরুত্বপূর্ণ মহাকাশযানটি আমাদের সৌরজগতের চারপাশের হেলোস্ফিয়ার নামক সুরক্ষামূলক বুদ্বুদটিকে গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করবে। হেলোস্ফিয়ার হলো সৌর বায়ু দ্বারা সৃষ্ট একটি বিশাল অঞ্চল যা আমাদের সৌরজগতকে মহাজাগতিক রশ্মি এবং অন্যান্য ক্ষতিকারক বিকিরণ থেকে রক্ষা করে। এটি মহাকাশের একটি দুর্ভেদ্য ঢালের মতো কাজ করে, যা পৃথিবীর জীবনধারণের জন্য অনুকূল পরিবেশ বজায় রাখতে সহায়ক।
ইউনিভার্সিটি অফ বার্ন এই অভিযানের জন্য হার্ডওয়্যার সরবরাহ করছে, যার মধ্যে IMAP-Lo যন্ত্রের অপটিক্যাল ডিজাইনও অন্তর্ভুক্ত। IMAP মহাকাশযানটিকে পৃথিবী থেকে প্রায় ১.৫ মিলিয়ন কিলোমিটার দূরে, সূর্যের দিকে অবস্থিত ল্যাগ্রেঞ্জ পয়েন্ট ১ (L1)-এ স্থাপন করা হবে। এই কৌশলগত অবস্থানটি সৌর বায়ু এবং মহাজাগতিক বিকিরণের অবিচ্ছিন্ন পর্যবেক্ষণের সুযোগ করে দেবে, যা মহাকাশের আবহাওয়া (space weather) বোঝার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
হেলোস্ফিয়ারের বাইরের সীমানা, যা হেলোপজ নামে পরিচিত, সেখানে সৌর বায়ু এবং আন্তঃনাক্ষত্রিক মাধ্যমের (interstellar medium) মধ্যে মিথস্ক্রিয়া ঘটে। IMAP এই সীমানার গতিশীলতা এবং এর প্রভাবগুলি অধ্যয়ন করবে। মহাকাশের আবহাওয়া, যেমন সৌর শিখা (solar flares) এবং করোনাল মাস ইজেকশন (coronal mass ejections), আমাদের প্রযুক্তিনির্ভর জীবনযাত্রার উপর গভীর প্রভাব ফেলতে পারে। এই ঘটনাগুলি স্যাটেলাইট যোগাযোগ, জিপিএস সিস্টেম, পাওয়ার গ্রিড এবং এমনকি বিমান চলাচলেও ব্যাঘাত ঘটাতে পারে। IMAP-এর গবেষণা মহাকাশের আবহাওয়ার পূর্বাভাস উন্নত করতে এবং এই ধরনের ঘটনাগুলির প্রভাব কমাতে সহায়ক হবে।
এই অভিযানে প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডেভিড জে. ম্যাককমাস প্রধান গবেষক হিসেবে নেতৃত্ব দিচ্ছেন এবং জনস হপকিন্স অ্যাপ্লাইড ফিজিক্স ল্যাবরেটরি মহাকাশযান নির্মাণ ও পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছে। এই মিশনে বিশ্বজুড়ে ২৭টি প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞানীরা যুক্ত আছেন, যা একটি শক্তিশালী আন্তর্জাতিক সহযোগিতার নিদর্শন। IMAP-এর ১০টি অত্যাধুনিক যন্ত্রাংশ সৌর বায়ু, মহাজাগতিক রশ্মি এবং আন্তঃনাক্ষত্রিক স্থানের কণাগুলির একটি বিস্তারিত চিত্র তৈরি করবে।
IMAP-এর মাধ্যমে হেলোস্ফিয়ারের সীমানা এবং এর ভেতরের কণাগুলির গতিবিধি সম্পর্কে যুগান্তকারী তথ্য পাওয়া যাবে বলে আশা করা হচ্ছে। এই অভিযানটি সৌরজগতের সুরক্ষামূলক পরিবেশ এবং মহাকাশের আবহাওয়ার উপর আমাদের নির্ভরতা বোঝার ক্ষেত্রে একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে।