বেডাল হোয়ার্ড অধ্যয়ন: ভাইকিংদের ইসলামিক বিশ্বের সাথে বাণিজ্য সংযোগ উন্মোচন
সম্পাদনা করেছেন: Iryna Balihorodska
একটি সাম্প্রতিক গবেষণায় উত্তর ইয়র্কশায়ারের বেডাল হোয়ার্ডের (Bedale Hoard) উপর আলোকপাত করা হয়েছে, যা ভাইকিং যুগের এক অসাধারণ প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কার। এই গবেষণাটি ভাইকিংদের কেবল আক্রমণকারী হিসেবে পরিচিতির বাইরে তাদের বিশাল বাণিজ্য নেটওয়ার্কের উপর নতুন করে আলোকপাত করেছে, যা ইংল্যান্ডকে আধুনিক ইরান ও ইরাকের মতো দূরবর্তী অঞ্চলের সাথে সংযুক্ত করেছিল। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্বের অধ্যাপক ডঃ জেন কার্শো (Dr Jane Kershaw) এই গবেষণার নেতৃত্ব দিয়েছেন। বেডাল হোয়ার্ডে পাওয়া ২৯টি রুপার ইঙ্গট (silver ingots) এবং কিছু অলঙ্কৃত নেকলেসের রাসায়নিক বিশ্লেষণ থেকে জানা যায় যে, এই রুপার উৎস ছিল তিনটি প্রধান অঞ্চল: পশ্চিম ইউরোপীয় মুদ্রা, ইসলামিক দিরহাম এবং উভয় অঞ্চলের মিশ্র ধাতু।
যদিও বেশিরভাগ রুপা অ্যাংলো-স্যাক্সন এবং ক্যারোলিঞ্জিয়ান মুদ্রা থেকে এসেছিল, যা মুক্তিপণ বা লুন্ঠনের মাধ্যমে অর্জিত হয়েছিল, তবে প্রায় এক-তৃতীয়াংশ ইঙ্গট সরাসরি ইসলামিক খিলাফতের মুদ্রা থেকে প্রাপ্ত। এই দিরহামগুলি, যা বর্তমান ইরান ও ইরাকের অঞ্চলে তৈরি হয়েছিল, হাজার হাজার কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে স্ক্যান্ডিনেভিয়ান বাণিজ্য পথ 'অস্ট্রভেগ্র' (Austrvegr) ধরে ইংল্যান্ডে পৌঁছেছিল। ডঃ কার্শো উল্লেখ করেছেন যে, ভাইকিংদের কেবল মঠ লুন্ঠনকারী হিসেবে দেখা তাদের পরিচয়ের একটি অসম্পূর্ণ চিত্র। লুন্ঠন তাদের অর্থনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলেও, তারা উত্তর ইউরোপ থেকে ইসলামিক খিলাফত পর্যন্ত বিস্তৃত বাণিজ্য নেটওয়ার্কেও সক্রিয়ভাবে জড়িত ছিল। এই গবেষণা প্রমাণ করে যে, ভাইকিংরা যখন ইংল্যান্ডে বসতি স্থাপন করেছিল, তখন তারা এই ইসলামিক রুপার একটি বড় অংশ সাথে নিয়ে এসেছিল। ভাইকিং যুগে (আনুমানিক ৮০০-১১৫০ খ্রিস্টাব্দ) রুপার ইঙ্গট মুদ্রার চেয়ে বেশি মূল্যবান ছিল। রুপা ওজনের ভিত্তিতে মূল্যবান ছিল এবং বিদেশী মুদ্রা গলিয়ে তা ইঙ্গট বা গয়না তৈরিতে ব্যবহার করা হত। বেডাল হোয়ার্ডের একটি বিশেষ উল্লেখযোগ্য বস্তু হল একটি মোটা, একাধিক স্তরযুক্ত পাকানো নেকলেস, যা পূর্ব ও পশ্চিমের রুপার মিশ্রণে তৈরি এবং সম্ভবত উত্তর ইংল্যান্ডে নির্মিত হয়েছিল। এই গবেষণা আরও দেখায় যে, ভাইকিং কারিগররা স্থানীয়ভাবে প্রাপ্ত সীসা ব্যবহার করে রুপা পরিশোধন করত, যা তাদের উন্নত ধাতুবিদ্যা এবং স্থানীয় উৎপাদন ক্ষমতার প্রমাণ দেয়। সামরিক অভিযানের পাশাপাশি, ভাইকিংরা লুন্ঠন, কর এবং বিস্তৃত বাণিজ্যের সমন্বয়ে একটি অর্থনৈতিক ব্যবস্থা গড়ে তুলেছিল। তারা সমগ্র ইউরোপ, মধ্য এশিয়া এবং মধ্যপ্রাচ্য জুড়ে বিস্তৃত নেটওয়ার্কের সাথে যুক্ত ছিল। 'আর্কিওমেট্রি' (Archaeometry) জার্নালে প্রকাশিত এই গবেষণাটি এই ক্রমবর্ধমান প্রমাণকে আরও শক্তিশালী করে যে, ভাইকিংদের সম্পদ লুন্ঠনের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক বাণিজ্য থেকেও অর্জিত হত। বেডাল হোয়ার্ড মধ্যযুগীয় বিশ্বের সাথে ভাইকিংদের সংযোগের একটি শক্তিশালী প্রমাণ।
উৎসসমূহ
historia.ro
Phys.org
HeritageDaily
Live Science
এই বিষয়ে আরও খবর পড়ুন:
আপনি কি কোনো ত্রুটি বা অসঠিকতা খুঁজে পেয়েছেন?
আমরা আপনার মন্তব্য যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিবেচনা করব।
