হাওয়াইয়ের বিগ আইল্যান্ডে অবস্থিত কিলৌয়েয়া আগ্নেয়গিরিটি তার ৩১তম পর্বের অগ্ন্যুৎপাতের মাধ্যমে তার জ্বলন্ত শক্তি প্রদর্শন করছে, যা ২২শে আগস্ট, ২০২৫ তারিখে শুরু হয়েছিল। এই মহাকাব্যিক ঘটনায়, লাভা ফোয়ারাগুলি প্রায় ৩০ মিটার (১০০ ফুট) উচ্চতায় বিস্ফোরিত হচ্ছে, যা আগ্নেয়গিরির শীর্ষের জ্বালামুখ থেকে নির্গত হচ্ছে।
বিশ্বজুড়ে সবচেয়ে সক্রিয় আগ্নেয়গিরিগুলির মধ্যে একটি হিসাবে, কিলৌয়েয়া বর্তমানে তার জ্বালামুখের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রয়েছে এবং কোনও আবাসিক এলাকায় তাৎক্ষণিক বিপদ সৃষ্টি করছে না। হাওয়াই ভলকানোস ন্যাশনাল পার্কে, প্রকৃতিপ্রেমীরা এই অসাধারণ দৃশ্যটি প্রত্যক্ষ করার সুযোগ পাচ্ছেন। মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ (USGS) দ্বারা স্থাপিত ক্যামেরাগুলির মাধ্যমে লাইভ সম্প্রচার দর্শকদের এই জ্বলন্ত প্রদর্শনীতে যুক্ত করছে। ঐতিহ্যবাহী হাওয়াইয়ান বিশ্বাস অনুসারে, হালেমাউমাউ জ্বালামুখ আগ্নেয়গিরির দেবী পেলে-এর বাসস্থান। সাম্প্রতিক অগ্ন্যুৎপাতকে তাঁরই প্রকাশ হিসাবে দেখা হচ্ছে, যা এই প্রাকৃতিক ঘটনাকে এক আধ্যাত্মিক মাত্রা প্রদান করেছে।
ঐতিহাসিকভাবে, কিলৌয়েয়ার অগ্ন্যুৎপাত স্থানীয় পরিবেশ এবং অর্থনীতির উপর গভীর প্রভাব ফেলেছে। বিশাল এলাকা লাভা দ্বারা আবৃত হয়েছে, যা বাস্তুতন্ত্রকে প্রভাবিত করেছে এবং অর্থনৈতিক ক্ষতি সাধন করেছে। আগ্নেয়গিরির গ্যাস নির্গমনও বায়ুর গুণমান এবং জনস্বাস্থ্যের জন্য উদ্বেগের কারণ। বিশেষ করে সালফার ডাই অক্সাইড (SO2) গ্যাস বায়ুমণ্ডলে সালফিউরিক অ্যাসিডে রূপান্তরিত হয়ে আগ্নেয়গিরির ধোঁয়াশা (vog) তৈরি করে, যা শ্বাসকষ্ট এবং অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। USGS-এর মতে, এই গ্যাস নির্গমনের হার প্রায় ৫০,০০০ টন প্রতিদিন হতে পারে।
কর্তৃপক্ষ এবং USGS আগ্নেয়গিরির কার্যকলাপ নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে এবং সম্ভাব্য প্রভাব যেমন আগ্নেয়গিরির ধোঁয়াশা (vog) এবং লাভা খণ্ড সম্পর্কে সতর্কবার্তা জারি করছে। দর্শনার্থীদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে চিহ্নিত পথগুলিতে থাকার এবং নিরাপত্তা পরিস্থিতি সম্পর্কে সচেতন থাকার জন্য। যদিও এই অগ্ন্যুৎপাতটি একটি শ্বাসরুদ্ধকর দৃশ্য, এটি প্রকৃতির শক্তি এবং এর সাথে সম্পর্কিত ঝুঁকিগুলি সম্পর্কেও আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়। এই অগ্ন্যুৎপাতটি চতুর্থবারের মতো গত ২০০ বছরে কিলৌয়েয়ার একটি পুনরাবৃত্তিমূলক ঘটনা, যা আগ্নেয়গিরির দীর্ঘস্থায়ী এবং গতিশীল প্রকৃতির ইঙ্গিত দেয়। ১৯৮৩ সালে শুরু হওয়া অগ্ন্যুৎপাত ৪৪টি ফোয়ারা পর্বের মাধ্যমে তিন বছর ধরে চলেছিল, যা এই বর্তমান ঘটনার চেয়েও বেশি দীর্ঘস্থায়ী ছিল।
কিলৌয়েয়ার অগ্ন্যুৎপাতগুলি কেবল পরিবেশগত প্রভাবই ফেলে না, বরং স্থানীয় অর্থনীতিতেও উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আনে। ২০১৯ সালের একটি প্রতিবেদন অনুসারে, পার্কের দর্শনার্থীদের ব্যয় প্রায় ৯৪ মিলিয়ন ডলার কমে গিয়েছিল, যা আগের বছরের তুলনায় একটি বড় পতন। এর কারণ ছিল পার্কের দীর্ঘমেয়াদী বন্ধ এবং অগ্ন্যুৎপাতের কারণে সৃষ্ট অনিশ্চয়তা। এই ঘটনাগুলি স্থানীয় অর্থনীতিতে প্রায় ১,০৪০টি চাকরিকে প্রভাবিত করেছিল। তবে, এই অগ্ন্যুৎপাতগুলি নতুন ভূমি তৈরি করে হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জের প্রাকৃতিক রূপান্তরকেও প্রতিফলিত করে, যা দেবীর পেলে-এর সৃষ্টিশীল এবং ধ্বংসাত্মক উভয় প্রকৃতিরই প্রতীক।