জোয়ার-ভাটা ও নদীর মিথস্ক্রিয়া সুমেরীয় সভ্যতার উত্থানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল
সম্পাদনা করেছেন: Iryna Balihorodska
প্রাচীন মেসোপটেমিয়ার সুমেরীয় সভ্যতার বিকাশ কেবল মানব উদ্ভাবনের ফল ছিল না, বরং জোয়ার-ভাটার ছন্দ এবং নদীর গতিশীলতাও এতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। একটি নতুন গবেষণা নিশ্চিত করেছে যে, পারস্য উপসাগরের মোহনায় নদী, জোয়ার এবং পলিমাটির মিথস্ক্রিয়া প্রাচীন কৃষিকাজ ও সামাজিক-রাজনৈতিক জটিলতার প্রাথমিক বিকাশে প্রভাব ফেলেছিল।
উডস হোল ওশানোগ্রাফিক ইনস্টিটিউশনের (WHOI) সিনিয়র বিজ্ঞানী এমেরিটাস লিভিয়ু গিওসান এবং ক্লেইমসন ইউনিভার্সিটির অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর রিড গুডম্যানের নেতৃত্বে পরিচালিত এই গবেষণাটি 'মরফোডাইনামিক ফাউন্ডেশনস অফ সুমের' নামে PLOS One জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। এই গবেষণায় একটি নতুন প্যালিওএনভায়রনমেন্টাল মডেল উপস্থাপন করা হয়েছে, যেখানে জোয়ার-ভাটার গতিশীলতা সুমেরীয়দের কৃষিকাজ এবং সমাজ গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল।
প্রায় ৭০০০ থেকে ৫০০০ বছর আগে, পারস্য উপসাগর বর্তমানের চেয়ে অনেক বেশি inland পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। সেই সময়ে, জোয়ার-ভাটা দিনে দুবার টাইগ্রিস ও ইউফ্রেটিস নদীর নিম্নভূমি পর্যন্ত মিষ্টি জল পৌঁছে দিত। গবেষকদের মতে, এই নির্ভরযোগ্য জলপ্রবাহ ছোট ছোট খাল ব্যবহার করে ফসল ও খেজুর গাছের বাগান সেচ দেওয়ার সুযোগ করে দিয়েছিল, যার জন্য বড় আকারের পরিকাঠামোর প্রয়োজন হয়নি।
গবেষণায় দেখা গেছে যে, সুমেরীয়রা আক্ষরিক অর্থেই জলের ছন্দের উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছিল। জোয়ার-ভাটার চক্র এবং পরিবর্তনশীল ভূপ্রকৃতি তাদের পুরাণ, উদ্ভাবন এবং দৈনন্দিন জীবনের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিল। এই জল-নির্ভর জীবনযাত্রা তাদের কৃষিকাজকে উন্নত করেছিল এবং জনসংখ্যা বৃদ্ধি ও সামাজিক বিকাশের পথ প্রশস্ত করেছিল।
তবে, সময়ের সাথে সাথে টাইগ্রিস ও ইউফ্রেটিস নদীর ব-দ্বীপ গঠনের ফলে জোয়ার-ভাটার প্রবেশাধিকার কমে আসে। এই প্রাকৃতিক সেচ ব্যবস্থার অবসান সুমেরীয় সম্প্রদায়কে বড় আকারের নদী-ভিত্তিক সেচ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে বাধ্য করে। এই প্রকল্পগুলির জন্য রাজনৈতিক সমন্বয়, কেন্দ্রীয় কর্তৃত্ব এবং রাষ্ট্র গঠনের নতুন মতাদর্শের প্রয়োজন হয়েছিল, যা সুমেরের স্বর্ণযুগের সূচনা করেছিল।
এই গবেষণাটি কেবল প্রাচীন সভ্যতার উপর প্রাকৃতিক পরিবেশের প্রভাবকেই তুলে ধরে না, বরং আধুনিক বিশ্বের কৃষক, নগর পরিকল্পনাবিদ এবং পরিবেশবাদীদের জন্যও মূল্যবান অন্তর্দৃষ্টি প্রদান করে। জলবায়ু পরিবর্তন, জলের অভাব এবং নগর স্থায়িত্বের মতো সমসাময়িক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় প্রাচীন সুমেরীয়দের প্রাকৃতিক ব্যবস্থার সাথে সামঞ্জস্য রেখে চলার বিষয়টি আমাদের অনুপ্রাণিত করতে পারে।
উৎসসমূহ
Mesagerul.ro
Clemson News
Phys.org
Down To Earth
এই বিষয়ে আরও খবর পড়ুন:
আপনি কি কোনো ত্রুটি বা অসঠিকতা খুঁজে পেয়েছেন?
আমরা আপনার মন্তব্য যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিবেচনা করব।
