বিজ্ঞানীদের একটি আন্তর্জাতিক দল এমন মাইক্রো-রোবট তৈরি করেছে যা শব্দ তরঙ্গের ব্যবহার করে বৃহৎ ঝাঁকে সমন্বিত হতে পারে এবং বুদ্ধিমান আচরণের অনুরূপ বৈশিষ্ট্য প্রদর্শন করতে পারে। এই স্ব-সংগঠিত ঝাঁকগুলি সংকীর্ণ স্থানগুলিতে চলাচল করতে এবং বিকৃত হলে পুনরায় একত্রিত হতে সক্ষম, যা দুর্যোগপূর্ণ অঞ্চলগুলি অন্বেষণ, দূষণ পরিষ্কার বা অভ্যন্তরীণ চিকিৎসা পদ্ধতি সম্পাদনের মতো জটিল কাজের সম্ভাবনা উন্মুক্ত করে। পেন স্টেট ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ইগর আরোনসনের নেতৃত্বে এই গবেষণাটি ১২ই আগস্ট, ২০২৫ তারিখে ফিজিক্যাল রিভিউ এক্স (Physical Review X) জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে।
এই ধারণাটি প্রাকৃতিক ব্যবস্থা থেকে অনুপ্রাণিত, যেখানে বাদুড় এবং পোকামাকড়ের মতো প্রাণীরা যোগাযোগ এবং নেভিগেশনের জন্য অ্যাকোস্টিক সংকেত ব্যবহার করে। আরোনসন এই ঝাঁকের আচরণকে মৌমাছি বা মশার ঝাঁকের সাথে তুলনা করেছেন, যেখানে তাদের চলাচল এবং ফলস্বরূপ শব্দ তাদের একত্রিত রাখে এবং একটি একক সত্তা হিসেবে কাজ করতে সাহায্য করে। প্রতিটি রোবট একটি অ্যাকোস্টিক এমিটার এবং ডিটেক্টর দিয়ে সজ্জিত, যা ঝাঁককে অ্যাকোস্টিক ক্ষেত্রের প্রতি সাড়া দিতে এবং তাদের নিঃসরণ ফ্রিকোয়েন্সি সামঞ্জস্য করে শক্তিশালী সংকেতের দিকে স্থানান্তরিত হতে সক্ষম করে। এই প্রক্রিয়াটি সাপ-সদৃশ সত্তা, স্থানীয় সমষ্টি এবং ঘূর্ণায়মান রিং সহ বিভিন্ন রূপের স্ব-সংগঠিত কাঠামো তৈরি করতে সহায়তা করে। এই সম্মিলিত ঝাঁকগুলি ফেনোটাইপ দৃঢ়তা, সম্মিলিত সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং পরিবেশগত সংবেদনের মতো উদীয়মান কার্যকারিতা প্রদর্শন করে।
এই মাইক্রো-রোবট ঝাঁকের সম্ভাব্য প্রয়োগগুলি অত্যন্ত ব্যাপক। পরিবেশ বিজ্ঞানে, এগুলি দূষিত এলাকাগুলি পুনরুদ্ধারের জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে। চিকিৎসা ক্ষেত্রে, এগুলি মানবদেহের ভেতর থেকে ন্যূনতম আক্রমণাত্মক পদ্ধতি পরিচালনা করতে পারে। জটিল কাজের জন্য স্ব-সংগঠিত এবং অভিযোজিত হওয়ার তাদের ক্ষমতা সোয়ার্ম রোবোটিক্সে একটি উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি উপস্থাপন করে। গবেষকরা উল্লেখ করেছেন যে অ্যাকোস্টিক তরঙ্গ রাসায়নিক সংকেতের চেয়ে যোগাযোগে অনেক বেশি কার্যকর। শব্দ তরঙ্গ প্রায় কোনও শক্তি ক্ষয় ছাড়াই দ্রুত এবং আরও দূরে প্রসারিত হয়, যা নকশাটিকে অনেক সহজ করে তোলে। এই রোবটগুলি কার্যকরভাবে একে অপরকে 'শোনে' এবং 'খুঁজে পায়', যা সম্মিলিত স্ব-সংগঠনের দিকে পরিচালিত করে। প্রতিটি উপাদানের সরলতা থেকে উদ্ভূত সম্মিলিত বুদ্ধিমত্তা এবং কার্যকারিতা তৈরি হয়।
এই গবেষণাটি অ্যাক্টিভ ম্যাটার (active matter) নামক একটি উদীয়মান ক্ষেত্রের একটি নতুন মাইলফলক চিহ্নিত করে, যা ব্যাকটেরিয়া বা জীবন্ত কোষের ঝাঁক থেকে শুরু করে মাইক্রো-রোবট পর্যন্ত স্ব-চালিত আণুবীক্ষণিক জৈবিক এবং সিন্থেটিক এজেন্টগুলির সম্মিলিত আচরণ অধ্যয়ন করে। এটি প্রথমবারের মতো দেখায় যে শব্দ তরঙ্গ মাইক্রো-সাইজের রোবটগুলি নিয়ন্ত্রণ করার একটি মাধ্যম হিসাবে কাজ করতে পারে। পূর্ববর্তী কাজগুলিতে অ্যাকোস্টিক ভার্চুয়াল দেয়াল ব্যবহার করে মাইক্রো-ঝাঁক নিয়ন্ত্রণ এবং অ্যাকোস্টোবটস (AcoustoBots) ব্যবহার করে অ্যাকোস্টোফোরেটিক মিথস্ক্রিয়া অন্তর্ভুক্ত ছিল, যা অ্যাকোস্টিক ম্যানিপুলেশনের ক্রমবর্ধমান সম্ভাবনাকে তুলে ধরে।
এই প্রযুক্তিটি কেবল পরিবেশগত বা চিকিৎসা ক্ষেত্রেই নয়, বরং জটিল এবং বিপদজনক পরিবেশে কাজের জন্য রোবোটিক সিস্টেমের স্থিতিস্থাপকতা এবং অভিযোজনযোগ্যতা বাড়ানোর ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ। রোবটগুলির স্ব-নিরাময় এবং বিচ্ছিন্ন হওয়ার পরেও তাদের কার্যকারিতা বজায় রাখার ক্ষমতা, নজরদারি এবং সেন্সর অ্যাপ্লিকেশনের জন্য বিশেষভাবে উপযোগী। এই অগ্রগতিগুলি আরও উন্নত এবং বুদ্ধিমান রোবোটিক প্ল্যাটফর্মের বিকাশের পথ প্রশস্ত করে, যা মানবজাতির জন্য নতুন সমাধান নিয়ে আসবে।