পুরাতত্ত্ববিদদের দ্বারা ইসরায়েলের বৃহত্তম বাঁধ আবিষ্কৃত: সিলোয়াম পুষ্করিণীর সঙ্গে যুক্ত ২,৮০০ বছরের পুরনো কাঠামো
সম্পাদনা করেছেন: Iryna Balihorodska
জেরুজালেম শহরের কেন্দ্রস্থলে প্রত্নতাত্ত্বিকরা এক যুগান্তকারী আবিষ্কার করেছেন। এটি একটি বিশাল বাঁধ, যা প্রায় ২,৮০০ বছর পুরনো এবং সিলোয়াম পুষ্করিণীর সঙ্গে যুক্ত বলে মনে করা হচ্ছে। বাইবেলে বর্ণিত এই সিলোয়াম পুষ্করিণীতে যিশু এক অন্ধ ব্যক্তিকে দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে দিয়েছিলেন। এই আবিষ্কারটি কেবল বাইবেলের বর্ণনার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণই নয়, বরং প্রাচীন জেরুজালেমের প্রকৌশলগত দক্ষতার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। প্রথম মন্দির পর্বের (First Temple period) জেরুজালেমের সবচেয়ে চিত্তাকর্ষক এবং তাৎপর্যপূর্ণ কাঠামোগুলোর মধ্যে এটি অন্যতম বলে বিবেচিত হচ্ছে।
এই বাঁধটি প্রায় ৪০ ফুট উঁচু, ২৬ ফুটের বেশি চওড়া এবং এর আবিষ্কৃত দৈর্ঘ্য ৬৯ ফুট পর্যন্ত বিস্তৃত। এটি প্রাচীনকালে জল সংরক্ষণের এক অসাধারণ প্রকৌশলগত নিদর্শন। প্রত্নতাত্ত্বিকরা মনে করছেন, এই বাঁধটি সম্ভবত রাজা যোশিয় বা রাজা আমাসিয়ার রাজত্বকালে (খ্রিস্টপূর্ব নবম শতাব্দীর শেষভাগ) নির্মিত হয়েছিল। সেই সময়ে জেরুজালেম একটি গুরুতর জলবায়ু সংকটের সম্মুখীন হয়েছিল, যেখানে অনাবৃষ্টি এবং আকস্মিক প্রবল বৃষ্টির এক জটিল পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল।
এই বাঁধটি গিখোন ঝর্ণা এবং টাইরোপোয়ন উপত্যকা থেকে প্রবাহিত জলধারাকে আটকে রেখে একটি বিশাল জলাধার তৈরি করত। এই জলধারা পরবর্তীতে সিলোয়াম চ্যানেলের মাধ্যমে এবং পরে হিজকিয়র সুড়ঙ্গের (Hezekiah's Tunnel) মাধ্যমে পুষ্করিণীতে সরবরাহ করা হত। এই জল সংরক্ষণ ব্যবস্থা শহরটিকে খরা এবং আকস্মিক বন্যা উভয় থেকেই রক্ষা করত।
ইসরায়েল প্রত্নতত্ত্ব কর্তৃপক্ষের (Israel Antiquities Authority) খননকার্যের পরিচালকদের মতে, এটি ইসরায়েলে আবিষ্কৃত বৃহত্তম এবং জেরুজালেমে প্রাপ্ত প্রাচীনতম বাঁধ। উচ্চ-নির্ভুলতা সম্পন্ন রেডিওকার্বন ডেটিং পদ্ধতির মাধ্যমে বিজ্ঞানীরা এর নির্মাণকাল নিশ্চিত করেছেন, যা নবম শতাব্দীর শেষভাগে বলে জানা গেছে। এই বাঁধটি কেবল জল সংরক্ষণের জন্যই নয়, বরং এটি প্রাচীন জেরুজালেমের উন্নত নগর পরিকল্পনা এবং জল ব্যবস্থাপনা কৌশলেরও প্রমাণ বহন করে। এটি শহরের প্রকৌশলগত দক্ষতা এবং জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়ার ক্ষমতার এক অসামান্য নিদর্শন।
এই আবিষ্কারটি বাইবেলের ঐতিহাসিক বিবরণের সত্যতা প্রমাণ করে এবং প্রাচীন জেরুজালেমের জীবনযাত্রা ও প্রয়োজনের উপর নতুন আলোকপাত করে। এটি প্রথম মন্দির পর্বের জেরুজালেমের শক্তি ও উন্নত প্রযুক্তির এক সুস্পষ্ট প্রমাণ। এই বাঁধটি সম্ভবত শহরের দক্ষিণ ও পশ্চিম অংশের উন্নয়নেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল, বিশেষ করে মাউন্ট জিয়নের দিকে, যেখানে অধিবাসীরা সিলোয়াম পুষ্করিণীর জলের উপর নির্ভরশীল ছিল। এই আবিষ্কারটি প্রাচীন জেরুজালেমের প্রকৌশলগত উদ্ভাবন এবং জলবায়ু চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার এক অসাধারণ দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।
উৎসসমূহ
Рамблер
ТУРПРОМ
NewsVO
এই বিষয়ে আরও খবর পড়ুন:
আপনি কি কোনো ত্রুটি বা অসঠিকতা খুঁজে পেয়েছেন?
আমরা আপনার মন্তব্য যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিবেচনা করব।
