পাকিস্তান ও ইরাক একটি গুরুত্বপূর্ণ সমঝোতা স্মারক (MoU) স্বাক্ষর করেছে, যার মাধ্যমে দুই দেশের মধ্যে একটি নতুন নৌ পরিষেবা চালু হতে চলেছে। এই উদ্যোগের ফলে পাকিস্তানের গোয়াদর বন্দর এবং ইরাকের উম্ম কাসর বন্দরের মধ্যে সংযোগ স্থাপিত হবে, যা উভয় দেশের মধ্যে সামুদ্রিক সহযোগিতা বৃদ্ধি, বাণিজ্য সম্প্রসারণ এবং তীর্থযাত্রীদের জন্য একটি অত্যাবশ্যকীয় ভ্রমণ বিকল্প তৈরি করবে। পাকিস্তানের নৌপরিবহন মন্ত্রী এবং ইরাকের উপ-রাষ্ট্রদূতের মধ্যে এই চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এই নতুন নৌ পরিষেবা যাত্রী ও পণ্য পরিবহনের পথ সুগম করার পাশাপাশি ধর্মীয় পর্যটনকে উৎসাহিত করবে এবং পাকিস্তানের 'ব্লু ইকোনমি' (নীল অর্থনীতি) লক্ষ্য অর্জনে সহায়ক হবে বলে আশা করা হচ্ছে। বিশেষ করে, ইরানের উপর দিয়ে স্থলপথে ভ্রমণের সাম্প্রতিক বিধিনিষেধের পর, পাকিস্তানি তীর্থযাত্রীদের জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিকল্প হিসেবে কাজ করবে, যারা নাজাফ ও কারবালার মতো পবিত্র শহরগুলোতে ভ্রমণ করেন। প্রতি বছর প্রায় এক মিলিয়ন পাকিস্তানি তীর্থযাত্রী আরবাইন উপলক্ষে ইরাক ভ্রমণ করেন, এবং এই নতুন জলপথ তাদের যাত্রা সহজ ও নিরাপদ করবে।
এই উদ্যোগটি কেবল ধর্মীয় যাত্রার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে না, বরং দুই দেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যকেও উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি করবে। পাকিস্তান বিভিন্ন পণ্যের রপ্তানি বাড়াতে আগ্রহী, যার মধ্যে রয়েছে ওষুধ, মাংস এবং চাল। অন্যদিকে, ইরাকের তেলের চাহিদাও পূরণ করা হবে। এই বাণিজ্য সম্পর্ককে আরও শক্তিশালী করার লক্ষ্যে, পাকিস্তান ইরাকের পটাশিয়াম সালফেটের চাহিদাও পূরণ করতে সক্ষম, কারণ গোয়াদর ফ্রি জোনে এর উৎপাদন সুবিধা রয়েছে। FY2024-এ, পাকিস্তানের ইরাকে রপ্তানি ছিল ৫৪.২৯ মিলিয়ন ডলার এবং আমদানি ছিল ১৪৫.৪৬ মিলিয়ন ডলার, যা মূলত পেট্রোলিয়াম পণ্য। এই নতুন পরিষেবা বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে সহায়ক হবে। এই নৌ পরিষেবা পাকিস্তানের বৃহত্তর আঞ্চলিক সামুদ্রিক সংযোগ স্থাপনের কৌশলের একটি অংশ। পাকিস্তান বর্তমানে ইরান এবং উপসাগরীয় সহযোগিতা পরিষদ (GCC) দেশগুলোর সাথেও অনুরূপ নৌ পরিষেবা চালুর জন্য কাজ করছে। এই উদ্যোগের অংশ হিসেবে, Sea Keepers নামক একটি আন্তর্জাতিক অপারেটরকে পাকিস্তান প্রথমবার এই ধরনের রুটের জন্য লাইসেন্স প্রদান করেছে। এই পদক্ষেপ পাকিস্তানের সামুদ্রিক অর্থনীতিকে শক্তিশালী করবে এবং আঞ্চলিক পর্যটন ও বাণিজ্যের প্রসার ঘটাবে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এই নতুন জলপথ পাকিস্তানের গোয়াদর বন্দরকে একটি প্রধান সামুদ্রিক কেন্দ্রে পরিণত করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। গোয়াদর বন্দর দক্ষিণ এশিয়াকে মধ্যপ্রাচ্য এবং তার বাইরের অঞ্চলের সাথে সংযুক্ত করার একটি কৌশলগত প্রবেশদ্বার হিসেবে কাজ করবে। এই পরিষেবা পরিবহন খরচ কমাতে, লজিস্টিকস উন্নত করতে এবং আঞ্চলিক বাণিজ্যকে উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়াতে সাহায্য করবে। এটি দুই দেশের মধ্যে মানুষের মধ্যে সম্পর্ক জোরদার করবে এবং বন্দর অবকাঠামোতে বিনিয়োগকে উৎসাহিত করবে। এই উদ্যোগটি পাকিস্তানের ব্লু ইকোনমি কৌশলকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাবে, যা সমুদ্র সম্পদের টেকসই ব্যবহার এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির উপর জোর দেয়।