বলিভিয়ার পালসপাতায় ১৪০০ বছরের প্রাচীন তিউয়ানাকু মন্দিরের সন্ধান
সম্পাদনা করেছেন: Iryna Balihorodska
বলিভিয়ার প্রত্নতাত্ত্বিকরা সম্প্রতি এক যুগান্তকারী আবিষ্কার করেছেন – প্রায় ১৪০০ বছরের পুরনো এক প্রাচীন মন্দিরের ধ্বংসাবশেষ, যা রহস্যময় তিউয়ানাকু সভ্যতার সঙ্গে সম্পর্কিত। এই আবিষ্কারটি কেবল একটি নতুন প্রত্নতাত্ত্বিক স্থানের উন্মোচনই নয়, বরং আন্দিজ অঞ্চলের এক হারানো সভ্যতার গভীরতর জ্ঞান অর্জনের এক নতুন দ্বার উন্মোচন করেছে। পালসপাতা নামে পরিচিত এই নতুন মন্দিরটি বলিভিয়ার কারাকোলো পৌরসভায় অবস্থিত, যা সুপরিচিত তিউয়ানাকু প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান থেকে প্রায় ২১০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থিত।
পূর্বে তিউয়ানাকু সভ্যতার গবেষণা মূলত তিতিকাকা হ্রদের আশেপাশের অঞ্চলে কেন্দ্রীভূত ছিল, কিন্তু এই আবিষ্কার ইঙ্গিত দেয় যে তিউয়ানাকু সভ্যতার প্রভাব আরও বিস্তৃত ছিল। এটি প্রায় ১২৫ মিটার দীর্ঘ এবং ১৪৫ মিটার প্রশস্ত এক বিশাল কমপ্লেক্স, যা একটি শহরের ব্লকের আকারের সমান। এর স্থাপত্যে টেরেসযুক্ত প্ল্যাটফর্ম এবং একটি নিমজ্জিত অঙ্গনের মতো বৈশিষ্ট্যগুলি তিতিকাকা হ্রদের অঞ্চলের অন্যান্য স্থানের সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ। প্রত্নতাত্ত্বিকরা স্যাটেলাইট চিত্র, ড্রোন উড়ান এবং ফটোগ্রামেট্রি ব্যবহার করে এই স্থানটি শনাক্ত ও পুনর্গঠন করেছেন।
খননকার্যের সময়, ঐতিহ্যগতভাবে চিচা (এক প্রকার ভুট্টার তৈরি পানীয়) পানের জন্য ব্যবহৃত বহু সংখ্যক আনুষ্ঠানিক কাপের খণ্ডাংশ পাওয়া গেছে। এটি নির্দেশ করে যে মন্দিরটি সম্ভবত বড় আকারের সমাবেশ এবং উদযাপনের একটি কেন্দ্র ছিল। এই মন্দিরটির কৌশলগত অবস্থান এটিকে বিভিন্ন বাস্তুতন্ত্রের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ সংযোগস্থল হিসেবে চিহ্নিত করে। এটি উত্তরে তিতিকাকা হ্রদের উর্বর উচ্চভূমি, পশ্চিমে শুষ্ক আলটিপ্লানো মালভূমি এবং পূর্বে কোচাবাম্বা উপত্যকার মতো উৎপাদনশীল অঞ্চলের মধ্যে বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণের একটি কেন্দ্র হিসেবে কাজ করতে পারত।
এই আবিষ্কারটি প্রাক-ইনকা আন্দিজের ইতিহাসে তিউয়ানাকু সভ্যতার পরিধি এবং প্রভাব সম্পর্কে নতুন প্রমাণ সরবরাহ করে। তিউয়ানাকু সভ্যতা, যা প্রায় ৫০০ থেকে ১০০০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত বিকাশ লাভ করেছিল, তার উন্নত কৃষি পদ্ধতি (যেমন উঁচু ক্ষেত্র বা suka kollus) এবং বিশাল স্থাপত্যের জন্য পরিচিত। এই সভ্যতা কেবল একটি ধর্মীয় কেন্দ্র ছিল না, বরং একটি শক্তিশালী রাজনৈতিক ও বাণিজ্যিক শক্তিও ছিল, যা আন্দিজ অঞ্চল জুড়ে বিস্তৃত বাণিজ্য নেটওয়ার্কের মাধ্যমে তার প্রভাব বিস্তার করেছিল। লামার কাফেলাগুলি এই বাণিজ্যকে সহজতর করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করত।
পালসপাতার মতো নতুন আবিষ্কারগুলি তিউয়ানাকু সভ্যতার রাষ্ট্রীয়-স্তরের সংগঠন, জটিল সামাজিক স্তরবিন্যাস এবং আঞ্চলিক সংহতির প্রমাণ দেয়, যা তাদের পূর্বের ধারণাকে প্রসারিত করে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, পালসপাতার মতো কেন্দ্রগুলি কেবল ধর্মীয় স্থানই ছিল না, বরং রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের মেলবন্ধনও ঘটাত। এই মন্দিরগুলি সম্ভবত কূটনৈতিক আউটপোস্ট হিসেবে কাজ করত, যেখানে খাদ্য, পানীয় এবং জ্যোতির্বিদ্যা ব্যবহার করে জোট গঠন করা হত।
এই আবিষ্কারটি তিউয়ানাকু সভ্যতার ক্ষমতা প্রদর্শনের একটি নতুন মডেল উপস্থাপন করে, যা ইনকাদের পূর্বসূরী হিসেবে তাদের ভূমিকাকে আরও স্পষ্ট করে তোলে। এটি প্রমাণ করে যে তিউয়ানাকু কেবল একটি আঞ্চলিক সংস্কৃতি ছিল না, বরং আন্দিজের গভীরে প্রসারিত এক সংগঠিত শক্তি ছিল, যা পূর্বের ধারণার চেয়েও বেশি প্রভাবশালী ছিল। পালসপাতার এই আবিষ্কার তিউয়ানাকু সভ্যতার জটিল সমাজ এবং আন্দিজের প্রাক-ইনকা ইতিহাসে তাদের স্থান সম্পর্কে আমাদের উপলব্ধিকে আরও গভীর করে।
উৎসসমূহ
tech.sme.sk
CNN
Penn State University
Phys.org
এই বিষয়ে আরও খবর পড়ুন:
আপনি কি কোনো ত্রুটি বা অসঠিকতা খুঁজে পেয়েছেন?
আমরা আপনার মন্তব্য যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিবেচনা করব।
