লাস ভেগাস উপত্যকায় মশার সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় জনস্বাস্থ্যের উপর উদ্বেগ বাড়ছে। এই মরু অঞ্চলের শুষ্ক আবহাওয়ার মধ্যেও মশার এই অপ্রত্যাশিত বিস্তার ঘটেছে, যা পরিবেশগত পরিবর্তনের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার এক নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। ইউনিভার্সিটি অফ নেভাদা, লাস ভেগাসের (UNLV) গবেষকদের মতে, স্থানীয় মশার প্রজাতিগুলি কেবল টিকে থাকাই নয়, বরং এই প্রতিকূল পরিবেশেও নিজেদের বিস্তার ঘটাচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা, যেমন UNLV-এর পরিবেশ ও বৈশ্বিক স্বাস্থ্য বিভাগের অধ্যাপক লুইসা মেসেঞ্জার, উল্লেখ করেছেন যে মরুভূমির মতো শুষ্ক পরিবেশে মশার বিস্তার অস্বাভাবিক মনে হলেও, এখানকার নির্দিষ্ট কিছু প্রজাতি স্থানীয় বাস্তুতন্ত্রের সঙ্গে নিজেদের খাপ খাইয়ে নিয়েছে। এর মধ্যে কিউলেক্স (Culex) মশা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য, যা ওয়েস্ট নাইল ভাইরাসের (West Nile virus) বাহক হিসেবে পরিচিত। এছাড়াও এডিস ইজিপ্টি (Aedes aegypti) মশা ডেঙ্গু (dengue) রোগের প্রধান বাহক হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। আরও উদ্বেগের বিষয় হলো, লাস ভেগাসের মশাগুলি প্রচলিত কীটনাশকের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তুলছে। UNLV-এর গবেষণা অনুযায়ী, এই মশাগুলি স্বাভাবিক মাত্রার চেয়ে অনেক বেশি ঘনত্বের কীটনাশকও সহ্য করতে পারছে, যা মশা নিয়ন্ত্রণ প্রচেষ্টাকে আরও জটিল করে তুলেছে।
এই পরিস্থিতিকে 'টাইম বোমার' সঙ্গে তুলনা করা হচ্ছে, বিশেষ করে যখন উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকায় ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ২০২৪ সালে এই দুই মহাদেশে ১৩ মিলিয়নেরও বেশি ডেঙ্গু সংক্রমণের খবর পাওয়া গেছে। লাস ভেগাস প্রতি বছর বিশ্বজুড়ে প্রায় ৪৮ মিলিয়ন পর্যটকদের আকর্ষণ করে। এই বিপুল সংখ্যক পর্যটকের আনাগোনার কারণে স্থানীয়ভাবে রোগ সংক্রমণের ঝুঁকিও বেড়ে যায়। অল্প কিছু মশার কামড়েই রোগের স্থানীয় বিস্তার শুরু হতে পারে।
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবও এই সমস্যাকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে। বিশ্ব উষ্ণায়ন এবং পরিবর্তিত আবহাওয়ার ধরণ মশাগুলির বসবাসের এবং বংশবৃদ্ধির জন্য নতুন অঞ্চল তৈরি করছে। এর ফলে, ঐতিহাসিকভাবে মশা-বাহিত রোগের কম ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চলগুলিতেও সংক্রমণের আশঙ্কা বাড়ছে। দক্ষিণ নেভাদা স্বাস্থ্য জেলা (Southern Nevada Health District) মশা পর্যবেক্ষণ কার্যক্রম পরিচালনা করছে এবং ২০২৩ সালে ওয়েস্ট নাইল ভাইরাসে ২৬ জন আক্রান্ত হয়েছিল। যদিও ২০২৫ সালের মাঝামাঝি পর্যন্ত কোনো মানব সংক্রমণের খবর পাওয়া যায়নি, তবুও বিভিন্ন জিপ কোডে মশার মধ্যে ভাইরাসের উপস্থিতি শনাক্ত করা হয়েছে, যা চলমান ঝুঁকি নির্দেশ করে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, একটি সমন্বিত মশা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির অভাব এই পরিস্থিতিকে আরও খারাপ করছে। বর্তমানে, মশা নিয়ন্ত্রণ প্রচেষ্টাগুলি বিভিন্ন পৌরসভা এবং ব্যক্তিগত উদ্যোগের মধ্যে বিভক্ত, যা কার্যকর প্রতিরোধে বাধা সৃষ্টি করছে। এই সমস্যা মোকাবিলায় একটি দেশব্যাপী মশা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির প্রয়োজনীয়তা অনুভূত হচ্ছে। বাসিন্দাদের ব্যক্তিগত সুরক্ষার জন্য মশা তাড়ানোর স্প্রে ব্যবহার, লম্বা হাতাযুক্ত পোশাক পরা এবং বাড়ির আশেপাশে জমে থাকা জল অপসারণের মতো পদক্ষেপ গ্রহণের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।