উত্তর অস্ট্রেলিয়ার উপকূলীয় অঞ্চলে সামুদ্রিক জীববৈচিত্র্য রক্ষায় চার্লস ডারউইন বিশ্ববিদ্যালয় (CDU) এবং অ্যানিন্ডিলিওয়াকো ভূমি ও সমুদ্র রক্ষীরা (Anindilyakwa Land and Sea Rangers) অত্যাধুনিক ড্রোন প্রযুক্তি ব্যবহার করে পরিত্যক্ত মাছ ধরার জাল বা 'ভুতুড়ে জাল' (ghost nets) শনাক্ত ও অপসারণে এক যুগান্তকারী উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এই পরিত্যক্ত জালগুলি সমুদ্রের বাস্তুতন্ত্রের জন্য মারাত্মক হুমকি, বিশেষ করে বিপন্ন সামুদ্রিক কচ্ছপ এবং ডুগং-এর মতো প্রাণীদের জীবন বিপন্ন করে তোলে। অ্যানিন্ডিলিওয়াকো আদিবাসী সুরক্ষিত এলাকার প্রায় ৮৩.৭৪ কিলোমিটার দুর্গম উপকূলীয় অঞ্চল জুড়ে হাইপারস্পেকট্রাল সেন্সরযুক্ত ড্রোন ব্যবহার করে সমীক্ষা চালানো হয়েছে। এই ড্রোন-ভিত্তিক পদ্ধতিটি প্রচলিত হেলিকপ্টার সমীক্ষার তুলনায় অনেক বেশি কার্যকর এবং সাশ্রয়ী। জুন ২০২৫ নাগাদ, এই সমীক্ষার মাধ্যমে ছোট টুকরা থেকে শুরু করে পাঁচ মিটারের বেশি দৈর্ঘ্যের মোট ৭২টি ভুতুড়ে জাল শনাক্ত করা হয়েছে। ড্রোন থেকে প্রাপ্ত নির্ভুল তথ্য রেঞ্জারদের লক্ষ্যযুক্ত অপসারণ অভিযান কার্যকরভাবে পরিকল্পনা করতে সহায়তা করছে।
এই উদ্যোগের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো স্থানীয় রক্ষীদের প্রশিক্ষণ প্রদান। অ্যানিন্ডিলিওয়াকো রেঞ্জারদের মধ্যে দশজন "সার্টিফিকেট III ইন এভিয়েশন (রিমোট পাইলট)" অর্জন করেছেন, যা তাদের নিরাপদে এবং আইনত ড্রোন পরিচালনা করার ক্ষমতা প্রদান করে। সিডিইউ-এর পিএইচডি গবেষক আলিশা ভালা উল্লেখ করেছেন যে, ড্রোন প্রযুক্তির ব্যবহার উত্তর অস্ট্রেলিয়ার মতো প্রত্যন্ত অঞ্চলে সমীক্ষার জন্য একটি কৌশলগত এবং কার্যকর হাতিয়ার হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে। তিনি আরও বলেন, "ড্রোনগুলি ব্যবহারকারী-নিয়ন্ত্রিত আকাশপথে পর্যবেক্ষণের একটি সমাধান সরবরাহ করে, যা উত্তর অস্ট্রেলিয়ার জন্য বিশেষভাবে উপযুক্ত, যেখানে সমীক্ষার প্রচেষ্টা প্রায়শই প্রবেশাধিকার এবং ঋতুগত সীমাবদ্ধতার সম্মুখীন হয়।" অ্যানিন্ডিলিওয়াকো ল্যান্ড অ্যান্ড সি রেঞ্জার-অ্যাকোয়াটিক বায়োসিকিউরিটি অফিসার বেঞ্জামিন ম্যাকআর্ডল যোগ করেছেন যে, উচ্চ-রেজোলিউশনের চিত্র এবং নির্ভুল জিপিএস স্থানাঙ্ক ভুতুড়ে জাল শনাক্তকরণের ক্ষেত্রে সমীক্ষার পরিকল্পনাকে অনেক উন্নত করেছে। এই প্রকল্পটি দেখায় কিভাবে উন্নত বিমান প্রযুক্তি, বিশেষ করে প্রত্যন্ত অঞ্চলে পরিবেশ সংরক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। এই ধরণের প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন এবং স্থানীয় সম্প্রদায়ের সক্রিয় অংশগ্রহণ সামুদ্রিক আবর্জনা ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে একটি কার্যকর মডেল তৈরি করেছে। এই প্রচেষ্টা কেবল পরিবেশ সুরক্ষাই নয়, বরং স্থানীয় জনগোষ্ঠীর ক্ষমতায়ন এবং জ্ঞান বৃদ্ধিতেও সহায়ক হচ্ছে, যা এই অঞ্চলের প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণে এক নতুন আশার আলো দেখাচ্ছে। অস্ট্রেলিয়ান সরকারের "ঘোস্ট নেটস ইনোভেটিভ সলিউশনস গ্রান্ট" এই প্রকল্পের জন্য তহবিল সরবরাহ করছে। অপসারণের জন্য 'জাররাangwa' নামে একটি বিশেষ নির্মিত জাহাজও ব্যবহার করা হচ্ছে, যা দুর্গম স্থানে পৌঁছাতে এবং সনাক্তকৃত জালগুলি উদ্ধার করতে সক্ষম।