থাইল্যান্ড সরকার তার পর্যটন শিল্পকে পুনরুজ্জীবিত করার জন্য একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ নিয়েছে। আন্তর্জাতিক পর্যটকদের জন্য ২০০,০০০ বিনামূল্যে অভ্যন্তরীণ বিমান টিকিট প্রদানের এই উদ্যোগটি দেশের কম পরিচিত অঞ্চলগুলিতে ভ্রমণকে উৎসাহিত করবে এবং পর্যটন খাতের অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে সহায়তা করবে।
"বাই ইন্টারন্যাশনাল, ফ্রি থাইল্যান্ড ডমেস্টিক ফ্লাইট" (Buy International, Free Thailand Domestic Flights) নামক এই কর্মসূচিটি আগামী সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বর, ২০২৫ পর্যন্ত তিন মাসব্যাপী চলবে। এই কর্মসূচির অধীনে, যে সকল আন্তর্জাতিক পর্যটক থাইল্যান্ডে আসার জন্য সরাসরি বিমান টিকিট বুক করবেন, তারা বিনামূল্যে একটি রাউন্ড-ট্রিপ অভ্যন্তরীণ বিমান টিকিট পাওয়ার যোগ্য হবেন। এর সাথে অতিরিক্ত সুবিধা হিসেবে ২০ কেজি পর্যন্ত বিনামূল্যে চেক-ইন ব্যাগেজও প্রদান করা হবে।
এই উদ্যোগের মূল উদ্দেশ্য হলো পর্যটকদের থাইল্যান্ডের প্রধান শহরগুলির বাইরেও এর সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর কম পরিচিত স্থানগুলি, যেমন ইউনেস্কো-স্বীকৃত শহর এবং অন্যান্য আকর্ষণীয় গন্তব্যগুলি অন্বেষণে উৎসাহিত করা। এই বিনামূল্যে টিকিটগুলি ভ্রমণকারীদের থাইল্যান্ডের বৈচিত্র্যময় ভূখণ্ড এবং সংস্কৃতির গভীরে প্রবেশ করার এক অসাধারণ সুযোগ করে দেবে।
এই কর্মসূচির জন্য সরকার প্রায় ৭০০ মিলিয়ন ভাট (প্রায় ২১.৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার) বাজেট বরাদ্দ করেছে। আশা করা হচ্ছে, এই উদ্যোগের মাধ্যমে প্রায় ৮.৮ বিলিয়ন ভাট (প্রায় ২৭০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার) প্রত্যক্ষ রাজস্ব আদায় হবে এবং এর সামগ্রিক অর্থনৈতিক প্রভাব প্রায় ২১.৮ বিলিয়ন ভাট (প্রায় ৬০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার) পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে। এই বিশাল অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড দেশের স্থানীয় ব্যবসা, হোটেল, রেস্তোরাঁ এবং পর্যটন-সম্পর্কিত পরিষেবাগুলির জন্য নতুন সুযোগ তৈরি করবে।
থাইল্যান্ডের পর্যটন ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় ছয়টি প্রধান বিমান সংস্থার সাথে অংশীদারিত্ব করেছে, যার মধ্যে রয়েছে থাই এয়ারওয়েজ, থাই এয়ারএশিয়া, ব্যাংকক এয়ারওয়েজ, নক এয়ার, থাই লায়ন এয়ার এবং থাই ভিয়েটজেট। এই সমন্বিত প্রচেষ্টা দেশের পর্যটন পরিকাঠামোকে শক্তিশালী করার পাশাপাশি বিমান সংস্থাগুলির জন্যও একটি ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
এই পদক্ষেপটি "অ্যামেজিং থাইল্যান্ড গ্র্যান্ড ট্যুরিজম অ্যান্ড স্পোর্টস ইয়ার ২০২৫" (Amazing Thailand Grand Tourism and Sports Year 2025) প্রচারণার একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। বিগত বছরগুলিতে থাইল্যান্ডের পর্যটন শিল্প কিছু চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হলেও, এই নতুন উদ্যোগটি সেই ধারা পরিবর্তনের একটি শক্তিশালী প্রচেষ্টা। জাপানের অনুরূপ একটি সফল প্রচারণার দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে, থাইল্যান্ডও তার পর্যটকদের দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে দিতে চাইছে, যা কেবল পর্যটন খাতেই গতি আনবে না, বরং স্থানীয় অর্থনীতিকেও চাঙ্গা করবে।
এই উদ্যোগটি উচ্চ-মূল্যের পর্যটকদের আকর্ষণ এবং থাইল্যান্ডের পর্যটন আবেদনকে আরও বৈচিত্র্যময় করার সরকারের বৃহত্তর লক্ষ্যের সাথেও সঙ্গতিপূর্ণ। যখন পর্যটকরা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ভ্রমণ করেন, তখন তারা স্থানীয় সংস্কৃতি, ঐতিহ্য এবং জীবনধারার সাথে আরও গভীরভাবে পরিচিত হন। এটি কেবল পর্যটকদের জন্যই নতুন দিগন্ত উন্মোচন করে না, বরং স্থানীয় সম্প্রদায়গুলির জন্যও অর্থনৈতিক সুযোগ তৈরি করে, বিশেষ করে সেইসব অঞ্চলে যেখানে পর্যটকদের আনাগোনা কম। এই উদ্যোগটি একটি সামগ্রিক উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে, যেখানে প্রতিটি অঞ্চলের মানুষ পর্যটনের সুফল ভোগ করতে পারে এবং পর্যটকরাও থাইল্যান্ডের প্রকৃত বৈচিত্র্য ও আতিথেয়তার অভিজ্ঞতা লাভ করতে পারে।