আন্তর্জাতিক মুদ্রা বাজারে মার্কিন ডলারের আধিপত্যকে চ্যালেঞ্জ জানাতে এবং নিজ মুদ্রা ইউয়ানের ব্যবহার বাড়াতে চীন সরকার ইউয়ান-সমর্থিত স্থিতিশীল মুদ্রা (stablecoin) চালুর বিষয়টি বিবেচনা করছে। এই পদক্ষেপটি ক্রিপ্টোকারেন্সি বিষয়ক চীনের পূর্বের কঠোর নীতি থেকে একটি উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন। সাম্প্রতিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, চীনের স্টেট কাউন্সিল ইউয়ানের আন্তর্জাতিকীকরণের জন্য একটি রোডম্যাপ পর্যালোচনা করছে, যার মধ্যে ইউয়ান-সমর্থিত স্থিতিশীল মুদ্রা তৈরি একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এই উদ্যোগের মাধ্যমে চীন বিশ্বব্যাপী ইউয়ানের প্রভাব বৃদ্ধি করতে চায়।
হংকং সম্প্রতি স্থিতিশীল মুদ্রার জন্য একটি নিয়ন্ত্রক কাঠামো তৈরি করেছে, যা এই নতুন মুদ্রার পরীক্ষামূলক ব্যবহারের জন্য একটি উপযুক্ত ক্ষেত্র হতে পারে। বাজারের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে বিশ্বব্যাপী স্থিতিশীল মুদ্রার বাজারে মার্কিন ডলারের অংশ প্রায় ৪৭.১৯%। অন্যদিকে, ইউয়ানের অংশ মাত্র ২.৮৮%। এই ব্যবধান কমাতে এবং আন্তর্জাতিক লেনদেনে ইউয়ানের ব্যবহার বাড়াতে চীন এই ডিজিটাল মুদ্রা চালুর কথা ভাবছে।
এই খবরের প্রভাবে চীনের শেয়ার বাজারে ইতিবাচক সাড়া দেখা গেছে। বিশেষ করে ফিনটেক এবং স্থিতিশীল মুদ্রা খাতের কোম্পানিগুলোর শেয়ারের দাম বেড়েছে। সাংহাই কম্পোজিট ইনডেক্স (Shanghai Composite Index) বিগত এক দশকের সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে, যা এই খাতের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থা নির্দেশ করে। এই সূচকটি ৩,৭৭১.১০ পয়েন্টে পৌঁছেছে।
এই নতুন মুদ্রা চালুর পরিকল্পনা চীনের আর্থিক কৌশলে একটি বড় পরিবর্তন আনবে। এর ফলে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগের প্রবাহে উল্লেখযোগ্য প্রভাব পড়তে পারে এবং বর্তমান বিশ্ব আর্থিক ব্যবস্থায় পরিবর্তন আসতে পারে। তবে, চীনের কঠোর পুঁজি নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা (capital controls) এই স্থিতিশীল মুদ্রাগুলির বাস্তবায়নে একটি বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিতে পারে। এছাড়াও, এই মুদ্রাগুলির নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত সম্ভাব্য উদ্বেগগুলোও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
হংকংয়ের নতুন নিয়ন্ত্রক কাঠামো অনুযায়ী, স্থিতিশীল মুদ্রা ইস্যুকারী সংস্থাগুলোকে স্থানীয়ভাবে নিবন্ধিত হতে হবে, তাদের মুদ্রার সমপরিমাণ রিজার্ভ রাখতে হবে এবং কঠোর অ্যান্টি-মানি লন্ডারিং (AML) ও কাউন্টার-ফিনান্সিং অফ টেরোরিজম (CFT) নিয়ম মেনে চলতে হবে। এই নিয়মগুলো মেনে চললে তবেই তারা লাইসেন্স পাবে। হংকংয়ের এই উদ্যোগ শহরটিকে একটি বৈশ্বিক স্থিতিশীল মুদ্রা কেন্দ্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে এবং ডলারের উপর নির্ভরতা কমাতে সহায়ক হবে।
এই উদ্যোগটি চীনের ডিজিটাল মুদ্রা উদ্ভাবনের মাধ্যমে বিশ্ব অর্থনীতিতে নিজেদের অবস্থান আরও সুদৃঢ় করার একটি প্রচেষ্টা। এটি কেবল ইউয়ানের আন্তর্জাতিকীকরণই নয়, বরং বিশ্বব্যাপী ডিজিটাল মুদ্রার প্রসারেও একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে পারে। এই পদক্ষেপের ফলে আন্তর্জাতিক আর্থিক ব্যবস্থায় একটি নতুন ভারসাম্য তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, যা মার্কিন ডলারের একচেটিয়া আধিপত্যকে চ্যালেঞ্জ জানাতে সক্ষম হবে।