সিরিয়ার লাতাকিয়া প্রদেশে ভয়াবহ দাবানল ছড়িয়ে পড়েছে, যা গাব সমভূমি থেকে শুরু হয়ে হামা প্রদেশের গ্রামগুলিতেও বিস্তার লাভ করেছে। বুধবার থেকে শুরু হওয়া এই আগুন, যা উচ্চ তাপমাত্রা এবং শক্তিশালী বাতাসের কারণে নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে পড়েছে, বনভূমি ও কৃষিজমির ব্যাপক ক্ষতি সাধন করেছে। এই ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে প্রায় ১০,০০০ হেক্টর বনভূমি ও কৃষিজমি ভস্মীভূত হয়েছে, যা ২৮টি গ্রামকে প্রভাবিত করেছে। অগ্নিকাণ্ডের ফলে ১,১২০ জনেরও বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন এবং প্রায় ৫,০০০ মানুষ শ্বাসকষ্টে ভুগছেন।
লাতাকিয়া প্রদেশের সিভিল ডিফেন্সের পরিচালক আব্দুল কাফি কিয়াল জানিয়েছেন যে, দুর্গম ভূখণ্ড, তীব্র বাতাস, ঘন বন এবং জলের অভাব আগুন নিয়ন্ত্রণে প্রধান বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তিনি আরও জানান যে, কিছু এলাকায় আগুন পুনরায় জ্বলে উঠেছে, যা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সৃষ্ট উচ্চ তাপমাত্রা এবং শুষ্ক আবহাওয়া এই দাবানলের অন্যতম প্রধান কারণ। সিরিয়ার বনভূমিগুলি, যা দেশের মোট এলাকার মাত্র ২.৭% জুড়ে বিস্তৃত, তা এই ধরনের দুর্যোগের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। গত কয়েক বছরে, সিরিয়া তার বনভূমির প্রায় ২৮% হারিয়েছে, যা পরিবেশগত ভারসাম্যের উপর গুরুতর প্রভাব ফেলেছে। এই সংকট মোকাবেলায়, সিরিয়ার সিভিল ডিফেন্স দলগুলি বনভূমিতে ফায়ারলাইন তৈরি করে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করছে। ৭৩ কিলোমিটার দীর্ঘ ফায়ারলাইন তৈরি করা হয়েছে, যা আগুন ছড়িয়ে পড়া রোধ করতে এবং অগ্নিনির্বাপক দলগুলির প্রবেশ সহজ করতে সহায়ক হবে। এই প্রচেষ্টায় স্থানীয় বাসিন্দারাও সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করছেন। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ও এই দুর্যোগ মোকাবেলায় সহায়তার হাত বাড়িয়েছে। তুরস্ক, জর্ডান, ইরাক, লেবানন এবং কাতারের মতো দেশগুলি অগ্নিনির্বাপক বিমান এবং স্থল দল পাঠিয়ে সিরিয়াকে সহায়তা করছে। এই আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সিরিয়ার দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সক্ষমতা বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। এই দাবানল সিরিয়ার পরিবেশগত ও মানবিক সংকটকে আরও গভীর করেছে। বাস্তুচ্যুত পরিবারগুলির পুনর্বাসন এবং ক্ষতিগ্রস্ত বনভূমি পুনরুদ্ধারের জন্য দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ করা প্রয়োজন। এই সংকট থেকে শিক্ষা নিয়ে, সিরিয়াকে অবশ্যই জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলায় আরও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে এবং পরিবেশ সুরক্ষায় বিনিয়োগ বাড়াতে হবে।