ভূ-রাজনৈতিক অস্থিরতা ও অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার মাঝে সোনার দামে ঐতিহাসিক উল্লম্ফন
সম্পাদনা করেছেন: Svetlana Velgush
২০২৫ সালের ৮ই অক্টোবর, বিশ্ববাজারে সোনার দাম প্রতি ট্রয় আউন্সে ৪,০০০ ডলারের ঐতিহাসিক মাইলফলক অতিক্রম করেছে, যা মূল্যবান ধাতুর শক্তিশালী উত্থানের ধারাবাহিকতা নির্দেশ করে। এই অভূতপূর্ব মূল্যবৃদ্ধি মূলত একাধিক গভীর কারণের সম্মিলিত ফল, যার মধ্যে রয়েছে ক্রমবর্ধমান ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনা এবং সর্বব্যাপী অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা, যা বিনিয়োগকারীদের নিরাপদ আশ্রয়ের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। বুধবার স্পট গোল্ডের দাম ১.৩ শতাংশ বেড়ে আউন্সপ্রতি ৪,০৩৪.৭৩ ডলারে পৌঁছেছিল।
এই ঊর্ধ্বগতির প্রধান চালিকাশক্তিগুলির মধ্যে অন্যতম হলো প্রচলিত আর্থিক বাজারের প্রতি আস্থাহীনতা, যা মার্কিন সরকারের অচলাবস্থা এবং অন্যান্য রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে আরও প্রকট হয়েছে। বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য বিরোধ এবং মুদ্রাস্ফীতির আশঙ্কা বিনিয়োগকারীদের তাদের সম্পদ সুরক্ষিত রাখতে সোনার দিকে ঝুঁকতে বাধ্য করেছে। বিশ্লেষকরা লক্ষ্য করেছেন যে এই অস্থিরতার সময়ে, যেখানে প্রচলিত সম্পদগুলি অনিশ্চিত, সেখানে সোনা একটি স্থিতিশীলতার প্রতীক হিসেবে কাজ করছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলির ব্যাপক স্বর্ণ ক্রয় এই চাহিদাকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে। চীন এবং পোল্যান্ডের মতো দেশগুলি তাদের স্বর্ণের রিজার্ভ উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি করেছে, যা একটি কাঠামোগত পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেয়। আইএমএফের তথ্যের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে, বিশ্লেষকরা উল্লেখ করেছেন যে কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো তাদের রিজার্ভে বৈচিত্র্য আনছে, বিশেষত রাশিয়ার সম্পদ জব্দ হওয়ার পর থেকে। যদিও ইনপুট আর্টিকেলে আইএমএফের তথ্য অনুযায়ী ২০২৪ সালে সোনার অংশ ১৮%-এ পৌঁছানোর কথা বলা হয়েছে, তবে সাম্প্রতিক তথ্য অনুযায়ী, চীন টানা ১৭তম মাসে তাদের সোনার মজুদ বৃদ্ধি করেছে এবং পোল্যান্ডও উল্লেখযোগ্য পরিমাণে স্বর্ণ কিনেছে।
এই কৌশলগত পদক্ষেপটি কেবল ডলার-ভিত্তিক সম্পদের উপর নির্ভরতা কমানোর ইঙ্গিত দেয় না, বরং বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক ধাক্কাগুলির বিরুদ্ধে একটি প্রতিরক্ষা কৌশলও বটে। বাজারের উপর এর প্রভাব সুস্পষ্ট: বিনিয়োগকারীরা অন্যান্য সম্পদ শ্রেণীর তুলনায় সোনাকে অগ্রাধিকার দিচ্ছেন, যার ফলে স্বর্ণ-সমর্থিত ইটিএফগুলিতেও চাহিদা বেড়েছে। এই পরিস্থিতিতে, মার্কিন ডলারের দুর্বলতা বিশেষভাবে লক্ষণীয়, কারণ বিনিয়োগকারীরা মুদ্রা ওঠানামার প্রতি কম সংবেদনশীল বিকল্প খুঁজছেন।
গোল্ডম্যান শ্যাকসের মতো প্রতিষ্ঠানগুলি এই কাঠামোগত কারণগুলির ভিত্তিতে ডিসেম্বরের মধ্যে সোনার দাম প্রায় ৪,৯০০ ডলার পর্যন্ত পৌঁছানোর পূর্বাভাস দিয়েছে, যদিও পূর্বে তাদের পূর্বাভাস ছিল কম। এই দ্রুত মূল্যবৃদ্ধি অন্যান্য আর্থিক বাজারেও অস্থিরতা সৃষ্টি করতে পারে, কারণ বিনিয়োগকারীরা তাদের পোর্টফোলিও পুনরায় ভারসাম্যপূর্ণ করছেন। এই উত্থানের গতি বিশেষভাবে লক্ষণীয়; যেখানে সোনা ২০২০ সালে ২,০০০ ডলার অতিক্রম করেছিল, সেখানে ২০২৩ সালের মার্চে তা ৩,০০০ ডলারে পৌঁছায় এবং মাত্র সাত মাসের মধ্যে, অর্থাৎ প্রায় ২০০ দিনের ব্যবধানে, তা ৪,০০০ ডলারে পৌঁছেছে।
ইউবিএস গ্লোবাল ওয়েলথ ম্যানেজমেন্টের বিশ্লেষক জিওভান্নি স্টাউনোভো উল্লেখ করেছেন যে ২০২২ সালে সোনার এই র্যালি শুরু হয়েছিল, যার একটি 'ট্রিগার পয়েন্ট' ছিল ইউক্রেন যুদ্ধের শুরুতে রাশিয়ার প্রায় ৩০০ বিলিয়ন ডলার বিদেশী সম্পদ জব্দ করা। যদি ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনা অব্যাহত থাকে এবং অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা বিরাজ করে, তবে বিশ্লেষকরা আগামী মাসগুলিতেও সোনার দামের ঊর্ধ্বমুখী গতি বজায় থাকার পূর্বাভাস দিচ্ছেন। বিনিয়োগকারীদের এই পরিস্থিতি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করে তাদের কৌশল নির্ধারণে বিচক্ষণতার পরিচয় দিতে হবে।
উৎসসমূহ
FinanzNachrichten.de
Handelszeitung
LGT
upday News
FAZ
Edelmetall-Experte
এই বিষয়ে আরও খবর পড়ুন:
আপনি কি কোনো ত্রুটি বা অসঠিকতা খুঁজে পেয়েছেন?
আমরা আপনার মন্তব্য যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিবেচনা করব।
