বিজ্ঞানীরা জীবন্ত কোষের মধ্যে কোয়ান্টাম প্রভাব প্রদর্শনে অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জন করেছেন, যা জৈবিক প্রযুক্তির ক্ষেত্রে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে। ইউনিভার্সিটি অফ শিকাগোর প্রিটজকার স্কুল অফ মলিকুলার ইঞ্জিনিয়ারিং-এর গবেষকরা একটি প্রোটিনকে কার্যকরী কোয়ান্টাম বিট (কিউবিট)-এ রূপান্তরিত করতে সক্ষম হয়েছেন, যা ঘরের তাপমাত্রায় কোয়ান্টাম বৈশিষ্ট্য প্রদর্শন করে। এই আবিষ্কারটি এতদিনকার এই ধারণাকে চ্যালেঞ্জ করেছে যে কোয়ান্টাম প্রভাব কেবল অত্যন্ত নিম্ন তাপমাত্রাতেই সম্ভব।
গবেষকরা এনহ্যান্সড ইয়েলো ফ্লুরোসেন্ট প্রোটিন (EYFP) ব্যবহার করেছেন, যা সাধারণত কোষ পর্যবেক্ষণের জন্য জীববিজ্ঞানে ব্যবহৃত হয়। তারা দেখেছেন যে EYFP একটি কোয়ান্টাম কিউবিট হিসেবে কাজ করতে পারে, যা একটি জীবন্ত কোষের জটিল পরিবেশে কোহেরেন্স এবং ম্যাগনেটিক রেজোন্যান্স প্রদর্শন করে। এই যুগান্তকারী উদ্ভাবনটি জৈবিক সিস্টেমের অভ্যন্তরে কাজ করতে সক্ষম কোয়ান্টাম সেন্সর তৈরির নতুন পথ খুলে দিয়েছে।
এই গবেষণার সাথে সামঞ্জস্য রেখে, চলতি বছরের মার্চ মাসে হাওয়ার্ড ইউনিভার্সিটির পদার্থবিদ ফিলিপ কুরিয়ান একটি গবেষণা প্রকাশ করেছিলেন, যেখানে তিনি উল্লেখ করেন যে জীবন্ত কোষগুলি ক্লাসিক্যাল জৈব রাসায়নিক সংকেতের চেয়ে অনেক দ্রুত কোয়ান্টাম প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তথ্য প্রক্রিয়া করতে পারে। তিনি পর্যবেক্ষণ করেন যে জীবন্ত কোষের প্রোটিন কাঠামোতে কোয়ান্টাম সুপারপজিশন দেখা যায়, যা প্রতি সেকেন্ডে আনুমানিক ১০^১২-১০^১৩ অপারেশন গতিতে তথ্য প্রক্রিয়াকরণে সক্ষম।
এই গবেষণাগুলি কোয়ান্টাম বায়োলজির ক্রমবর্ধমান আগ্রহ এবং জৈবিক সিস্টেমের সাথে কোয়ান্টাম প্রভাবগুলিকে একীভূত করার জন্য নতুন প্রযুক্তি তৈরির সম্ভাবনার উপর জোর দেয়। কোষীয় স্তরে কোয়ান্টাম ঘটনাগুলিকে কাজে লাগানোর ক্ষমতা ডায়াগনস্টিকস থেকে শুরু করে কম্পিউটিং পর্যন্ত বিভিন্ন ক্ষেত্রকে বিপ্লব ঘটাতে পারে। EYFP-ভিত্তিক কিউবিটগুলি জৈবিক সেন্সর হিসাবে কাজ করতে পারে, যা কোষের অভ্যন্তরে সূক্ষ্ম পরিবর্তনগুলি সনাক্ত করতে এবং অভূতপূর্ব অন্তর্দৃষ্টি প্রদান করতে সক্ষম। এই প্রোটিন-কিউবিটগুলি কোষ দ্বারা সরাসরি তৈরি করা যেতে পারে এবং বিদ্যমান কোয়ান্টাম সেন্সরগুলির তুলনায় হাজার হাজার গুণ শক্তিশালী সংকেত সনাক্ত করতে পারে।
এই অগ্রগতিগুলি কোয়ান্টাম তথ্য বিজ্ঞান এবং জীবন বিজ্ঞানের মধ্যে একটি সেতু তৈরি করেছে, যা ভবিষ্যতে জৈব-কোয়ান্টাম সেন্সিং এবং কোয়ান্টাম তথ্য প্রক্রিয়াকরণের নতুন দ্বার উন্মোচন করবে।