মিশরের পশ্চিমাঞ্চলে আবিষ্কৃত প্রাচীন কপটিক শহর: ধর্মীয় উত্তরণের সাক্ষী
সম্পাদনা করেছেন: Tetiana Martynovska 17
মিশরের পশ্চিমাঞ্চলে, বিশেষত খারগা মরুদ্যানের আইন আল-খারাব প্রত্নতাত্ত্বিক স্থানে, একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রাচীন কপটিক শহর আবিষ্কৃত হয়েছে। সুপ্রিম কাউন্সিল অফ অ্যান্টিকুইটিস (SCA) কর্তৃক জুলাই ২০২৫-এ এই আবিষ্কারের ঘোষণা দেওয়া হয়। এটি মিশরীয় সভ্যতার এক যুগান্তকারী সময়, অর্থাৎ পৌত্তলিকতা থেকে খ্রিস্টধর্মে উত্তরণের এক বিরল চিত্র তুলে ধরে। শহরটি খ্রিস্টীয় তৃতীয় থেকে সপ্তম শতাব্দীর মধ্যে নির্মিত হয়েছিল এবং এটি সেই সময়ের ধর্মীয় ও সামাজিক জীবনের মূল্যবান অন্তর্দৃষ্টি প্রদান করে।
এই প্রত্নতাত্ত্বিক খননে সুসংরক্ষিত মাটির ইট নির্মিত আবাসিক কাঠামো আবিষ্কৃত হয়েছে। এখানে প্লাস্টার করা দেয়াল, চুল্লি এবং খাদ্য ও শস্য সংরক্ষণের জন্য ব্যবহৃত বড় মাটির পাত্র পাওয়া গেছে। এছাড়াও, ওস্ট্রাকা, মৃৎপাত্রের ভগ্নাংশ, কাঁচ এবং পাথরের টুকরো সহ বিভিন্ন প্রত্নবস্তু এবং কয়েকটি সমাধিস্থলও পাওয়া গেছে, যা সেই সময়ের দৈনন্দিন জীবনযাত্রার একটি চিত্র তুলে ধরে।
এই আবিষ্কারের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য দিক হলো দুটি প্রাচীন খ্রিস্টীয় গির্জার সন্ধান। এর মধ্যে একটি হলো একটি বিশাল ব্যাসিলিকা-শৈলীর গির্জা, যার একটি কেন্দ্রীয় হল এবং পার্শ্ববর্তী অংশ রয়েছে। দ্বিতীয়টি একটি ছোট, আয়তক্ষেত্রাকার গির্জা, যার অভ্যন্তরীণ দেয়ালে স্পষ্ট কপটিক শিলালিপি দেখা যায়। এই গির্জাগুলি সেই সময়ের স্থাপত্যশৈলী এবং ধর্মীয় অনুশীলনের এক গুরুত্বপূর্ণ নিদর্শন।
বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য হলো যিশু খ্রিস্টের একটি রোগীকে সুস্থ করার দৃশ্যের ম্যুরাল চিত্র। মিশরের মরুভূমির মরুদ্যানগুলিতে প্রাপ্ত এই ধরনের খ্রিস্টীয় শিল্পকর্ম অত্যন্ত বিরল এবং এটি প্রাথমিক খ্রিস্টীয় আইকনোগ্রাফির একটি গুরুত্বপূর্ণ উদাহরণ। এই ম্যুরালটি সেই সময়ের ধর্মীয় বিশ্বাস এবং শিল্পকলার মেলবন্ধনের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।
পর্যটন ও পুরাকীর্তি মন্ত্রী শেরিফ ফাথি বলেছেন যে এই আবিষ্কারটি মিশরের সভ্যতার গভীরতা ও বৈচিত্র্যকে তুলে ধরে, বিশেষ করে একটি রূপান্তরমূলক সময়ে। তিনি আরও বলেন, এটি মিশরে ধর্মীয় উত্তরণ এবং সহনশীলতার মূল্যবোধ বোঝার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। SCA-এর মহাসচিব, মোহাম্মদ ইসমাইল খালেদ, খারগা মরুদ্যানের কপটিক যুগের ধর্মীয় ও সামাজিক কেন্দ্র হিসেবে এই স্থানের ঐতিহাসিক গুরুত্বের উপর জোর দিয়েছেন।
এই আবিষ্কারটি মিশরের সাংস্কৃতিক পর্যটনকে আরও সমৃদ্ধ করবে এবং ধর্মীয় ও ঐতিহাসিক বিবর্তনের বৈশ্বিক বর্ণনায় এর ভূমিকাকে শক্তিশালী করবে। এটি মিশরীয় প্রত্নতত্ত্বের গভীরে লুকিয়ে থাকা ঐতিহাসিক স্তরগুলি উন্মোচনের এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। এই প্রত্নতাত্ত্বিক স্থানটি কেবল অতীতের একটি প্রতিচ্ছবিই নয়, বরং এটি একটি সমৃদ্ধশালী অতীত এবং ভবিষ্যতের জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষাও বটে।
উৎসসমূহ
Travel And Tour World
An early Coptic city unveiled in Egypt’s Western Desert
Discovery of ancient Coptic city ‘enhances our understanding of early Christianity in Egypt’
Major Archaeological Discovery in Egypt’s Western Desert Unveils Ancient City from Pagan to Christian Era
Early Coptic-Era City Discovered in Egypt’s Western Desert
এই বিষয়ে আরও খবর পড়ুন:
আপনি কি কোনো ত্রুটি বা অসঠিকতা খুঁজে পেয়েছেন?
আমরা আপনার মন্তব্য যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিবেচনা করব।
