ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য আসাম, যা তার উৎকৃষ্ট আসাম ও দার্জিলিং চায়ের জন্য বিশ্বজুড়ে পরিচিত, বর্তমানে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। দীর্ঘস্থায়ী খরা এবং ক্রমবর্ধমান তাপমাত্রা এখানকার চা উৎপাদনকে উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস করেছে, যা এই গুরুত্বপূর্ণ শিল্পের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। ২০২৪ সালে আসামের চা উৎপাদন প্রায় ৭.৮% কমে দাঁড়িয়েছে ১.৩ বিলিয়ন কিলোগ্রামের নিচে। একই সময়ে, চায়ের দাম প্রায় ২০% বৃদ্ধি পেয়েছে।
অভিজ্ঞ চা শ্রমিকরা জানাচ্ছেন যে, গরম আবহাওয়ার কারণে তাদের দৈনিক উৎপাদন কমে গেছে; যেখানে আগে তারা ১১০ কেজি চা তুলতেন, সেখানে এখন মাত্র ৬০ কেজি তুলতে পারছেন। এই কম উৎপাদন শিল্পটির উপর অতিরিক্ত আর্থিক চাপ সৃষ্টি করছে, যা ইতিমধ্যেই সীমিত মুনাফা এবং ঋণের ভারে জর্জরিত। এর ফলে বাগান রক্ষণাবেক্ষণ, পুরনো চা গাছের প্রতিস্থাপন এবং জলবায়ু-সহনশীল নতুন জাতের চা উদ্ভাবনে বিনিয়োগ করা কঠিন হয়ে পড়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তন এবং কীটপতঙ্গের উপদ্রব আসাম চায়ের গুণমানকে মারাত্মকভাবে প্রভাবিত করেছে, যা একসময় অতুলনীয় ছিল।
পরিস্থিতি আরও জটিল হয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের নতুন নিয়মের কারণে। ২০২৫ সালের মে মাসে কার্যকর হতে যাওয়া এই নিয়মে চায়ে নির্দিষ্ট কিছু কীটনাশকের ব্যবহার সীমিত করা হবে। এই পরিবর্তনগুলি ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং যুক্তরাজ্যে আসাম চায়ের রপ্তানির উপর সম্ভাব্য আঘাত হানতে পারে, যা এই খাতের জন্য একটি নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে। এই নতুন নিয়মগুলি থায়ামেথোক্সাম, ক্লোথিয়ানিডিন এবং থায়াক্লোপ্রিডের মতো কীটনাশকের সর্বোচ্চ অবশিষ্টাংশ সীমা (MRL) কমিয়ে দেবে, যা প্রায় ৪০ মিলিয়ন কেজি আসাম চায়ের রপ্তানিকে প্রভাবিত করতে পারে।
এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায়, ভারতীয় চা সংস্থাগুলি ইউরোপীয় ইউনিয়নের কাছে এই রাসায়নিকগুলি পর্যায়ক্রমে বন্ধ করার এবং বিকল্প খুঁজে বের করার জন্য পাঁচ বছরের সময় চেয়েছে। কূটনৈতিক আলোচনাও চলছে। ভারতেও, খাদ্য নিরাপত্তা ও মান কর্তৃপক্ষ (FSSAI) চা উৎপাদনে ব্যবহৃত পাঁচটি সাধারণ কীটনাশকের জন্য নতুন MRLs চালু করেছে, যা আন্তর্জাতিক মানের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায়, আসামের চা শিল্প সেচ সুবিধা, বৃষ্টির জল সংগ্রহ, ছায়া গাছের রোপণ এবং জলবায়ু-প্রতিরোধী নতুন চা জাতের উন্নয়নে সরকারি সহায়তার আহ্বান জানিয়েছে। এই সংকট থেকে উত্তরণের জন্য উদ্ভাবনী সমাধান এবং দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ করা অপরিহার্য।