বিজ্ঞানীরা মহাবিশ্বের উৎপত্তির জন্য একটি যুগান্তকারী নতুন মডেল প্রস্তাব করেছেন, যা দীর্ঘকাল ধরে প্রচলিত বিগ ব্যাং তত্ত্বকে চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছে। ‘ফিজিক্যাল রিভিউ ডি’-তে প্রকাশিত এই উদ্ভাবনী ধারণাটি বলছে যে, আমাদের মহাবিশ্ব একটি বৃহত্তর ‘পিতামাতা’ মহাবিশ্বের একটি ব্ল্যাক হোলের মধ্যে মহাকর্ষীয় পতন এবং পরবর্তী বাউন্স থেকে উদ্ভূত হয়েছে।
প্রচলিত বিগ ব্যাং তত্ত্বের ধারণা হলো, মহাবিশ্বের শুরু হয়েছিল একটি সিঙ্গুলারিটি থেকে, যা প্রায় ১৩.৮ বিলিয়ন বছর আগে অসীম ঘনত্বের একটি বিন্দু ছিল। পোর্টসমাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের এনরিকে গাজটানাগা সহ গবেষকদের দ্বারা তৈরি এই নতুন মডেলটি একটি আকর্ষণীয় বিকল্প প্রস্তাব করে। এটি সাধারণ আপেক্ষিকতাকে কোয়ান্টাম মেকানিক্সের সঙ্গে একত্রিত করে, বিশেষ করে সিঙ্গুলারিটির গঠন রোধ করতে কোয়ান্টাম বর্জন নীতি ব্যবহার করে।
এই নীতি অভিন্ন কণাগুলিকে একই কোয়ান্টাম অবস্থা দখল করতে বাধা দেয়, যা পতনকে থামিয়ে দেয় এবং পদার্থকে বাইরের দিকে বাউন্স করতে বাধ্য করে। এর ফলস্বরূপ একটি উচ্চ-ঘনত্বের অবস্থা থেকে প্রসারিত একটি মহাবিশ্ব তৈরি হয়, যা আমাদের নিজস্ব মহাবিশ্বের মতোই। মডেলটি প্রস্তাব করে যে এই প্রক্রিয়াটি একটি ব্ল্যাক হোলের অভ্যন্তরে ঘটে, যা পদার্থের একটি পতনশীল ভর দ্বারা গঠিত হয়।
এই ‘ব্ল্যাক হোল বাউন্স’ মডেলের একটি মূল পূর্বাভাস হল স্থানের সামান্য ধনাত্মক বক্রতা রয়েছে, যা স্ট্যান্ডার্ড কসমোলজিক্যাল মডেল দ্বারা অনুমিত ফ্ল্যাট মহাবিশ্ব থেকে ভিন্ন। ইউরোপীয় স্পেস এজেন্সির ইউক্লিড টেলিস্কোপের মতো আসন্ন মিশনগুলির মাধ্যমে এই বক্রতা পরীক্ষা করা যেতে পারে। মডেলটি অনুমানমূলক পদার্থবিদ্যা প্রবর্তন না করেই, স্ফীতি এবং ডার্ক এনার্জি, দ্রুত প্রসারণের দুটি পর্যায়কে সুন্দরভাবে ব্যাখ্যা করে।
এছাড়াও, এই মডেলটি সুপারম্যাসিভ ব্ল্যাক হোল এবং গ্যালাক্সির বিতরণের উৎপত্তিস্থলে সম্ভাব্য অন্তর্দৃষ্টি প্রদান করে। ভবিষ্যতের মিশন, যেমন আর্রাকিহস, পতনশীল পর্যায় থেকে সম্ভাব্য ধ্বংসাবশেষ অধ্যয়ন করে আরও প্রমাণ সরবরাহ করতে পারে। এই নতুন কাঠামোটি প্রস্তাব করে যে আমাদের মহাবিশ্ব বৃহত্তর একটি মহাজাগতিক চক্রের অংশ হতে পারে, যা মহাবিশ্বের প্রকৃত উৎপত্তির বিষয়ে আমাদের ধারণা পরিবর্তন করবে।