টোকিওতে টানা ১০ দিন ধরে তাপমাত্রা ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস অতিক্রম করেছে, যা ১৮৭৫ সালের পর একটি অভূতপূর্ব ঘটনা। এই চরম তাপপ্রবাহ জাপানকে জুন ও জুলাই মাস জুড়ে সর্বকালের উষ্ণতম করে তুলেছে, যার ফলে দেশব্যাপী স্বাস্থ্য ও কৃষি খাতে গভীর সংকট দেখা দিয়েছে।
এই তীব্র তাপপ্রবাহের কারণে দেশব্যাপী ৫৩,০০০-এর বেশি মানুষ হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। জাপান আবহাওয়া সংস্থা (JMA) এই দীর্ঘস্থায়ী তাপপ্রবাহের জন্য শক্তিশালী উচ্চচাপ বলয় এবং জলবায়ু পরিবর্তনকে দায়ী করেছে। কর্তৃপক্ষ বাসিন্দাদের বাড়ির ভিতরে থাকতে এবং শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত স্থান ব্যবহার করার পরামর্শ দিচ্ছে, বিশেষ করে বয়স্ক, শিশু এবং দীর্ঘস্থায়ী রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য এটি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। হিটস্ট্রোক ছাড়াও, চরম তাপমাত্রা গর্ভবতী মহিলাদের জন্য স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়িয়েছে, যেমন প্ল্যাসেন্টাল অ্যাব্রাপশনের (গর্ভফুল বিচ্ছিন্ন হওয়া) সম্ভাবনা বৃদ্ধি। ডায়াবেটিস বা শ্বাসকষ্টের মতো দীর্ঘস্থায়ী রোগে আক্রান্তদের উপসর্গও গুরুতর হতে পারে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সতর্ক করেছে যে ২০°C-এর উপরে প্রতি ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা বৃদ্ধির জন্য কর্মীর উৎপাদনশীলতা ২-৩% হ্রাস পেতে পারে, যা অর্থনীতিতেও প্রভাব ফেলছে।
চরম তাপমাত্রা জাপানের কৃষিখাতকেও মারাত্মকভাবে প্রভাবিত করেছে। উত্তর-পূর্বাঞ্চলের ধান ফসলগুলি খরা এবং কীটপতঙ্গের উপদ্রবের সম্মুখীন হচ্ছে। বিশেষ করে নিইগাতা প্রদেশের কোশিহিকারি ধানের মতো উচ্চমানের চালের উৎপাদন মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যেখানে সাধারণত ৬৯% চাল 'টপ-গ্রেড' থাকে, সেখানে এই বছর তা মাত্র ৩%-এ নেমে এসেছে, যা কৃষকদের আয়কে গুরুতরভাবে প্রভাবিত করেছে। উষ্ণ সমুদ্রের তাপমাত্রা সামুদ্রিক খাবারের উৎপাদন কমিয়ে দিয়েছে, যার ফলে সি আর্চিনের মতো পণ্যের দাম উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সাury, স্কুইড এবং ম্যাকেরেলের মতো ঐতিহ্যবাহী মাছের উৎপাদন হ্রাস পেয়েছে, যা জাপানের মৎস্য শিল্পের জন্য একটি দীর্ঘমেয়াদী চ্যালেঞ্জ তৈরি করছে।
জাপানের গড় সমুদ্রপৃষ্ঠের তাপমাত্রা গত ১০০ বছরে ১.২৪°C বৃদ্ধি পেয়েছে, যা বিশ্ব গড়ের দ্বিগুণ। বিজ্ঞানীরা মনে করেন, এই ধরনের চরম আবহাওয়ার ঘটনাগুলি মানব-প্ররোচিত জলবায়ু পরিবর্তনের ফলেই ঘটছে। এই অভূতপূর্ব পরিস্থিতি কেবল একটি চ্যালেঞ্জ নয়, বরং এটি আমাদের পরিবেশের সাথে আমাদের সম্পর্ককে নতুনভাবে মূল্যায়ন করার এবং আরও স্থিতিশীল ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যাওয়ার একটি সুযোগ।