আগামী ৪৮ ঘন্টার মধ্যে ভূ-চৌম্বকীয় ঝড় পরিস্থিতি অব্যাহত থাকার এবং আরও তীব্র হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সাম্প্রতিক সৌর শিখার কারণে করোনাল মাস ইজেকশন (CME) পৃথিবীর চৌম্বকীয় ক্ষেত্রের সাথে মিথস্ক্রিয়া করছে, যার ফলে অস্বাভাবিকভাবে নিম্ন অক্ষাংশে অরোরা দেখা যাচ্ছে। এই সৌর ঘটনাগুলি উপগ্রহ পরিচালনা এবং রেডিও যোগাযোগকেও প্রভাবিত করতে পারে। মহাকাশ আবহাওয়া সংস্থাগুলি পরিস্থিতির উপর নিবিড়ভাবে নজর রাখছে। বর্তমান সৌর চক্র তার সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছানোর কাছাকাছি, যা এই ধরনের ঘটনার ফ্রিকোয়েন্সি এবং তীব্রতা বৃদ্ধিতে অবদান রাখছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সৌর শিখা থেকে নির্গত উচ্চ-শক্তির কণাগুলি পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করে আয়নোস্ফিয়ারকে প্রভাবিত করতে পারে। এর ফলে রেডিও যোগাযোগে ব্যাঘাত ঘটতে পারে এবং জিপিএস (GPS) সিস্টেমের নির্ভুলতা কমে যেতে পারে। এমনকি পাওয়ার গ্রিডগুলিও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, যা ব্যাপক বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণ হতে পারে। যেমন, ১৯৮৯ সালে একটি সৌর ঝড়ের কারণে কানাডার কুইবেকে নয় ঘণ্টা বিদ্যুৎ বিভ্রাট হয়েছিল। মহাকাশ সংস্থাগুলি, যেমন নাসা (NASA) এবং ন্যাশনাল ওশেনিক অ্যান্ড অ্যাটমোস্ফিয়ারিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (NOAA), এই পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে। তারা সৌর শিখা এবং করোনাল মাস ইজেকশন (CME) সনাক্ত করতে এবং পূর্বাভাস দিতে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে। এই সংস্থাগুলি মহাকাশ আবহাওয়ার পূর্বাভাস প্রদান করে, যা প্রযুক্তি-নির্ভর শিল্পগুলিকে সম্ভাব্য প্রভাব মোকাবেলায় সহায়তা করে। অরোরাগুলি সাধারণত মেরু অঞ্চলের কাছাকাছি দেখা গেলেও, শক্তিশালী সৌর ঝড়ের সময় এগুলি অনেক নিম্ন অক্ষাংশে, এমনকি ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চল এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণাঞ্চল পর্যন্ত দেখা যেতে পারে। সম্প্রতি, মে ২০২৪-এ একটি শক্তিশালী ভূ-চৌম্বকীয় ঝড় দুই দশকের মধ্যে পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী ঝড় ছিল এবং এটি রেকর্ড সংখ্যক অরোরা প্রদর্শন করেছিল। এই বর্ধিত সৌর কার্যকলাপের দীর্ঘমেয়াদী প্রভাবগুলি বৈজ্ঞানিক গবেষণার একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কর্তৃপক্ষগুলি সংবেদনশীল ইলেকট্রনিক সরঞ্জাম ব্যবহারকারী এবং মেরু অঞ্চলের কাছাকাছি বিমান চলাচলকারী ব্যক্তিদের সতর্কতা অবলম্বন করার পরামর্শ দিয়েছে। এই ধরনের ঘটনাগুলি আমাদের প্রযুক্তিগত পরিকাঠামোর উপর উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলতে পারে এবং এর জন্য প্রস্তুতি ও সচেতনতা অপরিহার্য।