সাম্প্রতিক সৌর কার্যকলাপ বিশ্লেষণে ভূ-চৌম্বকীয় ঝড়গুলির একটি অপ্রত্যাশিত বৃদ্ধি লক্ষ্য করা গেছে, যা পৃথিবীর ম্যাগনেটোস্ফিয়ারকে তীব্রভাবে প্রভাবিত করছে। বিজ্ঞানীরা উপগ্রহ যোগাযোগ এবং বিদ্যুৎ গ্রিডে সম্ভাব্য বিঘ্নের জন্য পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন। বর্তমান সৌর চক্রটি বিদ্যমান মডেলগুলির দ্বারা সম্পূর্ণরূপে পূর্বাভাসিত নয় এমন আচরণ প্রদর্শন করছে, যা মহাকাশ আবহাওয়ার পূর্বাভাসে একটি অনন্য চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে। এই তীব্র সৌর ঘটনাগুলির চালিকা শক্তি বোঝার জন্য আরও গবেষণা চলছে।
ভূ-চৌম্বকীয় ঝড়গুলি আমাদের প্রযুক্তি-নির্ভর পরিকাঠামোকে প্রভাবিত করতে পারে। এই ঝড়গুলির সময় আয়নোস্ফিয়ার উত্তপ্ত এবং বিকৃত হওয়ার কারণে, দীর্ঘ-দূরত্বের রেডিও যোগাযোগ কঠিন বা অসম্ভব হয়ে পড়ে এবং গ্লোবাল পজিশনিং সিস্টেম (জিপিএস) যোগাযোগও ব্যাহত হতে পারে। আয়নোস্ফিয়ারের প্রসারণ উপগ্রহগুলির উপর টান বাড়িয়ে তোলে এবং তাদের কক্ষপথ নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন করে তোলে। এছাড়াও, উপগ্রহের ইলেকট্রনিক্স চার্জ buildup এবং ডিসচার্জের মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। নভোচারী এবং উচ্চ-উচ্চতার পাইলটরা বর্ধিত বিকিরণের সম্মুখীন হতে পারেন। যদিও এই পরিবর্তনগুলি মহাকাশে ঘটে, পৃথিবীর পৃষ্ঠেও এর বাস্তব প্রভাব দেখা যায়, যার মধ্যে বিদ্যুৎ গ্রিডে ভোল্টেজ সার্জ অন্তর্ভুক্ত, যা ব্ল্যাকআউটের কারণ হতে পারে।
মহাকাশ আবহাওয়ার পূর্বাভাস একটি অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং ক্ষেত্র। বিজ্ঞানীরা সৌর ঘটনা এবং পৃথিবীতে তাদের প্রভাবের পূর্বাভাস দেওয়ার জন্য আরও বেশি সময়সীমা বাড়ানোর উপায় অনুসন্ধান করছেন। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) এবং উপগ্রহ ব্যবহার করে উন্নত পর্যবেক্ষণ ও ভবিষ্যদ্বাণী কৌশলগুলির মাধ্যমে আমরা সৌর ঝড়ের প্রভাবগুলির জন্য প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য আরও বেশি সময় পেতে পারি। উদাহরণস্বরূপ, ২০২২ সালের জানুয়ারিতে একটি শক্তিশালী সৌর শিখা পৃথিবীর উপর প্রভাব ফেলেছিল, যার ফলে ৪০টি স্টারলিঙ্ক উপগ্রহ ধ্বংস হয়েছিল। একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা হল মে ২০২৪-এর একটি চরম (G5) ভূ-চৌম্বকীয় ঝড়, যা ৫০০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী ছিল। এটি ব্যাপক অরোরা প্রদর্শন করেছিল এবং জিপিএস যোগাযোগে ব্যাঘাত ঘটিয়েছিল।
এই ধরনের ঘটনাগুলি বিদ্যুৎ গ্রিড, উপগ্রহ পরিচালনা এবং রেডিও যোগাযোগ ব্যবস্থাকে মারাত্মকভাবে প্রভাবিত করতে পারে। শক্তিশালী সৌর ঝড়গুলি বিদ্যুৎ ব্যবস্থায় ভোল্টেজ নিয়ন্ত্রণ সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে, যা ট্রান্সফরমারগুলির ক্ষতি এবং সম্ভাব্য ব্যাপক ব্ল্যাকআউটের কারণ হতে পারে। উপগ্রহগুলিও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, যার ফলে যোগাযোগ ব্যবস্থায় বিঘ্ন ঘটতে পারে। মহাকাশ আবহাওয়ার পূর্বাভাস উন্নত করার জন্য, নাসা এবং আইবিএম 'সুরিয়া' নামে একটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) মডেল তৈরি করেছে। এই মডেলটি সৌর কার্যকলাপ বিশ্লেষণ করে এবং সৌর শিখা ও ভূ-চৌম্বকীয় ঝড়ের পূর্বাভাস দিতে পারে। এটি পূর্ববর্তী পদ্ধতির তুলনায় সৌর শিখার পূর্বাভাসে ১৬% বেশি নির্ভুলতা দেখিয়েছে এবং দুই ঘন্টা আগে পর্যন্ত শিখার সম্ভাব্য অবস্থান পূর্বাভাস দিতে সক্ষম। সুরিয়া মডেলটি ওপেন-সোর্স হিসাবে উপলব্ধ করা হয়েছে, যা বিশ্বব্যাপী গবেষকদের এটি ব্যবহার করে নতুন অ্যাপ্লিকেশন তৈরি করতে উৎসাহিত করবে।