হ্যালোউইন: পোষ্যদের সুরক্ষায় আরএসপিসিএ ডব্লিউএ-র জরুরি নির্দেশনা

হ্যালোউইন উৎসবের আগমন একদিকে যেমন মানুষের জন্য আনন্দের বার্তা নিয়ে আসে, তেমনই এই সময়ে গৃহপালিত পশুদের নিরাপত্তা ও কল্যাণ নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি হয়ে পড়ে। ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়ার রয়্যাল সোসাইটি ফর দ্য প্রিভেনশন অফ ক্রুয়েলটি টু অ্যানিম্যালস (RSPCA WA) এই বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ জারি করেছে, যা পশুপ্রেমীদের জন্য এক গভীর উপলব্ধির বার্তা বহন করে। উৎসবের কোলাহল এবং অদ্ভুত পোশাকে সজ্জিত মানুষের আনাগোনা পোষা প্রাণীদের জন্য তীব্র মানসিক চাপের কারণ হতে পারে। এই পরিস্থিতিতে, পশুদের বাইরের জগতের অস্থিরতা থেকে দূরে সরিয়ে নিজেদের ভেতরের শান্তিনিকেতনে আশ্রয় দেওয়া প্রয়োজন বলে সংস্থাটি জানিয়েছে।

আরএসপিসিএ ডব্লিউএ পরামর্শ দেয় যে, বাড়ির প্রধান দরজার কোলাহল থেকে দূরে একটি শান্ত ও সুরক্ষিত স্থান তৈরি করা উচিত, যেখানে প্রাণীটি স্বস্তি খুঁজে পাবে। পশুদের মধ্যে অতিরিক্ত কান্নাকাটি বা লুকিয়ে থাকার মতো উদ্বেগের লক্ষণগুলি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা আবশ্যক। মালিকদের সতর্ক থাকতে হবে যেন অতিরিক্ত সাজসজ্জা বা পোশাকের কারণে তাদের স্বাভাবিক চলাফেরা বা শ্বাস-প্রশ্বাসে কোনো বাধা সৃষ্টি না হয়। সাজসজ্জার উপকরণগুলির মধ্যেও বিপদ লুকিয়ে থাকে; ছোট প্লাস্টিকের জিনিসপত্র কৌতূহলী পোষা প্রাণীর পেটে গেলে শ্বাসরোধের ঝুঁকি তৈরি করতে পারে। এছাড়া, বৈদ্যুতিক তার ও আলোর সজ্জা যা তারা চিবিয়ে দেখতে পারে, তা মারাত্মক হতে পারে। নকল মাকড়সার জালগুলি কেবল পোষ্যদের নয়, স্থানীয় বন্যপ্রাণীদেরও জড়িয়ে ফেলে ক্ষতির কারণ হতে পারে।

গবেষণায় দেখা গেছে যে, হ্যালোউইনের সময় দরজায় ক্রমাগত ঘণ্টার শব্দ এবং অপরিচিত পোশাক পরা মানুষের উপস্থিতি অনেক প্রাণীকে ভীত করে তোলে, যা তাদের পালিয়ে যাওয়ার প্রবণতা বাড়ায়। Pet Insurance Australia-এর মুখপাত্র নাদিয়া ক্রাইটন সতর্ক করেছেন যে, প্রতি বছর পোশাকের ত্রুটি থেকে শুরু করে খাদ্য বিষক্রিয়া পর্যন্ত হ্যালোউইন উদযাপনের সাথে যুক্ত দুর্ঘটনা ও অসুস্থতার ঘটনা দেখা যায়। অনেক সাধারণ হ্যালোউইন মিষ্টি কুকুর ও বিড়ালের জন্য বিষাক্ত, বিশেষত চকোলেট এবং জাইলিটল, যা একটি চিনি বিকল্প, তা অত্যন্ত বিপজ্জনক। তাই সমস্ত মিষ্টান্ন সুরক্ষিতভাবে নাগালের বাইরে রাখতে হবে।

পশুদের সুরক্ষার জন্য তাদের পরিচয়পত্র হালনাগাদ রাখা এবং মাইক্রোচিপিং করা অপরিহার্য, কারণ উৎসবের সময় উত্তেজনা বা ভয়ের কারণে তারা বাড়ি থেকে বেরিয়ে যেতে পারে। পশু আচরণ বিশেষজ্ঞ ইসাবেলা ডিউ উল্লেখ করেছেন যে, পোষা প্রাণীরা তাদের চারপাশের পরিবেশের পরিবর্তনকে সহজে গ্রহণ করতে পারে না এবং চাপে থাকলে তাদের পালানোর সম্ভাবনা বাড়ে। যদি পোষ্যকে সাজানোর পরিকল্পনা থাকে, তবে নিশ্চিত করতে হবে যে পোশাকটি আরামদায়ক এবং শ্বাস-প্রশ্বাস বা চলাচলে বাধা সৃষ্টি করছে না। যদি প্রাণীটি অস্বস্তি বোধ করে, তবে সাজসজ্জা খুলে ফেলাই শ্রেয়; এর পরিবর্তে, একটি সাধারণ থিমযুক্ত কলার বা ব্যান্ডানা ব্যবহার করা যেতে পারে। এই সময়ে, মানুষের খাদ্য তাদের প্রিয় সঙ্গীর জন্য ক্ষতিকর হতে পারে, এই বিষয়ে অতিথিদের এবং ছোটদের মনে করিয়ে দেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিটি প্রাণী স্বতন্ত্র, তাই তাদের নিজস্ব স্বাচ্ছন্দ্যের জায়গাটিকে সম্মান জানানোই এই উৎসবের মূল উদ্দেশ্য হওয়া উচিত।